সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছাসভায় প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণ প্রসঙ্গে
2022-01-31 17:18:49

জানুয়ারি ৩১: চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছাসভায় ভাষণ দিয়েছেন দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। গতকাল (রোববার) সকালে বেইজিংয়ের গণমহাভবনে ‘বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছাসভা, ২০২২’ অনুষ্ঠিত হয়। সিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে গোটা চীনের বিভিন্ন জাতির জনগণ, হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের বাসিন্দা, ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের বাসিন্দা, তাইওয়ানের বাসিন্দা এবং বিদেশে প্রবাসী চীনাদের বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বিগত এক শ বছরে পার্টি ও জনগণের অর্জিত সকল সাফল্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের সুফল।

সকাল ১০টার দিকে, আনন্দময় সঙ্গীতের তালে তালে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও দেশের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ হলে প্রবেশ করেন। এসময় প্রেসিডেন্ট সি সকলের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ বিনিময় করেন। উপস্থিত দর্শকরা উষ্ণ করতালিতে ফেটে পড়েন।

সভায় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, “চান্দ্রপঞ্জিকার ব্যাঘ্রবর্ষের বসন্ত উত্সব ঘনিয়ে আসছে। আমরা পুরানো বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এখানে জড়ো হতে পেরে খুব আনন্দিত। প্রথমে, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে, আমি সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই! আমি আপনাদেরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই! দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জনগণকে, হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে, ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের বাসিন্দাদেকে, তাইওয়ানের স্বদেশীদেরকে এবং বিদেশে অবস্থানরত চীনাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা! আমি আপনাদের সবাইকে চীনা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই!”

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তার ভাষণে বলেন, চান্দ্রপঞ্জিকার বিদায়ী ষাঁড়বর্ষটি আমাদের জন্য ইতিহাস সংকলন এবং অতীত পর্যালোচনা করার একটি বছর ছিল। সেইসাথে এটি ছিল ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং ভবিষ্যতের মুখোমুখি হওয়ার একটি বছর। এই সম্পর্কে তিনি বলেন, “গোটা দল এবং দেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা বলদর্পী ষাঁড়ের মতোই সামনে এগিয়ে গেছে। চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের জন্য তারা কঠোর পরিশ্রম চালিয়েছে এবং পার্টির চেতনা প্রচার করেছে। আমরা সিপিসি’র শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছি। সিপিসি’র ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তিনটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সময়মতো দারিদ্র্যবিমোচন যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি এবং সময়মতো মধ্যম মানের স্বচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। প্রথম শতবর্ষের লক্ষ্য আমরা বাস্তবায়ন করেছি এবং সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গড়ার নতুন যাত্রায় সামিল হয়েছি। চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের প্রক্রিয়ায় একটি ঐতিহাসিক পর্ব রচিত হয়েছে।”

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, গেল বছর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চীন ছিল বিশ্বে শীর্ষ স্থানে। উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নের পথেও চীন অনেকদূর এগিয়েছে। দেশের কৌশলগত বৈজ্ঞানিক শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পথে নতুন অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। জনগণের জীবিকা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠাকাজ অব্যাহতভাবে এগিয়ে গেছে। দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং সশস্ত্রবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। হংকং বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেয়েছে; সেখানে ঐক্যের বাণী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বড় রাষ্ট্রের কূটনীতিও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গেল বছর ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুভ সূচনা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, বিগত এক শ বছরে চীনা জনগণ ও ইতিহাসের সামনে সাফল্যের প্রমাণ দিয়েছে সিপিসি। এখন দলটি দেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর জনগণকে একত্রিত করে দ্বিতীয় শতবর্ষের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছে। এই সম্পর্কে তিনি আরও বলেন,

“পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ হলো মানুষের সুখের জন্য সংগ্রাম করা। আমাদের হৃদয়ে মানুষ, আমাদের হাতে সত্যের পতাকা, আমাদের সামনে সঠিক পথ; আমরা আত্মবিশ্বাস এবং শক্তিতে পরিপূর্ণ। পরিস্থিতির যত পরিবর্তনই ঘটুক না কেন, যত কঠিন চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে পার্টির চেতনাকে ধারণ করে।... শান্তির এ সময়ে, ঘনিষ্ঠ ঐক্য বজায় রেখে ও কঠোর পরিশ্রম করে চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের মহান স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, গেল বছরের শেষার্ধে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বিগত পাঁচ বছরের কাজের সংক্ষিপ্তসার করেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নীলনকশা এঁকেছে। আমাদের উচিত স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় থাকা,  দেশের নিরাপত্তা ও জনগণের সুখী জীবন সুনিশ্চিত করা, এবং দূর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক  পরিবেশে সিপিসি’র ২০তম জাতীয় কংগ্রেস আয়োজন করতে সম্ভাব্য সবকিছু করা। (ওয়াং হাইমান/আলিম/স্বর্ণা)