চীনা অর্থনীতির ‘বলিষ্ঠ শক্তি’র পর্যালোচনা
2022-02-07 16:20:19

বর্তমানে মহামারীর উঠা-নামা, সরবরাহ চেইনে বাধা, মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ ডেকে আনছে। কিন্তু চীনের অর্থনীতি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রায় সকল সূচকই শক্তিশালী ও বলিষ্ঠভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।

 

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২১ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১ শতাংশ। যা বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান রেখেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তার মানে চীনের অর্থনীতি ২০২০ সালে সর্বাগ্রে পুনরুদ্ধার হয়ে সাফল্যের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি লাভের পর সারা বিশ্বে ইতিবাচক অবদান রাখছে।

 

শত বছরের অদৃশ্য ও গভীর পরিবর্তন এবং মহামারী বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের অর্থনীতির ‘বলিষ্ঠ শক্তি’র প্রধান উত্স হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সুবিধা। এটি বাস্তব অবস্থা থেকে বহুমুখী নিয়ন্ত্রণ সুবিধা আয়ত্ত করে, সম্পূর্ণ শিল্প চেইন, লক্ষ লক্ষ বাজারের সত্তা এবং অতিরিক্তি মাত্রায় গঠিত বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সুবিধা, ‘দ্বৈত প্রচলন’ নতুন উন্নয়ন কাঠামো প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিকভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ উদ্দীপ্ত করা উন্নয়ন নতুন প্রাণশক্তি এবং তৈরি করা নতুন সুবিধা ত্বরান্বিত করছে।

 

চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির ‘কার্যকর বাজার’ এবং ‘কার্যকর সরকার’ রয়েছে। সম্পদ বন্টনে বাজারের নির্ণায়ক ভূমিকা এবং আরো ভালোভাবে সরকারের ভূমিকা পালন করার পক্ষপাতী। যাতে সরকার ও বাজার পরিকল্পনা করে—এই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য চীনা পরিকল্পনা প্রদান করা যায়।

 

বিদ্যুতের অভাব মোকাবিলা উদাহরণ হিসেবে চীন সরকার এক দিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ফিড-ইন ট্যারিফ বাজার সংস্কার ব্যবস্থা করেছে, অন্য দিকে ব্যবস্থা নিয়ে কার্যকরভাবে কয়লার দাম কমিয়ে জনগণের দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদা নিশ্চিত করেছে। যাতে কার্যকরভাবে কিছু পশ্চিমা দেশের জ্বালানি দামের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং বাসিন্দাদের জন্য উচ্চ বিদ্যুতের বিল পরিস্থিতি এড়ানো গেছে।

 

আত্মবিপ্লব ত্বরান্বিতকরণ ছাড়া চীন সরকার বহুমুখী নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য জোরদার করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রশাসন সুবিধা চীনের অর্থনীতির ‘বলিষ্ঠ শক্তি’র গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তির উত্সে পরিণত করেছে।

 

কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর বিশ্বের অর্থনীতি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুতর মন্দায় পড়ে। প্রধান উন্নত অর্থনৈতিক গোষ্ঠী অতি শিথিল মুদ্রানীতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার উদ্দীপ্ত করে, ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। কোন কোন দেশে মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা কয়েক দশকে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।

 

তুলনামূলকভাবে চীন নিজের বাস্তব অবস্থা থেকে স্বাভাবিক মুদ্রানীতি কার্যকর করায় অবিচল থাকে, সামগ্রিকভাবে আমানত রিজার্ভ অনুপাত হ্রাস, পুনঃঅর্থায়ন এবং রিডিসকাউন্টসহ বিভিন্ন নীতি ব্যবহার করে, যুক্তিসঙ্গত ও যথেষ্ঠ তারল্য বজায় রাখে। ক্রস চক্র সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ায় চীন স্বল্প-মেয়াদী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং মধ্যবর্তী ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন চাহিদা সংযুক্ত করে, সামষ্টিক নীতির ধারাবাহিকতা, স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি পণ্য সামগ্রী সরবরাহ সামগ্রিক স্থিতিশীল ছিল, সিপিআই উষ্ণভাবে বেড়ে ছিল।

