‘ওল্ড বয়’
2022-01-20 15:07:58

সঙ্গীত কোনো দেশের সীমা মানে না। আপনি কি এখন গাড়ি চালাচ্ছেন, নাকি বাসার কোনো কাজ করছেন? আপনি এখন একা, নাকি সাথে সঙ্গী আছে? আপনার মন আজকে পেইচিংয়ের শরত্কালের নীল আকাশের মতো স্বচ্ছ, নাকি ঢাকার কালবৈশাখী সময়ের মতো মেঘলা? যে যেখানে যেভাবেই থাকুন না কেন, আসুন সঙ্গীত উপভোগ করি। সঙ্গীতের জগতে ডুব দেওয়ার আনন্দই আলাদা। কী বলেন?

বন্ধুরা, এখন যে গানটি আপনারা শুনছেন, সেটা হল গায়ক জেং চিউনের রচিত ও গাওয়া গান ‘হুই তাও লাসা’ অর্থাত্ তিব্বতে ফিরে যাওয়া। চীনের শানসি সিআন শহরে জন্মগ্রহণ জেং চিউন চীনের একজন রোক এন্ড রোল গায়ক। তাঁর প্রথম এলবাম ‘ছি লুও লুও’ ১৯৯৪ সালে প্রথমে প্রকাশিত হয়। ‘হুই তাও লাসা’ এ এলবামের মধ্যে একটি জনপ্রিয় গান। গানে বলা হয়, লাসায় ফিরে যাই, পোতালা প্রসাদে ফিরে যাই। ইয়ারলুং জাংবো নদীতে আমার মনকে পরিষ্কার করি। হিমালয় পর্বতে আমার চিত্রকে জাগিয়ে উঠি। চলো চলো আমরা একসাথে সালায় ফিরে যাই। আমাদের অনেক দিন ধরে দূরে থাকা বাড়িতে ফিরে যাই।

এখন জেং চিউন আরেকটি গান শুনুন। গানের নাম ‘ছি লুও লুও’ বা নগ্ন।

এ গানে বলা হয়, সে দেখতে খুব শীতলরানীর মত, রহস্যময়। আসলে তার মনে খুব একাকী লাগে অনেক রোমাঞ্চ স্নপ্ন দেখে। একদিন আমাদের দেখা হয়েছে। একাকী মনের উদ্ধার হয়েছে। তার পাগলামি দেখে আমি জানিনা আনন্দিত নাকি আতঙ্ক হওয়া উচিত। অপ্রস্তুত নিরবের পর তাকে জিজ্ঞাস করলাম, তুমি কি চাও? সে হঠাত করে আমাকে কোলে নিয়ে বললো আর কিছু ভাবতে পারি না। কারণ আমার ভালবাসার কোন আবরণ নেই।

এলবাম ‘সি বেন’ ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ এলবাম দশাধিক বার সংশোধনের পর প্রকাশিত হয়। শুনুন এ এলবামের প্রথম গান ‘সি বেন’। গানে বলা হয়, আমার যৌবন্য সময় পেছনের সেই মহিমাময় শহরের জন্য উত্সর্গ দিয়েছি। এ স্বপ্নের জন্য আমরা সবাই কিছু না কিছু দান করেছি। তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাই। সে অনেকদূরের জায়গায় যাই এবং পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হই।  

 ‘আন চিয়ে’ বা ‘বন্ধক’ গানে বলা হয়, এখনকার জীবন দেখতে খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রথমের স্বপ্নের কথা আর কার মনে আছে? একটি নতুন বাসা কেনা, একজন মেয়ের সাথে বিয়ে করা তারপর একটি বাচ্চা নেওয়া, এটাই আমাদের বাস্তবতা। এতো বেশি জিনিস কিনতে হয়। কিন্তু বিক্রি করার মত কিছু নেই। আমাকে বন্ধকের ঋণ পরিশোধ দিতে হয়, ভালবাসা তৈরী করতে হয় এবং নিজের জীবিত থাকার প্রমাণ দিতে হয়।

এখন শুনুন জেং চিউনের আরেকটি গান ‘লাও নান হাই’ বা ওল্ড বয়। গানে বলা হয়েছে: যে সব কষ্ট আমরা একসাথে অতিক্রম করেছিলাম তার কথা মনে আছে? জীবনে আমরা একসাথে নিজের মান-সম্মান রক্ষা করেছিলাম। কখনো ভুলে যেও না। যেসব আন্তরিক যুবকদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। ‘ওল্ড বয়’ তুমি এখন কোথায়? তুমি কি জীবনের এ সমুদ্র পার হয়েছো?

এখন শুনুন জেং চিউনের আরেকটি গান ‘মা’ বা ঘোড়া। গানে বলা হয়েছে: আমার জীবনে প্রতিদিন তুমি এসো আবার চলে যাও। তোমার পেছনে আমি দৌড়াই। তোমার ইচ্ছা মত করো। আমাকে তুমি আনন্দের সীমার বাইরে দিতে পারো আবার মাঝে মাঝে আমাকে ফেলে দিতে পারো। তুমি একটি বন্য ঘোড়া। কে চালাতে পারে? তুমি একটি বন্য গোড়া। আমি চালাতে চাই। আমি কখনো বিবেচনা করি না তাই কোন উপায় নেই শুধু তোমাকে ধরতে পারি।

প্রিয় শ্রোতা, গান শুনতে শুনতে অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে চলে এলাম। তবে বিদায় নেওয়ার আগে জেং চিউনের আরেকটি গান শোনবো। গানের নাম ‘রে আই’ অর্থাত গভীর ভালবাসা। গানে বলা হয়েছে: জীবনে চলার রাস্তায় হঠাত করে খুব সুন্দর কিছু ঘটতে পারে যার জন্য তুমি সব দিতে পারো। জীবনে চলার পথে মাঝে মাঝে খুব নিষ্ঠুর মানুষের সঙ্গে দেখা হতে পারে। তারা তোমাকে আঘাত দেয়। কিন্তু আমরা তিতাকে উপভোগ করি। আমরা সাহসী মানুষকে নিজের সঙ্গী হিসেবে বেছে নেই। একটি ভাঙা গিটার নিয়েও আমি পৃথিবীকেও বদলাই দিতে পারি। চলতে থাকি, যখন হাসি দিয়ে কান্না বদলাই দিতে পারি, যখন মনে মনে আবার সজীব হয়ে যায়। তুমি নিজের জন্য গর্ব বোধ করবে। সব রাস্তা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নয়, মাঝে মাঝে শুধু সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য।

(স্বর্ণা/আলিম)