ব্রিক্স-এর ‘চীনা বর্ষ’ ও প্রসঙ্গকথা
2022-01-20 15:49:50

জানুয়ারি ২০: চলতি বছর ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়কারী প্রথম সম্মেলন গতকাল (বুধবার) শেষ হয়েছে। চীনের ব্রিক্সবিষয়ক সমন্বয়কারী ও উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ছাও সু সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি বছর সভাপতিরাষ্ট্র হিসেবে চীন ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষসম্মেলন আয়োজন করবে। এ সম্মেলন ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর ঐক্য ও সহযোগিতায় ‘চীনা চালিকাশক্তি’ যোগাবে। পাশাপাশি, সম্মেলনে মানবজাতির যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও বেশি ‘ব্রিক্স প্রস্তাব’ উত্থাপিত হবে।

বর্তমানে বিশ্ব মহামারীতে আক্রান্ত। গোটা বিশ্ব বহু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে; বৈশ্বিক উন্নয়ন-প্রক্রিয়াও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে ও হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে, পাঁচ বছর পর চীন পুনরায় ব্রিক্সের সভাপতিরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ১৪তম বৈঠক আয়োজন করবে চীন। মা ছাও সু বলেন, এটি হবে নবোদিত বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক তত্পরতা। গোটা বিশ্বে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। তিনি বলেন,

“ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়কারী সম্মেলন হচ্ছে চীনের সভাপতিরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের পর অনুষ্ঠিত প্রথম আনুষ্ঠানিক তত্পরতা। এটি ব্রিক্সের ‘চীনা বর্ষ’ শুরু হওয়ার প্রতীক। মহামারী মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদার করা, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার-প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নেওয়া, এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করায় ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো আরও বেশি ভূমিকা রাখবে বলে আন্তর্জাতিক সমাজ আশা করে। সভাপতিরাষ্ট্র হিসেবে চীন ব্রিক্সের শীর্ষ সম্মেলন সফল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।”

গত সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উন্নয়ন ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশেষ চাহিদার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং অংশীদারিত্বের সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান। মা ছাও সু বলেন, ব্রিক্সের ‘চীনা বর্ষের’ মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে: ‘উচ্চ গুণগত মানের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং যৌথভাবে বৈশ্বিক উন্নয়নের নতুন সময়পর্ব উন্মোচন করা’। এর শুরু ও শেষ হবে উন্নয়ন দিয়ে। তিনি বলেন,

“মহামারীর কারণে বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন-প্রক্রিয়া গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের ‘এজেন্ডা ২০৩০’  বাস্তবায়নের পথেও সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বাধা। জরুরি উন্নয়ন-সমস্যা সমাধানে কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করা যায়? ‘এজেন্ডা ২০৩০’ কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাজে লাগবে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার।  মহামারী-উত্তর সময়পর্বে বৈশ্বিক উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানোও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মৌলিক স্বার্থের সাথে জড়িত। ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে নবোদিত বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি। তাই ব্রিক্সের উচিত উন্নয়ন ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ সহযোগিতার মূলে রাখা, যাতে মহামারী থেকে সৃষ্ট নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়। পাশাপাশি, যৌথ উদ্যোগ কাজে লাগিয়ে ‘এজেন্ডা ২০৩০’ বাস্তবায়নে ব্যাপক মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে এবং নতুন অবদান রাখতে হবে।”

মা ছাও সু বলেন, চীন বহুপক্ষবাদ অনুশীলন করে যাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে মহামারী মোকাবিলা অব্যাহত রাখবে, অর্থনীতির পুনরুদ্ধারকাজে গতি সঞ্চার করবে, উচ্চ পর্যায়ের বাস্তব সহযোগিতাকে এগিয়ে নেবে, এবং ‘এজেন্ডা ২০৩০’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। চীন ব্রিক্সের সভাপতিরাষ্ট্র হিসেবে ৩০টি খাতে শতাধিক কর্মতত্পরতার আয়োজন করবে এবং ধারাবাহিক সহযোগিতামূলক প্রস্তাব উত্থাপন করবে। বিভিন্ন পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় ব্রিক্সের ‘চীনা বর্ষ’ সফল হবে বলেও তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)