তুমি হলে সবচেয়ে সুন্দর সেই ফুল
2022-01-22 19:10:12

গল্পটি শুরু হয় পাই নি গ্রামে। পাই নি গ্রাম গভীর পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। গ্রামের ৪৭২টি পরিবারে ২০৬৮জন কৃষক আছে। নিবন্ধিত দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৮৮৩জন। ২০১৭ সালে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৬৯১জন। তাদের মধ্যে অনেকেই লেখাপড়ার অভাব, প্রতিবন্ধী হওয়া অথবা রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে দরিদ্র হয়।

 

হুয়াং ওয়েন সিউ নামে এক তরুণী। তিনি ছিলেন কুয়াং সি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ল্য ইয়ে জেলার পাই নি গ্রামের সিপিসির প্রথম শাখা সম্পাদক। ল্য ইয়ে জেলার পাই নি গ্রামের সিপিসি সম্পাদক চৌ ছাং চান বলেন, হুয়াং ওয়েন সিউ ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পাই নি গ্রামে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। তখন তিনি থানায় গিয়ে হুয়াকে গ্রামে পৌঁছে দেন। কারণ হুয়াং খুব তরুণ এবং ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলেন। আর স্থানীয় লোকজন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তাই ভাব বিনিময়ে বেশ জটিলতা ছিল। জনগণ তাকে স্বীকৃতি দিত চায় না।

 

তাই হুয়াং ওয়েন সিউ গ্রামবাসীদের বাসায় যান, তাদের উঠান পরিষ্কারে সাহায্য করেন, সবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন, আস্তে আস্তে হুয়াং ওয়েন সিউ স্থানীয় ভাষা শিখে নেন, গ্রামবাসীরা তাঁকেও নিজের লোক মনে করে।

পাই নি গ্রামের বাসিন্দা হুয়াং মেই সিয়ান বলেন, হুয়াং তাকে বড় বোন ডাকেন, আর তিনি হুয়াকে ছোট বোন বলেন। হুয়াং তাঁকে বলেন, কোনো সমস্যা থাকলে তাঁকে জানাতে। হুয়াং মেই সিয়ানের স্বামী রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। চিকিত্সার জন্য এক লাখেরও বেশি ইউয়ানের খরচ হয়। পুরো পরিবার এই কারণে যেন ভেঙে যায়। তখন হুয়াং ওয়েন সিউ তাঁর পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য তাঁর জন্য ৫০ হাজার ইউয়ান ঋণ আবেদন করেন। তিনি এর সাহায্যে একটি ছোট দোকান দেন এবং ছোট আকারের কৃষিজাত দ্রব্য উত্পাদন কারখানা স্থাপন করেন। এখন তাঁর পরিবার প্রতি বছর ৪০ হাজার ইউয়ান আয় করে ও দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে।

 

২০১৮ সালে পাই নি গ্রামের ৪৭২টি পরিবারের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ছিল ১৯৫টি। কৃষকদের দারিদ্র্যমুক্তকরণের জন্য তরুণী হুয়াং ওয়েন সিউ পাহাড়ে প্রতিটি কৃষক পরিবারে যান, তাদের খোঁজখবর নেন। তিনি জানতে পারেন যে, পাই নি গ্রামে চিনি কমলা চাষ করা যায়। তবে গুণগতমান ও উত্পাদনের পরিমাণ ভালো না। হুয়াং ওয়েন সিউ এমন অবস্থা উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেন।

পাই নি গ্রামের বাসিন্দা বান থুং মাও বলেন, আগে তিনি কয়েক বছর ধরে চিনি কমলা চাষ করেছেন। তাই হুয়াং ওয়েন সিউ তাঁকে গ্রামের নেতৃত্বদানকারী কৃষক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তখন তিনি হুয়াং ওয়েন সিউকে জানান যে, গ্রামের পথ-ঘাট বৃষ্টির মৌসুমে ব্যবহার করা যায়না। তাই সবার উদ্বেগ ছিল, ফল চাষ করা হলেও গ্রামের বাইরে পাঠানো বা বিক্রি করা যায় না।

 

হুয়াং ওয়েন সিউ তা জেনে জেলায়, থানায় ভালো পথ নির্মাণের জন্য আবেদন করেন। প্রকল্প নির্মাণে বেশি সময় লাগে, চিনি কমলা পরিপক্ব হওয়ার আগে পথ নির্মাণ শেষ করার জন্য তিনি কৃষকদের প্রাথমিকভাবে পথ ঠিক করার আহ্বান জানান, যাতে পথ নির্মাণের বড় গাড়িগুলো ঢুকতে পারে।

চিনি কমলার বিক্রি বাড়ানোর জন্য হুয়াং ওয়েন সিউ পুরো গ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে ই-কমার্সের কাজ করেন। প্রথম বছরেই অনলাইনে ২০ হাজার কেজিরও বেশি কমলা বিক্রি করা হয়, পরিমাণ ২.২ লাখেরও বেশি ইউয়ান।

 

২০১৯ সালের ১৬ জুন, হুয়াং ওয়েন সিউ সাপ্তাহিক ছুটির সময় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন বাবাকে দেখতে যান, হুয়াং ওয়েন সিউ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে জানতে পারেন যে, পাই নি গ্রামে খুব সম্ভবত পাহাড়ি ঢল থাকে আকস্মিক বন্যা হবে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, গভীর রাত হলেও তিনি গ্রামে ফিরে যাবেন। তবে, হঠাত্ তীব্র বন্যার কবলে পড়ে তিনি মারা যান। অসংখ্য মানুষ তাঁর অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।

 

হুয়াং ওয়েন সিউ-এর বড় বোন হুয়াং আই চুয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি জানতাম না, তোমার কাজের চাপ এত বেশি। আমি সত্যিই তোমার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছি না।

জীবিত থাকার সময় হুয়াং ওয়েন সিউ এক ভিডিও সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, গ্রাম পুনরুদ্ধারে যুবকরা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করি, সবাই বেশি বেশি গ্রামের উন্নয়নে নজর রাখবেন, গ্রামের কাজে সমর্থন দেবেন।

 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের দারিদ্র্যমুক্তকরণ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান বেইজিংয়ে আয়োজন করা হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এতে বলেন: দারিদ্র্যবিমোচনের কাজে, লাখ লাখ কর্মকর্তা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তাঁরা দরিদ্র মানুষজনের সঙ্গে থাকেন, তাদের সঙ্গে কাজ করেন, তাদের জন্য চিন্তা করেন। তারা সবচেয়ে সুন্দর বয়সটি দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে উত্সর্গ করেছেন। অনেক মনোমুগ্ধকর কাহিনী তৈরি হয়েছে।

 

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হুয়াং ওয়েন সিউ-এর নামও উল্লেখ করেছেন। হুয়াং ওয়েন সিউ-এর বাবা হুয়াং চুং চিয়ে এই সম্মেলনে মেয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন এবং অঝোরে কেঁদেছেন।

২০১৩ সাল থেকে চীন মোট ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে প্রথম সিপিসি শাখা সম্পাদক ও কর্মকর্তা পাঠিয়েছেন। প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষ গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচনের কাজে সহায়তা দিয়েছেন। তারা হলেন, চীনে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারী।