অলিম্পিকের পর চীনের প্রামাণ্যচিত্রের অবস্থা ও উন্নতি
2022-01-20 09:01:05

২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক গেমস সফলভাবে আয়োজন করায় ক্রীড়া খাতে নাগরিকদের অংশগ্রহণের নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে। বেইজিং অলিম্পিক গেমস বিশ্বের জন্য শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী এক চীনকে তুলে ধরা ছাড়াও, ব্যাপকভাবে চীনা জাতির আত্মসম্মান ও গর্ব বাড়িয়ে তুলেছে এবং ক্রীড়ার প্রতি চীনা নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

 

অলিম্পিক গেমস চলাকালে অলিম্পিকের থিমযুক্ত ক্রীড়ার প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশিত হয়েছে, ফলে এমন ধরনের প্রামাণ্যচিত্রের প্রতি সাধারণ জনগণের উপলব্ধি এবং অনুভূতি গভীরতর হয়ে উঠেছে। ক্রীড়া সংস্কৃতির সুগভীর পরিবেশের মধ্যে ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রের উদ্ভাবন এবং দর্শকসংখ্যা বৃদ্ধির খাতে বহুমুখী উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে।

 

একদিকে ইন্টারনেট যুগ আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্র যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সম্প্রচার প্লাটফর্ম পরিবর্তন ঘটিয়েছে। কিছু বেসরকারি নির্মাণ সংগঠন ও ব্যক্তি ভিডিও ওয়েবসাইটে নিজের তৈরি ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রও পোস্ট করেন। ইন্টারনেটে দেখা যাওয়া দর্শকদের সঙ্গে নির্মাণ পদ্ধতি যোগাযোগের চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে এবং ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্র সম্প্রচারের সুযোগ-সুবিধা যোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্মাণের মান আরও বেড়েছে। প্রযুক্তি ও সরঞ্জামসহ বিভিন্ন হার্ডওয়ার সুবিধা ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পোর্টস ডকুমেন্টারিগুলো প্রতিযোগিতা ও চরিত্রের প্রতি উদ্দেশ্যমূলক রেকর্ড করা নয়, বরং উচ্চ স্তরে চিত্রের ভাষা এবং সিনেমাটিক অনুভূতির পরিমার্জনও অনুসরণ করে। সম্পাদনা, সাউন্ডট্র্যাকিং, কালার গ্রেডিং ইত্যাদি, নানা দিকের সমন্বয়ে অত্যাধুনিক উত্পাদনের দিক থেকে ক্রীড়া তথ্যচিত্রের ক্রমাগত বিকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।

 

তা ছাড়া, জনগণের সামাজিক সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠার সাথে সাথে ক্রীড়ার আওতা বাড়ছে। আরো বেশি ইভেন্ট ক্রীড়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে ক্রীড়াবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রের থিম এবং থিমের আওতা আরো বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে এবং সংস্কৃতিকে প্রকাশ করে এর উত্তরাধিকার করা প্রামাণ্যচিত্রও সময় বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হতে পারে।

 

বেইজিং অলিম্পিক গেমসের পর ক্রীড়ার পরিবেশ উন্নত হচ্ছে। ক্রীড়া বিষয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হয়েছে ও অংশগ্রহণ বাড়ছে। নতুন এই সময়ে ক্রীড়াবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রের বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ও সৃজনশীলতা বাস্তবায়িত হয়েছে।

 

এই সময় নারী-থিমযুক্ত ক্রীড়া তথ্যচিত্র ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে ক্রীড়া খাতে নারীর ভাবমূর্তি নানা প্রামাণ্যচিত্রে দেখা দেয়। নারীকে কেন্দ্র করে তৈরি এক প্রামাণ্যচিত্রে নারীদের ক্রীড়ার গল্প, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা, তাদের ক্রীড়ার জীবন ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে সেই সময় চীনের ক্রীড়া খাতে নারীদের ভাবমূর্তি বর্ণনা করেছে। এতে নতুন শতাব্দীর পর থেকে চীনের ক্রীড়া খাতে নারীদের অভূতপূর্ব ইমেজ এবং স্বাধীন চেতনা ফুটে ওঠে। এসব প্রামাণ্যচিত্রে নারীদের চেহারা ও শারীরিক গঠনসহ নানা সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এবং একটি শক্তিশালী শরীর, অধ্যবসায়ী চরিত্র এবং বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নারীদের ভাবমূর্তি তৈরি হয়।

 

মানুষের ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবন এবং সমাজের ক্রমাগত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলার সীমানা ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে, খেলাধুলার সংজ্ঞাও নিরন্তরভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং যে ইভেন্টকে ‘ক্রীড়া’ বা ‘প্রতিযোগিতা’ হিসেবে বলা যেতে পারে তাও বাড়ছে।

‘শত বছরের শত চ্যাম্পিয়ন’ নামে একটি স্পোর্টস বায়োপিক প্রামাণ্যচিত্র উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এতে ঐতিহ্যবাহী স্পোর্টস ইভেন্ট, যেমন ডাইভিং ও পিংপং প্রতিযোগিতার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছাড়া, ইন্টারনেট খেলাসহ ই-স্পোর্টসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ থেকে দেখা যায়, স্পোর্টস শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী শরীর চর্চায় সীমাবদ্ধ নয়, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে জন্ম হওয়া নতুন ইভেন্ট অব্যাহতভাবে ক্রীড়া ও চ্যাম্পিয়ন খাতে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করেছে।

