গেল কয়ক বছরের বিশ্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রবাহ দেখে বোঝা যায়, চীন থেকে অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সহ্য করা অনেক দেশের পক্ষেই অসম্ভব। বৃটিশ লোরেসা কনসাল্টিংয়ের অংশীদার নিকোলাস স্পিরো এ কথা বলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২১ চীনের অর্থনৈতিক উপাত্ত ও ধারাবাহিক দ্বিপক্ষীয় আর্থ-বাণিজ্যিক ফলাফল তাঁর এ মন্তব্যকে সঠিক বলে প্রমাণ করেছে।
২০২১ সালে চীনের পণ্যের রপ্তানি ও আমদানির মোট পরিমাণ ছিল ৩৯.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, তা নতুন এক রেকর্ড। ২০২১ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগের ব্যবহার ছিল ১.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, তা প্রথম বারের মতো ১ ট্রিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। বিদেশে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ ছিল ৯৩৬.৬৯ বিলিয়ন ইউয়ান, তা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ২.২ শতাংশ বেশি।
গত বছর চীন আনুষ্ঠানিকভাবে সিপিটিপিপি ও ডিইপিএতে যোগদানের আবেদন করেছে। পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আপগ্রেড করে, এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আপগ্রেড নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
২০২১ সালে চীনের বাণিজ্যের ফলাফল প্রমাণ করে, চীন সবসময় উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি পালন করে এবং বিশ্বের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ দিন দিন ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। পাশ্চাত্যের রাজনীতিবিদদের যারা ‘চীন থেকে অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা’র কথা বলেন, তাদের এ ফলাফলের সামনে লজ্জিত বোধ করা উচিত্।
বিশ্বের জন্য চীন প্রয়োজন। একদিকে বিশ্ব কারখানা হিসেবে চীনের আছে শক্তিশালি উত্পাদন দক্ষতা এবং বিশ্ব সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীল শক্তি চীন। ব্লুমবার্গে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক দেশ হিসেবে মহামারি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে চীন তার কারাখানাসমূহের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে, তা বিশ্ব শিল্প চেইনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন মার্কিন রাজনীতিবিদ চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক যোগাযোগ বিছিন্ন করতে চান, তবে চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসন প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২১ সালে চীন-মার্কিন বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৫৫.৬৫ বিলিয়ন ডলার, তা ২০২০ সালের তুলনায় ২৮.৭ শতাংশ বেশি। বিশ্বের দুটো বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে বাণিজ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পর নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে ‘চীন থেকে অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা’কে অনেকে কেবল আজগুবি গল্প হিসেবেই বিবেচনা করছে।
অন্যদিকে, স্থিতিশীলতা ও পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করে চীনা বাজার বিশ্ব কোম্পানিগুলোকে বিশাল বিনিয়োগের সুযোগ এনে দিয়েছে। গেল দুবছরে অনেক বহুজাতিক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ‘চীন’ শব্দটা বার বার উঠে এসেছে। তার পরেও চীনের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে চীনে মার্কিন কোম্পানির বিনিয়োগ কমেনি।
শাংহাই আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭০ শতাংশ উত্তরদাতারা মনে করেন, আগামি ৩-৫ বছরে চীনা বাজারের কর্মক্ষমতা বিশ্বের গড় মান ছাড়িয়ে যাবে। ৬০ শতাংশ কোম্পানি বলছে, ২০২১ সালে চীনে তারা বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্য বাজারের তুলনায় চীনা বাজারের সম্ভাবনা বেশি। মার্কিন ব্যাংকের গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অনুপাত দিন দিন বাড়ছে। এস আর পি ৫০০ সূচক কোম্পানির জন্য চীনের অর্থনীতি বৃদ্ধির প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে সবার আগে মহামারি নিয়ন্ত্র এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন করেছে এবং বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে চীন। ২০২১ সালে চীনের জিডিপি ছিল ১১৪.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, তা ২০২০ সালের তুলনায় ৮.১ শতাংশ বেশি। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবদান ২৫ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়। বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার চীনের উপর নির্ভর করছে।
পাশাপাশি, চীনের জন্য বিশ্বও প্রয়োজন। গেল কয়েক দশকে চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন বিশ্বের সঙ্গে মিশ্রণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হয়েছে এবং চীনাদের জন্য সুন্দর জীবন বয়ে এনেছে। যে কারণে বহুপক্ষবাদ ও বিশ্বায়নে অবিচল রয়েছে চীন। (শিশির/এনাম/রুবি)