জানুয়ারি ২০: ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ, ঐতিহাসিক ও সিদ্ধান্তমূলক বক্তৃতার প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে। জাতিসংঘে চীনা নেতাদের দুটি বক্তৃতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: একটি ছিল ১৯৭৪ সালে, যখন তেং সিয়াও পিং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ বিশেষ অধিবেশনে ‘তিনটি বিশ্ব’ এবং চীনের পররাষ্ট্রনীতির বিভাজন সম্পর্কে মাও সেতুং-এর কৌশলগত চিন্তাভাবনা ব্যাখ্যা করেছিলেন; অন্যটি ছিল ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জেনিভায় জাতিসংঘের সদর দফতরে দেওয়া ‘যৌথভাবে মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলা’ শীর্ষক মূল বক্তৃতা।
ওই গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বিশ্বের জন্য একটি চীনা প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি ‘মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলা’র কথা বলেন। এটি শান্তি ও উন্নয়নের ভিত্তিতে উত্থাপিত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব-পরিকল্পনা। এটি বিংশ শতাব্দির ৯০-এর দশকে উত্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বায়ন মডেল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্কিন প্রস্তাবের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র নিজের সুবিধার জন্য, অন্যান্য দেশ এবং জনগণের ওপর অর্থনৈতিক ও সামরিক জবরদস্তি চালাতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে। এটি দারিদ্র্য, দুর্দশা, সহিংসতা এবং নতুন ঔপনিবেশিক যুদ্ধের জন্ম দেয়। আর চীনের উত্থাপিত ‘মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি’ আন্তঃনির্ভরশীলতা ও সাধারণ উন্নয়নের কথা বলে।
প্রেসিডেন্ট সি বক্তৃতায় প্রথমবারের মতো আজকের বিশ্বের অনিশ্চয়তার কথা বলেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, প্রথমে আমাদেরকে একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। প্রশ্নটি হচ্ছে: আমরা কোথা থেকে এসেছি, এখন কোথায় আছি এবং কোথায় যাব? বিগত ১০০ বছরের ইতিহাসের ভিত্তিতে তিনি এই উপসংহারে পৌঁছান: ‘গত ১০০ বছরে গোটা মানবজাতির সাধারণ আকাঙ্ক্ষা ছিল শান্তি ও উন্নয়ন। তবে, এই কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি। আমাদের অবশ্যই শান্তি ও উন্নয়নের পথ অনুসরণ করতে হবে। জনগণের ইচ্ছা অনুসারে, শান্তি ও উন্নয়নের ম্যারাথন ট্র্যাকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
প্রশ্ন হচ্ছে: পাঁচ বছর আগে দেওয়া প্রেসিডেন্ট সি’র বক্তৃতার তাত্পর্য কী, যখন বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারী প্রায় দুই বছর ধরে চলছে এবং বিশ্বে দ্বন্দ্ব ও বিপদ বাড়ছে? প্রথমত, চীন একটি দরিদ্র ও দুর্বল পশ্চাৎপদ দেশ থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে বিদেশি সম্প্রসারণ ও ঔপনিবেশিক লুণ্ঠনের ওপর নির্ভর করেনি। এ কথা এমন একটি বিশ্বে অত্যন্ত মূল্যবান, যেখানে এখনও পশ্চিমা শক্তি আধিপত্যবাদী ও ঔপনিবেশিক আচরণ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে, চীন বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, একটি দেশ জনসংখ্যাগত, ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক অসুবিধা সত্ত্বেও চরম দারিদ্র্য দূরী করতে পারে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু ক্ষুধায় ভুগছে, এবং তাদের কেউই চীনা নয়!
মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার ধারণার লক্ষ্য উন্নয়নের মাধ্যমে শান্তি প্রচার করা। দারিদ্র্য, কষ্ট এবং প্রতিকূল উন্নয়ন পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বর্তমানে, ১৪০টি দেশ এবং ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ পরিবারে যোগ দিয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে, রেলপথ, বন্দর এবং বিমানবন্দরের মতো গণপ্রকল্প নির্মাণ করার মাধ্যমে চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে উত্পাদনশীলতা বাড়াতে, দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করতে এবং মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার ভিত্তিকে সুসংহত করতে সহায়তা করে যাচ্ছে।
পরিশেষে, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে, চীন তার নিজস্ব অনুশীলনের মাধ্যমে বিশ্বে দুর্দান্ত অবদান রেখে চলেছে। চীন শুধু টিকায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেনি, বিশ্বকে সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন মহামারী-প্রতিরোধক সামগ্রী সহায়তা হিসেবে দিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, চীন ১২০টিরও বেশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। এক্ষেত্রে চীন এগিয়ে আছে বিশ্বের যে-কোনো দেশের চেয়ে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করেছে যে, পশ্চিমা দেশগুলোর স্লোগানসর্বস্ব ভন্ডামির চেয়ে চীনের শাসনের মডেল অনেক বেশি কার্যকর। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)