 

২০০৮ সাল থেকে, সবার অংশগ্রহণে ফিটনেস ও জাতীয় খেলাধুলার সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধ ক্রীড়া ও সংস্কৃতির খেলাধুলাও ক্রীড়া তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তুকে সমৃদ্ধ করেছে।

অবশ্য ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্র সংকটাবস্থায় পড়েছে। বড় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হলো প্রথম থিম উত্সব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রে প্রতিযোগিতার ওপর ফোকাস করা হয় নি। বরং, সাধারণ মানুষের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, এ ধরনের প্রামাণ্যচিত্রের সংখ্যা কম হওয়ায় তা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে নি।

 

দর্শকদের কাছে ক্রীড়া তথ্যচিত্রের আকর্ষণ এখনও বড় আকারের আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের উপর নির্ভর করে থাকে এবং আন্তর্জাতিক ইভেন্টের উত্তপ্ত আলোচনার বিষয়।

আরেকটি কারণ হলো, এর প্রচার যথেষ্ট নয়। অনেক বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তি বহু-থিমের স্পোর্টস ডকুমেন্টারি তৈরি করলেও অর্থের অভাবে ভালোভাবে প্রচার করা হয়নি।

 

আজকাল দ্রুত ও ইন্টারনেট তথ্যের যুগে, ডকুমেন্টারি বাজারে সুবিধা করতে পারে নি। ক্রীড়া তথ্যচিত্রগুলোকে বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করতে চাইলে যোগাযোগ চেইনের পিছনে প্রচার কাজ ও মার্কেটিং কাজ ভালোভাবে করতে হবে।

 

বহু-থিমযুক্ত স্পোর্টস ডকুমেন্টারির প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য দর্শকদের চাহিদা সম্পর্কে জানা উচিত্। খেলাধুলা ও চ্যাম্পিয়নদের প্রদর্শনই মূল বিষয় হওয়া উচিত নয়। বরং নাগরিক সংস্কৃতিতে দর্শকদের আগ্রহ ও উদ্বেগেরও ওপর ফোকাস করা উচিত্। ফলে, বিভিন্ন থিমের সম্ভাবনা অনুসন্ধান এবং নিজস্ব স্বাধীন বাজারের অবস্থান খুঁজে বের করা উচিত।

 

বর্তমানে কোনো কোনো স্পোর্টস ডকুমেন্টারি নিরন্তরভাবে এর ‘প্রতিযোগিতামূলক অনুভূতি’ কমিয়ে দিয়েছে এবং এর ‘বিনোদনের গুণাবলী’ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিই স্পোর্টস ডকুমেন্টারির সৃজনশীলতার নতুন একটি দিক হতে পারে। যথাযোগ্যভাবে স্পোর্টস ডকুমেন্টারি বিনোদন এবং সরল পদ্ধতিতে ক্রীড়ার চেতনা প্রকাশ করতে পারে।

 

প্রি-শুটিং এবং পোস্ট-এডিটিং সম্পূর্ণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া, বর্তমান সময় শিল্পকর্ম প্রচারের একটি মাধ্যম। এরপর তার প্রচার ও জনপ্রিয় করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক শিল্পকর্ম প্রচারের খরচ উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি। শিল্পকর্ম মানে মনোযোগ দেওয়া এবং ভালোভাবে শুটিং করা। সেই সঙ্গে জটিল ও বৈচিত্র্যময় তথ্য সমাজে প্রচার করা এবং বিপণন প্যাকেজিং শিল্পকর্ম জনপ্রিয় করে তোলার আরেকটি উপায় হতে পারে। তা ছাড়া, প্রচার টার্মিনাল—দর্শকদের মতামত সংগ্রহ করে এবং এটি বিশ্লেষণ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দর্শকদের মতামত দেওয়ার পর উৎপাদন দল ডেটা সংগ্রহ করে, বিশ্লেষণ করে এবং মতামতের সারসংক্ষেপ করে। ফলে ক্রীড়া তথ্যচিত্রের টেকসই উন্নয়নে পরবর্তী শিল্পকর্মের প্রতি আরও ভালভাবে গাইড করতে পারে।

 

স্পোর্টস ডকুমেন্টারি নির্মাতারা অর্ধশতাব্দী ধরে চেষ্টা করেছেন। যাতে চীনে ক্রীড়া তথ্যচিত্র তৈরি এবং শুটিংয়ের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা যায়। দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক দুর্দান্ত শিল্পকর্মও আবির্ভূত হয়েছে। যাই হোক, ক্রীড়া ডকুমেন্টারি সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বাজারে জায়গা করতে চাইলে সংস্কার, উদ্ভাবন ও ক্রমাগত অগ্রগতি করতে হবে। আমরা আশা করি যে, অলিম্পিক গেমস এবং অন্যান্য জমকালো অনুষ্ঠানের প্রভাবে জনগণের ক্রীড়া সচেতনতা বাড়বে, খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ বাড়বে এবং ক্রীড়া তথ্যচিত্রের প্রতি মনোযোগও বাড়বে।