রোববারের আলাপন-‘সান সি’
2022-01-30 06:36:36


আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি এনাম এবং আকাশ।


আকাশ: হ্যাপি চাইনিজ নিউ ইয়ার। 

এনাম: হ্যাপি চাইনিজ নিউ ইয়ার।

আকাশ: বন্ধুরা, আগামীকাল হচ্ছে চীনের ‘সান সি অর্থাত্ চীনের চন্দ্র পঞ্জিকা অনুসারে চীনা নববর্ষের আগের দিন। এ দিন চীনারা যত দূরেই থাকুক না কেন, সবাই জন্মস্থানে পরিবারের কাছে ফিরে যান। 

এনাম: ভাই, চীনারা ‘সান সি’তে কি কি করেন, ভাই?

আকাশ: আচ্ছা। বন্ধুরা, আমি তাহলে আমার আগের বসন্ত উত্সবের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করি, তাহলে ‘সান সি’সহ আপনারা বুঝতে পারবেন চীনারা কীভাবে বসন্ত উত্সব কাটায়, কেমন? 

বন্ধুরা, আমি প্রথম কয়েক বছর চীন আন্তর্জাতিক বেতারে কাজ করার সময় বসন্ত উত্সবের মধ্যে অফিস করেছি, মানে জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারিনি। তারপর এক বছর বসন্ত উত্সবের সময় ছুটি পাই। আসলে ভাই, বসন্ত উত্সবের সময় ট্রেন বা বিমানের টিকিট কেনা অনেক অনেক কঠিন। ভাই, ঈদের সময় বাংলাদেশের অবস্থাও একই রকম, তাইনা?

এনাম:...

আকাশ: এজন্য অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন সকালে টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার পরও আমার জন্মস্থান হান তানে ফিরে যাওয়ার টিকিট পাইনি। তখন ট্রেনের টিকিট কেনার কোনো মোবাইল অ্যাপ ছিল না। এজন্য ট্রেন স্টেশন বা টিকিট কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কিনতে হতো। 

এনাম: তারপর কি হলো ভাই?

আকাশ: আমি আশা ছেড়ে দেইনি। অনেক চেষ্টার পর ‘সান সি’ অর্থাত্ বসন্ত উত্সবের আগের দিন বিকেলে হান তানে ফিরে যাওয়ার একটি টিকিট পাই। কিন্তু কোনো সিট নেই। আসলে তখন সিট কোনো ব্যাপার ছিল না, টিকিট পাওয়াটাই বড় ব্যাপার। টিকিট পাওয়ার পর, আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাই। কারণ সবাই ‘সান সি’র আগে বাসায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য ‘সান সি’র দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় টিকিট তুলনামূলকভাবে একটু সহজে কিনতে পারা যায়।

এনাম: ভাই আপনি তখন কয়টার সময় হান তানে পৌঁছালেন?

আকাশ: বেইজিং থেকে হান তানের দূরত্ব ৪৪০ কিলোমিটার। দ্রুতগতির ট্রেনে বেইজিং থেকে হান তানে প্রায় দুঘন্টায় পৌঁছানো যায়। যাই হোক, আমি প্রায় পাঁচটার সময় দাদার বাড়ি পৌঁছাই। তার পর, প্রথমে আমি এবং আমার বাবা একসাথে দাদির স্মরণে একটা অনুষ্ঠান করি। এরপর আমরা বাসায় ফিরে যাই। বিকালে সবাই চিয়াও জি বা ডাম্পলিং তৈরি করা সম্পন্ন করেছেন। এনাম ভাই, আপনি আমাদের ভাইবোনদেরকে চিয়াও জি সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন?

