চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি, বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আরসিইপি অর্থাত্ আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি চীনের ছয়টি বিভাগ একসাথে প্রকাশ করেছে আরসিইপির উচ্চ মানের বস্তবায়ন নির্দেশাবলী। আরসিইপি চালু হবার এক মাসে চীনের রপ্তনিকারক কোম্পানিগুলো মোট ২৫ হাজারটি উত্পাদন উত্সের প্রশংসাপত্র এবং উত্সের ঘোষণার আবেদন করেছে, এসবের পণ্যের মোট মূল্য ৯২৫ কোটি ইউয়ান। পণ্যের অধিকাংশ হল বেস ধাতু, রাসায়নিক, রাইস ওয়াইন এবং পাদুকা।
আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক চুক্তি (আরসিইপি) বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্য চুক্তি এবং সার্বিক, আধুনিক, উচ্চ মান ও পারস্পরিক কল্যাণের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। এই চুক্তি কার্যকরের পর প্রথম চালানের পণ্যগুলো শেনচেন হুয়াং কাং শুল্ক বিভাগের মাধ্যমে চীনে প্রবেশ করেছে। শেন চেন কাস্টমস শুল্ক বিভাগের উপ প্রধান চেং ইউন চিন বলেন,
আরসিইপির সদস্য দেশের কোনো কোম্পানি যদি কাচামাল দিয়ে পণ্য উত্পাদন করে, তাহলে অপর সদস্য দেশের মাধ্যমে পণ্যের রপ্তানিতে আরও সহজে শুল্ক সুবিধা উপভোগ করতে পারবে।
চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের শুল্ক বিভাগের উপপ্রধান ডি চিয়ে বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনের রপ্তানিকারক কোম্পানিসমূহ ৯২৫ কোটি ইউয়ান মূল্যের পণ্যের জন্য মোট ২৪ হাজার ৬৯৫টি উত্সের প্রশংসাপত্র এবং উত্সের ঘোষণার আবেদন করেছে। আরসিইপির আওতায় ২৬৭টি চালান পণ্যের মসৃণ কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স হয়েছে, তার মোট মূল্য ৪৬ কোটি ইউয়ান। তারা মূলত বেস ধাতু, রাসায়নিক এবং লুব্রিকেন্ট।
আরসিইপিতে বাজার উন্মুক্তকরণের প্রতিশ্রুতি ও নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ ছয়টি বিভাগ সম্প্রতি যৌথভাবে প্রকাশ করে আরসিইপির উচ্চ মানের বস্তবায়ন নির্দেশাবলী। নির্দেশাবলীতে ছয়টি বিষয় রয়েছে। তা হল: চুক্তির উন্মুক্তকরণ ও নিয়ম কাজে লাগানো, শিল্পের আপগ্রেড ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্ষমতা জোরদার করা, স্ট্যান্ডার্ড সহযোগিতা এবং রূপান্তর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, আর্থিক সমর্থন ও সমর্থন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা, স্থানীয় অবস্থার সাথে মানিয়ে নিয়ে নিয়ম কাজে লাগানো এবং সমর্থন সেবা অব্যাহতভাবে দেয়া। পাশাপাশি, এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রসারিত এবং আন্তর্জাতিক সমাজে চীনা কোম্পানির অংশগ্রহণ জোরদার করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান ইউয়ু বেন লিন বলেন, গবেষণার মাধ্যমে আমারা আবিষ্কার করি যে, আমাদের স্থানীয় সরকার ও কোম্পানিগুলো আরসিইপির উপর উচ্চ প্রত্যাশা রাখে এবং ইতিবাচকভাবে এতে অংশগ্রহণ করতে চায়। চুক্তি কার্যকর হবার পর কোম্পানিগুলো ইতিবাচকভাবে উত্সের অগ্রাধিকার সার্টিফিকেটের আবেদন করে এবং শুল্ক সুবিধা উপভোগ করে। পাশাপাশি, কোন কোন স্থানীয় সরকার ও কোম্পানি আমাদেরকে জানায়, আরসিইপি চুক্তির নিয়ে কাজ করতে কিছু বিভ্রান্তি এবং প্রশ্ন দেখা দিয়েছে; তাই তারা আশা করে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদেরকে নির্দেশনা দিতে পারবে।
ইউয়ু বেন লিন বলেন, আরসিইপি দেশ-বিদেশের ডবল লুপ সেতুর মতো দীর্ঘ মেয়াদী বাজারের সুযোগ সৃষ্টি করে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, কোম্পানিগুলো যত দ্রুত সম্ভব আরসিইপিতে নানা দেশের শুল্কের সুবিধার সঙ্গে পরিচিত হবে এবং গভীরভাবে আঞ্চলিক শিল্প চেইনের সরবরাহ চেইনে অংশগ্রহণ করবে। পাশাপাশি, পরিষেবা শিল্প ও বিনিয়োগ উন্মুক্তরণে সৃষ্ট সুযোগের উপর দৃষ্টি রাখবে। তিনি বলেন,
কোম্পানিগুলোর উচিত্ আরসিইপি সদস্য দেশের উন্মুক্তকরণের সুযোগ ধরে নিজেদের প্রাধান্য ও বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় করে নকশা, গবেষণা, তথ্য, লজিস্টিক, ই-বাণিজ্য ও ট্রেড ফাইন্যান্সসহ পরিবেষবা শিল্পের উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটি শিল্প ও উচ্চ পর্যায়ের পরিষেবা শিল্পের মিশ্রণ জোরদার করবে এবং মূল্য চেইনের অবস্থান উন্নত করবে। বিশেষ করে এই চুক্তি ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স সরবরাহ চেইন ব্যবস্থা, বিদেশে ভাণ্ডার নির্মাণসহ নানা শিল্পের মতো বাণিজ্যর নতুন শিল্পের উন্নয়নে সহায়ক হবে। কোম্পানিগুলোকে এ উন্নয়নের প্রবণতা কাজে লাগিয়ে আরও উন্নয়ন অর্জন করতে হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)