জানুয়ারি ২১: ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে কৃষি-অর্থনীতি ও শিল্প-অর্থনীতির পর আবির্ভূত এক নতুন ধরনের অর্থনীতি। বিজ্ঞানের জগতে বিপ্লব ও শিল্পে সংস্কারের পাশাপাশি, ডিজিটাল অর্থনীতি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের জন্য উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল অর্থনীতি এখন নতুন ফোকাসে পরিণত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রধান রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ২০২১ সালে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতি উন্নয়নের এক নতুন দ্রুতগতির লেনে প্রবেশ করেছে। এ বছর বিগডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্লকচেইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের প্রথম সারিতে ছিল। ভবিষ্যতে ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে প্রচলিত অর্থনীতির সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে আইরিশ গানের দল ‘ওয়েস্টসাইড বয়েজ’ চীনা সামাজিক প্ল্যাটফর্মে তাঁদের বৈশ্বিক প্রথম অনলাইন কনসার্ট আয়োজন করে। মোট ২ কোটি ৭০ লাখ দর্শক এটি উপভোগ করেন। বিশেষ করে, অনলাইনে দর্শক ছিল ১৫ লাখ। এই অনলাইন কনসার্টের সাফল্য চীনের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণকাজের ফল।
বর্তমানে চীনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সবচেয়ে আধুনিক ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এটি ডিজিটাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার’ সূচনাবর্ষে চীনের নতুন আকারের অবকাঠামো নির্মাণকাজের কার্যকারিতাসম্পর্কিত আলোচনায় চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর মহাপরিচালক চাও চি কাং বলেন,
“২০২১ সালে চীনে নতুন করে ফাইভ-জি বেস স্টেশন বসেছে ৬ লাখ ৫৪ হাজারটি; ফাইভ-জি মোবাইল সংযোগের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১ কোটি ৮০ লাখে। গিগাবিট অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে ৩০ কোটি পরিবার। গোটা চীনে প্রথম দফায় ২৯টি ‘গিগাবিট শহর’ নির্মাণ করা হয়েছে।…‘ফাইভজি+শিল্প নেটওয়ার্ক’ খনিজ, লৌহ ও ইস্পাত এবং বিদ্যুত্সহ ১০টি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাধারণ প্রকৌশলী এবং তথ্য-মুখপাত্র থিয়ান ইয়ু লুং বলেন, ২০২১ সালে চীনে ডিজিটাল অর্থনীতি উন্নয়নের এক দ্রুতগতির লেনে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন,
“আমরা বিগডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্লকচেইন, ইত্যাদি খাতে উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছি। এই ক্ষেত্রে আমাদের প্রাধান্য খুবই স্পষ্ট। ফাইভ-জি মোবাইল টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি, সাজ-সরঞ্জাম, ও এর ব্যবহারের দিক দিয়ে আমরা বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে আছি। আমাদের স্মার্টফোনও বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতির অবকাঠামো তথা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ও সফ্টওয়্যার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যও অর্জিত হয়েছে।”
২০২১ সালে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতি উন্নয়নের পথে হেঁটেছে। সারা বছরে সফ্টওয়্যার তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা শিল্পে ব্যবসায়িক আয়ের পরিমাণ ১৭.৭ শতাংশ বেড়েছে, যা এই ক্ষেত্রের গড় মানকে ছাড়িয়েছে। বুদ্ধিমান উত্পাদন সরঞ্জাম শিল্পও দ্রুত উন্নত হয়েছে; থ্রিডি প্রিটিং সরঞ্জামের সংখ্যা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৭.৭ শতাংশ বেশি ছিল। দেশব্যাপী প্রভাবশালী শিল্প নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা ১৫০টিরও বেশি এবং ‘ফাইভজি+শিল্প নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ২ সহস্রাধিক। জি-২০সহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার আওতায় চীনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মান বেড়েছে। চীন সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল আইন, তথ্যনিরাপত্তা, সাইবার-নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ম্যাকানিজমে অংশগ্রহণ করছে। চীনের ডিজিটাল শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের অবস্থান অনেক শক্তিশালী করেছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)