চীনের চন্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী,আজ দ্বাদশ মাসের চব্বিশতম দিন। আর এক সপ্তাহ পর শুরু হবে নতুন বছর। তখন সারা চীনে মহাসমারোহে পালিত হবে বসন্ত উত্সব।
সাধারণত আমরা চীনের চন্দ্র পঞ্জিকার দ্বাদশ মাসের ২৩তম দিনকে সিয়াও নিয়ান হিসেবে উদযাপন করি। সিয়াও নিয়ান মানে অগ্রিম বসন্ত উত্সব এবং এ দিন থেকে বসন্ত উত্সবের সব প্রস্তুতি শেষের দিকে চলে আসে। তার মানে গতকাল আমরা মাত্র সিয়াও নিয়ান উদযাপন করেছি। আসলে দক্ষিণ চীনে সবাই ২৩ নয়, ২৪তম দিনকে সিয়াও নিয়ান হিসেবে পালন করে। তাই চীনের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের আজ সিয়াও নিয়ান।
চীন বড় একটি দেশ। মোট ৯৬ লাখ কিলোমিটারের এ ভূমিতে বাস করে নানা জাতির মানুষ। বৃহত্তম জাতি হানদের বৃহত্তম উত্সব হল বসন্ত উত্সব, তবে আপনারা কি জানেন? উত্তর ও দক্ষিণ চীনে বসন্ত উত্সবের উদযাপনসহ নানা সংস্কৃতিতে রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য।
আজকের অনুষ্ঠানে আমরা উত্তর ও দক্ষিণ চীনের সংস্কৃতির পার্থক্য নিয়ে কিছু কথা বলব, কেমন?
চীনের ছিন লিং পাহাড় ও হুয়ে হ্য নদী দেশকে দক্ষিণ ও উত্তর দুটি ভাগে ভাগ করেছে। তবে, এ লাইন শুধু ভৌলিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক সীমানাও বটে। তার মানে ছিন লিং পাহাড় ও হুয়ে হ্য নদীর উত্তর ও দক্ষিণের মানুষদের সংস্কৃতি ভিন্ন।
শুরুতে আমরা ভাষার পার্থক্যের কথা বলব। আধুনিক চীনা ভাষায় রয়েছে সাতটি বড় ধরনের আঞ্চলিক উপভাষা। অবশ্যই সাতটি আঞ্চলিক উপভাষার অসংখ্য শাখা আছে। এ সাতটি আঞ্চলিক উপভাষা হল উত্তর ম্যান্ডারিন, উ, কান, খ্যচিয়া, সিয়াং, মিন ও ক্যান্টোনিজ।
এর মধ্যে উত্তর ম্যান্ডারিন ছাড়া বাকি ছয়টি দক্ষিণ চীনের আঞ্চলিক ভাষা। উত্তর চীনে যদিও বিভিন্ন প্রদেশের মানুষদের কথার টোন শুনতে একটু ভিন্ন মনে হয়, তবে সবাই পরস্পরের কথা বুঝতে পারে। ম্যান্ডারিনও উত্তরের আঞ্চলিক ভাষার ভিত্তিতে তৈরি। তাই উত্তর-পূর্ব, বেইজিং, থিয়ানচিন, হ্য নান, শাংন তুং, এবং লানচৌ-ইন ছুয়ানের ভাষা সারা চীনের মানুষ বুঝতে পারে। তবে দক্ষিণ চীনের একেক জায়গায় একেক ধরণের ভাষা প্রচলিত। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য চীনের কিছু প্রদেশের প্রত্যেক শহরের মানুষেরা ভিন্ন ভাষা বলে থাকেন। দক্ষিণ চীনের আঞ্চলিক ভাষা আরও জটিল ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং উত্তর চীনের মানুষেরা তা প্রায় বুঝতেই পারে না।
উত্তর চীনের একজন মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে গেলে স্থানীয় ভাষা বুঝতে পারেন না, তবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সাধারণত উত্তরের আঞ্চলিক ভাষা বুঝতে পারে। অবশ্যই এখন চীনে সবাই ম্যান্ডারিন বলে থাকেন। তাই যোগাযোগে কোন বাধা নেই।
মজার ব্যাপার হল, সিছুয়ান প্রদেশ যদিও দক্ষিণ চীনে অবস্থিত, তবে তাদের ভাষা উত্তরের ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তাই সিছুয়ানের ভাষা উত্তর চীনের মানুষেরা বুঝতে পারেন।
দক্ষিণ ও উত্তর চীনের খাদ্যাভ্যাসও ভিন্ন। দক্ষিণ চীনের মানুষেরা অনেক বেশি ভাত খায়, আর উত্তরের মানুষেরা ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার বেশি খায়। দক্ষিণ চীনে গরম এবং বৃষ্টি বেশি বলে সেখানে প্রচুর ধান চাষ হয়। উত্তর চীনে বৃষ্টি কম এবং আবহাওয়া তুলনামূলক ঠাণ্ডা, তাই সেখানে বেশি গম চাষ হয়। সবচেয়ে দক্ষিণের কয়েকটি প্রদেশের মানুষেরা ভাত ছাড়াও চাল দিয়ে তৈরি কেক, নুডলসও খায়।
তবে চীনের খাদ্য উত্পাদনের বৃহত্তম তিনটি প্রদেশ উত্তরে অবস্থিত। ধানের চাষের আয়তন গমের চেয়ে বেশি এবং উত্পাদনের পরিমাণও বেশি। মূলত উত্তর চীনের মানুষেরা লবনাক্ত খাবার বেশি খায় এবং দক্ষিণ চীনের মানুষেরা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খায়। অতীতে উত্তরে চিনির অভাব ছিল, তাই স্থানীয়দের লবনাক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। কুয়াং তুং, চেচিয়াং ও ইউননানসহ দক্ষিণের প্রদেশগুলোতে প্রচুর আখ চাষ হয়, তাই সহজে সেখানে চিনি পাওয়া যায়।
তবে মজার ব্যাপার হল জুং চি, এবং তুয়ান উ উত্সবের বৈশিষ্ট্যময় খাবার হিসেবে উত্তর চীনের মানুষেরা মিষ্টি জুং চি খায়, তবে দক্ষিণের মানুষেরা লবনাক্ত জুং চি খায়।
প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান কেমন লাগলো? উত্তর ও দক্ষিণ চীনের সংস্কৃতির পার্থক্য নিয়ে আপনারা কি জানেন? বা জানতে চান?
আগামি সপ্তাহের অনুষ্ঠানে উত্তর ও দক্ষিণ চীনের সাংস্কৃতিক পার্থক্য নিয়ে আমরা আরো আলোচনা করবো। সবাইকে আবারও জানাই বসন্ত উত্সবের অগ্রিম শুভেচ্ছা।
(শিশির/এনাম/রুবি)