 

সবেমাত্র শেষ হওয়া নববর্ষের ছুটিতে ফুচিয়ান প্রদেশের চীনামাটি রপ্তানিকারক—শুন মেই গ্রুপের পণ্যদ্রব্য বিদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার জেং পেংফেই বলেন, চলতি বছর অর্ডারের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে, প্রায় ৩০ শতাংশ।

 

শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের চীনের মালামাল বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি পরিমাণ প্রথমবারের মতো ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ছাড়িয়ে ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। সারা বিশ্বে চিপ ও কন্টেইনারের অভাবের প্রেক্ষাপটে চীন শিল্প চেইনের সুবিধা দিয়ে দ্রুত বাজারের পরিবর্তন করে। ২০২১ সালে চীনের অখণ্ড বিদ্যুত্চক্রের উত্পাদন পরিমাণ ২০২০ সালের একই সময়ের চেয়ে ৩৩.৩ শতাংশ বেড়েছে। ধাতু কন্টেইনার উত্পাদন পরিমাণ ১১০.৬ শতাংশ বেড়েছে এবং নতুন শক্তি অটোমোবাইলের উত্পাদন পরিমাণের বৃদ্ধির হার ছিল ১৪৫.৬ শতাংশ।

 

চায়না অ্যাসোসিয়েশন অব পলিসি সায়েন্সের (সিএপিএস) অর্থনৈতিক নীতি কমিটির উপ-পরিচালক স্যুই হোংছাই বলেন, বিশ্ব সরবরাহ চেইন সংকট সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি সৃষ্টি করে। প্রচূর বৈদেশিক বাণিজ্যিক অর্ডার চীনে এসেছে। কারণ চীনের সরবরাহ চেইন সম্পূর্ণ, আনুষঙ্গিক দক্ষতা শক্তিশালী এবং গ্রহণ করার ক্ষমতা বেশি।

 

‘বলিষ্ঠ শক্তি’ তৈরি করতে বড় স্কেলের অভ্যন্তরীণ বাজার বড় অবদান রাখছে। ২০২১ সালে চীনের ভোগ্যপণ্যের মোট খুচরা বিক্রয় পরিমাণ ৪৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে ফাইনাল খরচ ব্যয়ের অবদান হার ছিল ৬৫.৪ শতাংশ। একই সময় বৈদেশিক বিনিয়োগের মাত্রা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। 

 

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ফলাফলের প্রধান কারণ হলো চীন উচ্চমানের উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ প্রচলন প্রধান হিসেবে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দ্বৈত প্রচলন একে অপরকে ত্বরান্বিত করার নতুন উন্নয়ন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে অবিচল থাকে এবং বিশ্বের সঙ্গে নিজের উন্নয়ন স্বার্থ ভাগাভাগি করে।

 

মহামারীর শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গণ-স্বাস্থ্য, জ্বালানি সরবরাহ এবং ভোক্তা মূল্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের লক্ষ্য অভিন্ন। কোন কোন মার্কিন রাজনীতিবিদ বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ উত্সাহিত করেন, কিন্তু চীন দৃঢ়তার সাথে অর্থনীতির বিশ্বায়ন ত্বরান্বিত করে, মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে সত্যিকারের বহুপক্ষবাদ রক্ষা করছে।

 

ইতিহাসের সঠিক পথ, মানবজাতির অগ্রগতি হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য চীনের বাছাই।   

 

গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে সিপিটিপিপি, ও ডিইপিএ-তে যোগদানের আবেদন থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে আরসিইপি কার্যকর হওয়া পর্যন্ত চীন বেশ কিছু বাস্তব কার্যক্রমের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রাতিষ্ঠানিক উন্মুক্ততার সুবিধা প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করেছে।

 

ভবিষ্যত বিশ্লেষণ করতে, উচ্চমানের উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অন্বেষণ করতে চীন বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য ধারাবাহিক শক্তিশালী উন্নয়ন চালিকাশক্তি সরবরাহ করতে থাকবে।

 

(প্রেমা/এনাম)