এনাম:

আকাশ: বন্ধুরা, চীনে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, বসন্ত উত্সবের সান সি, চু ই, ফো উ, মানে চীনের চান্দ্র নববর্ষের আগের দিন, প্রথম দিন এবং পঞ্চম দিন সবাই চিয়াও জি তৈরি করে খান। এ বিশেষ সময়ে সবাই যত দূরেই থাকুক না কেন, জন্মস্থানে ফিরে যান এবং একসাথে চিয়াও জি তৈরি করেন। এনাম ভাই , বাংলাদেশে ঈদের সময় চীনের চিয়াও জি’র মতো একরকম বিশেষ কোনো খাবার আছে?

এনাম:... 

এনাম: ভাই, আমার একটি প্রশ্ন আছে, চীনারা বসন্ত উত্সব ছাড়া অন্যসময়ে কি চিয়াও জি খান? 

আকাশ: হ্যাঁ। অবশ্যই। ইচ্ছা মতো খেয়ে থাকেন। যেমন: আমার বাবা চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করেন। এজন্য মা প্রায় প্রতি সপ্তাহে চিয়াও জি তৈরি করেন। এজন্য ছোটবেলায় চিয়াও জি খেতে আমার অনেক বিরক্ত লাগতো।

এনাম: কারণ তখন অনেক খেয়েছেন, হাহা।


আকাশ: জ্বি। কিন্তু, জন্মস্থান থেকে বেইজিংয়ে আসার পর, বিশেষ করে চীন থেকে বাংলাদেশের উত্তরায় থাকার সময়, আমি আমার বাবার মতো চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করতাম। আসলে চিয়াও জি আমার কাছে শুধু একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটা মানে বাড়ি, পরিবারের সম্মিলন। 

এনাম: ভাই, তাহলে আন্টি সব চিয়াও জি তৈরি করার পর সিদ্ধ করেন, তাইনা? 

আকাশ: জ্বি। তবে সান সি’র সন্ধ্যায় চিয়াও জি সিদ্ধ করার আগে, চীনে একটি রীতি আছে, পরিবারের বড় ছেলে আতশবাজি ফোটাবেন। আতশবাজি ফোটানোর সাথে সাথে চিয়াও জি সিদ্ধ করা শুরু হবে। 

এনাম: তার মানে, আতশবাজি না ফোটালে চিয়াও জি সিদ্ধ করা হবেনা,তাইনা ভাই?

আকাশ: হ্যাঁ। আপনি ঠিকই বলেছেন।  আমি তখন অনেক দিন জন্মস্থানে অর্থাত দাদার বাড়িতে বসন্ত উত্সব কাটাই নি। এ জন্য মন অনেক উদ্দীপিত। চিয়াও জি সিদ্ধ করার পর দাদা, বাবা, মা এবং আমি টেবিলে গোল হয়ে বসে খেতে শুরু করি। তখন ওই মুহূর্তে আমার চোখে পানি চলে আসে। আমার পরিবার যেন আমার চোখের পানি না দেখতে পারে সেজন্য আমি আমার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেই।

 ভাই, ওই মুহূর্তটি আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। ভাই, ঈদে আপনার বাড়ি ফিরে যাওয়ার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন?

এনাম:....

এনাম: ভাই, সান সি’র সন্ধ্যায় চিয়াও জি খাওয়ার পর আপনারা কী কী করেন?

আকাশ: তখন আমরা চিয়াও জি খাওয়ার পর, দাদার সাথে একসাথে সিসিটিভির বসন্ত উত্সবের ‘ইভিনিং গালা’দেখি। তারপর দাদা ঘুমানোর পর, আমি মা বাবার সাথে নিজের বাসায় ফিরে গিয়ে অব্যাহতভাবে বসন্ত উত্সবের ‘ইভিনিং গালা’দেখতে থাকি। 

এনাম: তারপর কী করেন?

আকাশ: রাত ১২টার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। অর্থাত্ আমরা ইভিনিং গালা দেখতে দেখতে নতুন বছরের শুরুর জন্য অপেক্ষা করি। তারপর নতুন বছর শুরু হবার ঠিক ওই মুহূর্তটিতে সবাই বাইরে গিয়ে আতশবাজি ফোটাই। তখন সারা শহর  আতশবাজির শব্দে ভরে ওঠে।