এসব সুন্দর ছবিগুলো কিসের? বলুন তো এসব খাবারের নাম কি?
এর চীনা নাম হল ‘হুয়া বো বো’। অর্থ ময়দা দিয়ে বাষ্প দিয়ে তৈরি করা রঙিন বান। আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না যে, চীনে কত রকমের বান আছে! বাঘ, ফুল, পিচ, খাওয়া যায়, দেখতেও অনেক সুন্দর। সম্প্রতি এসব রঙিন চীনা বৈশিষ্ট্যময় বান ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। এসব মূলত চীনের শানতুং প্রদেশের ওয়েই হাই শহরের ‘হুয়া বো বো’ অর্থাত্ রঙিন বান কৌশলের উত্তরাধিকারী ইয়ু লি লি’র কারখানায় তৈরি করা হয়েছে।
ইয়ু লিলি বলেন, আমাদের ‘হুয়া বো বো’ খাওয়া ছাড়া জন্মদিনের কেক, উপহার, সিনিয়দের শুভকামনা, ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার শুভেচ্ছা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তরুণরা এসব চীনা বৈশিষ্ট্যময় ‘হুয়া বো বো’ অনেক বেশি পছন্দ করে।
৪০ বছর বয়সী ইয়ু লি লি ছোটবেলা থেকে মা’র সঙ্গে ‘হুয়া বো বো’ বানানো শিখতে শুরু করে। এটি হল শানতুং প্রদেশের প্রাদেশিক পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। ২০১৬ সালে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তিনি ‘হুয়া বো বো’ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘হুয়া বো বো’ বা রঙিন বান রান্নায় ইয়ু লি লি গ্রামের শ্রেষ্ঠ অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারী ওয়াং আই ফেংয়ের কাছ থেকে শিখেন। কয়েক বছর পর তিনি ওয়েই হাই শহরের হৌ চিয়া থানায় কারখানা স্থাপন করেছেন। ইয়ু লিলির কারখানায় ৮০জনেরও বেশি কর্মী আছে। তারা প্রধানত গ্রামের ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলা। আগে তারা গ্রামে কৃষিকাজ করতেন, শিশুর দেখাশোনা করতেন, আয়ও অনেক কম ছিল। এই কারখানা তাদের কর্মসংস্থান দিয়েছে।
ইয়ু লিলি বলেন: বর্তমানে তারা ৫ শতাধিক ‘হুয়া বো বো’ তৈরি করেছেন। যেমন শুভ প্রতীক মাছ, ড্রাগন, ইত্যাদি। সবচেয়ে ভারীটির ওজন ২০ কেজিরও বেশি। এটি শুধু ঘর সাজানোর জিনিসই নয়, বরং তা খাওয়া যায়।
‘হুয়া বো বো’ ক্রেতাদের নিজস্ব গল্প আছে। যেমন গত বছর একটি তরুণ মেয়ে দোকানে গিয়ে গোলাপ আকারের বান কেনার অর্ডার দেয়।
ইয়ু লিলি বলেন, সেই মেয়ে ছেলেবন্ধু জন্মদিনের সময় ছেলেবন্ধুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছেলেবন্ধু তাতে রাজি হয়, এখন তারা বিয়ে করেছে।
এসব রঙিন বান দেখতে খুব সুন্দর, তবে রান্না করা অনেক জটিল ও অনেক সময় লাগে। যেমন, চলতি বছর তাদের প্রধান পণ্য ‘কাপড় বাঘ’। ‘কাপড় বাঘ’ হল চীনের প্রচলিত এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প। কাপড় দিয়ে বাঘের আকারে পুতুল তৈরি হয়। ইয়ু লিলি জানান, বানের ‘কাপড় বাঘ’–এর হলুদ রং মিষ্টি কুমড়া দিয়ে তৈরি হয়। মিষ্টি কুমড়া বাষ্পের পর ময়দা, দুধ ও চিনির সঙ্গে মিশিয়ে বাঘের আকারে তৈরি করা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
এখন চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘বসন্ত উত্সব’ আসছে। ইয়ু লিলি এবং তাঁর কর্মীরা আরো বেশি ‘হুয়া বো বো’ তৈরির চেষ্টা করছেন; যাতে বসন্ত উত্সবে সবার কেনার চাহিদা মেটানো যায়। প্রতিদিন অনলাইন ও অফলাইনে ৪/৫শ টি অর্ডার থাকে, আর বসন্ত উত্সবের সময় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। প্রতি মাসে ৩০ লাখ ‘হুয়া বো বো’ বিক্রি করেন তিনি।
ইয়ু লি লি বলেন, তিনি চান, আরও বেশি নারী ‘হুয়া বো বো’ রান্নার মাধ্যমে নিজের দক্ষতা বাস্তবায়ন করুক। আরো বেশি তরুণ ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ভালোবাসুক। তাঁরা শুধু বান তৈরিই করছে না, বরং তা শানতুংয়ের মানুষের স্বাদ, আত্মীয়তার স্বাদ—এই কৌশলকে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি মানুষের মনে এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের বিশেষ স্বাদ ধরে রাখতে চান। যাতে বাইরে থাকা মানুষগুলো জন্মস্থানের স্বাদ পেতে পারে।