গাধায় চড়ে সিনচিয়াং থেকে বেইজিং- ৩৮০০ মিটার পথ যাওয়া যায়?
2022-01-28 19:40:43

৩৮০০ কিলোমিটার হল চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলয়ের ইয়ু থিয়ান জেলা থেকে বেইজিংয়ের দূরত্ব। গাড়িতে গেলে প্রায় ৫০ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে, জেলার কুরবান তুলুম নামে এক চাচা গাধায় চড়ে বেইজিংয়ে যাওয়ার চিন্তা করেন।

তিনি অবশেষে কি সত্যিই বেইজিংয়ে পৌঁছাতে পেরেছিলেন?

 

১৮৮৩ সালে কুরবান একটি দরিদ্র গ্রামীণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তাঁর আত্মীয়রা জমিদারের নির্যাতনে মারা যায়। কুরবান বাধ্য হয়ে জমিদারের গোলামি করতেন। দিনের বেলায় তিনি মরুভূমিতে ছাগল চড়াতেন, রাতে তিনি গোশালায় ঘুমাতেন।

চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির সীমান্ত গবেষক লি শেং বলেন, ১৯ শতাব্দীর শেষে এবং ২০ শতাব্দীর শুরুতে, সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির জনগণ জমিদার ও ধর্মীয় শক্তিসহ বিভিন্ন শক্তির নির্যাতনে কষ্টকর জীবনযাপন করত। ১৯৪৯ সালে ৬৬ বছর বয়সী কুরবান গণ-মুক্তিফৌজের সহায়তায় ক্ষুধা ও নির্যাতনের জীবন থেকে মুক্তি পান। তখন তাঁর সম্পদ বলতে ছিল পুরানো কম্বল এবং একটি পুরানো তামার কেটলি।

খানকজি মেমেতিমিন ইয়ু থিয়ান জেলার কুরবান তুলুম স্মৃতি যাদুঘরের কর্মী। তিনি বলেন, নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর কুরবান বাড়িঘর পেয়েছেন এবং এক হেক্টর জমি পেয়েছেন। জীবনে প্রথমবারের মতো নিজের জমি পেয়ে তিনি খুব খুশি।

কুরবানের মতে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কল্যাণে তিনি নিজের জমি ও খাদ্য উত্পাদন করতে পেরেছেন। তিনি সবসময় স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে নিজের কষ্টকর জীবনের কথা বলতেন। যাতে সবাই নিজের সুন্দর জীবনের গুরুত্ব বুঝতে পারে।

 

১৯৫৫ সালের শরত্কালে সিনচিয়াংয়ে খুব ভালো ফলন হয়। ৭০ বছর বয়সী কুরবান উত্সবের সুন্দর পোশাক পরে ৫০ কেজি নানরুটি এবং নিজের চাষ করা ফল নিয়ে গাধায় করে বেইজিংয়ের পথে রওনা হন। স্থানীয় লোকজন বলেন, বেইজিং এখান থেকে অনেক দূর, গাধায় যাওয়া যায় না। তাই তিনি সড়কপথে গাড়িতে যান। তবে, ড্রাইভাররাও তাকে এত দূর না যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

 

ইয়ু থিয়ান সিপিসি ইতিহাস কার্যালয়ের কর্মী উ সিন লান বলেন, ১৯৫৭ সালে ইয়ু থিয়ান জেলা কর্তৃক কুরবানের দেশপ্রেমের অনুভূতি এবং বেইজিংয়ে যাওয়ার ইচ্ছা উর্ধ্বতন পর্যায়ে অবহিত করেন। দ্বিতীয় বছরের জুন মাসে কুরবান অবশেষে বেইজিংয়ে তখনকার চীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং-এর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এই খবর ইয়ু থিয়ানে পৌঁছালে সবাই খুব উত্সাহিত হয়।

 

এখন ইয়ু থিয়ান জেলায় আকাশ-পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। কুরবানের নাতি রুকয়াম মেতসেদি বলেন, জেলার বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। প্রত্যেক পরিবারের নিজের গাড়ি আছে, শিশুরা বিনা-খরচে স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে। সবাই প্রতি বছর বিনা খরচে স্বাস্থ্যসেবা পায়। তাই তিনি ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে একটি চিঠি লিখে এই সুন্দর পরিবর্তনের কথা জানান।

 

পরের মাসে প্রেসিডেন্ট সি তাঁর জবাবি চিঠিতে বলেন, সিনচিয়াং ভালো জায়গা, বিভিন্ন জাতি একই পরিবারের সদস্য। কুরবান হলেন- সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির জনগণের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি, ছোটবেলায় তিনি কুরবানের দেশপ্রেমের গল্প শুনেছিলেন।

২০১৭ সালে চীনের দুই অধিবেশনে কুরবানের বংশধর তাদের পরিবারের নতুন ছবি অন্যের সাহায্যে প্রেসিডেন্ট সি’র হাতে পৌঁছে দেন।

 

বর্তমানে সিনচিয়াংয়ের ১৬.৬ লাখ বর্গকিলোমিটারেও বড় ভূমিতে বিভিন্ন জাতির জনগণ সুষমভাবে সহাবস্থান করেন, চীনা জাতির জাতীয় ঐক্য বাস্তবায়ন করেছেন।

প্রেসিডেন্ট সি’র একবার বলেছিলেন, নিজের চোখ লালনের মতো জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে হবে, ডালিমের বীজের মতো পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে থাকতে হবে।