১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম ‘জাতীয় আইস গেমস’ চীনের হেইলোংচিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। ২১৯জন অপেশাদার খেলোয়াড় স্পিড স্কেটিং, ফিগার স্কেটিং এবং আইস হকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেও মানুষের খেলা দেখার উৎসাহ কমেনি। এবারের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ানের ফলাফল বিভিন্ন ইভেন্টে প্রথম জাতীয় রেকর্ড হয়ে ওঠে। তারপর থেকে দেশটিতে আইস স্পোর্টস খেলার ঢেউ শুরু হয়ে যায়।
উত্তরাঞ্চলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শীতকালীন ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয়। হারবিন, ছাংছুন ও ছিছিহারসহ বড় বড় শহরগুলোর প্রায়ই সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শীতকালে বরফের রিঙ্ক তৈরি করা হয় এবং স্কেটিং একটি শীতকালীন ক্রীড়া কোর্স হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। অনেক কারখানা ও প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের আইস হকি দল প্রতিষ্ঠা করেছে।
১৯৭৮ সালে দেশের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনের ক্রীড়া জগতের একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করে।
১৯৮০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের লেক প্লাসিডে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ শীতকালীন অলিম্পিকে অংশ নিতে চীন প্রথমবারের মতো একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়। চীনা আইস স্পোর্টসদল বিদেশে চলে যায় এবং বিশ্বের সামনে হাজির হয়। ক্রমাগত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করে চীন। চীনে আইস স্পোর্টস জনপ্রিয় করে তোলা এবং এর উন্নয়ন ২০ শতাব্দীর ৮০’র দশকের শুরুতে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছায়।
গত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে বরফ ক্রীড়া খাতে চীন অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নতুন অগ্রগতি অর্জন করে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শর্ট ট্র্যাক স্পিড স্কেটার এবং ফিগার স্কেটিং স্কেটার নানা প্রতিযোগিতায় পদক ছিনিয়ে এনে দেশের জন্য গৌরব অর্জন করেন চীনা খেলোয়াড়রা। ‘উত্তর চীনের আইস স্পোর্টস দক্ষিণাঞ্চলে খেলা’ এই কৌশল কাজে লাগিয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ ও শহরে আইস ক্রীড়ার দল গড়ে ওঠে এবং স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়। এতে বরফ ও তুষার খেলায় দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করা হয়। বিশেষ করে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের সফল বিডের পর ‘বরফ ও তুষার খেলায় ৩০ কোটি মানুষের অংশগ্রহণের’ উদ্দেশ্য ধীরে ধীরে একটি স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, এখন পর্যন্ত চীনের উইন্টার স্পোর্টসে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ৩৪.৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে উইন্টার স্পোর্টস চীনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
শীতকালীন অলিম্পিক গেমসকে কাজে লাগিয়ে অনেক আঞ্চলিক শিল্প উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নও বাস্তবায়িত হয়েছে। উইন্টার সংস্কৃতি প্রসঙ্গে চীনাদের জানাশোনা বাড়ছে; যা চীনাদের কাছে আরও পরিচিতি পেয়েছে। উইন্টার স্পোর্টস অনেকের জীবনধারাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। বরফ ও তুষার খেলা মানুষের ফিটনেস বৃদ্ধি করার নতুন পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
বয়স্ক ব্যক্তি ও তরুণ-তরুণী ছাড়া, উইন্টার স্পোর্টস শিশুদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা সবসময়ই বলি, শখ হলো সবচেয়ে ভালো শিক্ষক। উইন্টার স্পোর্টসের প্রতি গভীর আগ্রহ নিয়ে এক একটি শিশু স্নো এলফের মতো বরফ ও তুষার মেঝেতে খেলছে। তারাই হচ্ছে চীনের উইন্টার স্পোর্টসের ভবিষ্যত আশা।
(লিলি/তৌহিদ)