সবুজ উন্নয়নও নিশ্চিত করছে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’
2022-01-17 16:25:56

‘এক অঞ্চল, এক পথ’  কেবলই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ নয়, পাশাপাশি এটি একটি সবুজ উন্নয়নের পথও বটে। যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণে ইতিবাচকভাবে সবুজ উন্নয়ন ধারণার অনুশীলন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জ্বালানীর সবুজ নিম্ন-কার্বন উন্নয়নকে সমর্থন, এবং অবকাঠামোর সবুজ নিম্ন-কার্বন নির্মাণ ও চালু ত্বরান্বিত করতে হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রশাসন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতাও জোরদার করে এই পথ। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ কাঠামোর একটি সবুজ প্রকল্প অব্যাহতভাবে আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে বাস্তবে রূপ নিয়ে বিশ্বের টেকসই উন্নয়নে শক্তিশালী সমর্থন দিয়ে চলছে।

 

পাকিস্তানের বায়ুশক্তি প্রকল্প স্থানীয় বিদ্যুতের অভাব মেটাচ্ছে

 

প্রায় ৬০ মিটারের একটি বায়ু টারবাইন ব্লেড পাকিস্তানের করাচি বন্দরে কিছু সংখ্যক মালামাল জাহাজ থেকে নামানো হয়। সুবিন্যস্ত ব্লেডটি যৌগিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। সাদা রঙের ব্লেডটিকে মালবাহী জাহাজের পাটাতনে বিশেষ ইস্পাতের তৈরি কাঠামোয় রাখা হয়। পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন অব চায়নার হুয়াতোং ইনজিনিয়ারিং কর্পারেশনের পাকিস্তান বায়ুশক্তি প্রকল্পের ম্যানেজার ডেনিস উত্তেজিত ও ব্যস্ত হয়ে নতুন দফা বায়ুশক্তি জেনারেটরের স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন।

 

করাচি বন্দর থেকে রওয়ানা দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রায় ২শ’ কিলোমিটার গেলে দেশটির সিন্ধু প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় গোবি মরুভূমিতে সারি সারি বায়ু টারবাইন জেনারেটরকে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেসব জেনারেটরে লাগানো ব্লেডগুলোকে বাতাসে ধীরে ধীরে ঘুরতেও দেখা যায়। একে পাকিস্তানের ‘বায়ু করিডোর’ বলে গণ্য করা হয়। বিশ্ব ব্যাংক প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানকার স্থানীয় গড় বাতাসের গতি সেকেন্ডে ৭ মিটারেরও বেশি এবং বায়ু বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের আদর্শ আবহাওয়া ও ভৌগলিক পরিবেশ রয়েছে সেখানে। তাই বায়ু শক্তি প্রকল্পের অন্যতম ‘সচল বায়ু বিদ্যুত্ কেন্দ্র’ এখানে অবস্থিত।

 

“এখানকার ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সবসময় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি থাকে। সবসময় প্রচণ্ড বাতাস বয়ে চলে এখানে। জমিতে মাঝেমাঝেই বালি এবং পাথর উড়ে। এরকম গোবি মরুভূমিতে নির্মাণকাজ করা কষ্টকর, তবুও আমরা হাল ছাড়িনি। গুণগতমান ও পরিমাণ উভয় ঠিক রেখে কাজটা সম্পন্ন করেছি।” শুরুর দিকে প্রকল্পটি নির্মাণের কষ্টকর স্মৃতি স্মরণ করে ম্যানেজার ডেনিস এসব কথা বলেন।

 

সচল বায়ু বিদ্যুত্ কেন্দ্র হচ্ছে চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর জ্বালানী সহযোগিতার মধ্যে ১৪টি অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর অন্যতম। পাওয়ার চায়নার হুয়াতোং ইনজিনিয়ারিং কর্পারেশন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। ২০১৭ সালে কেন্দ্রটি প্রথম বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়া চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর স্বাক্ষরিত প্রকল্পে পরিণত হয়ে বিদ্যুত উত্পাদন ক্ষমতা ৫০ হাজার কিলোওয়াটে দাঁড়ায়। “সবুজ জ্বালানী ক্ষেত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর গভীর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং চমত্কার নির্মাণ দক্ষতা পাকিস্তানের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে,” বলছিলেন ডেনিস।

 

দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তান বিদ্যুত্ সংকটের সম্মুখীন। যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ কাঠামোয় সচলসহ বেশ কিছু বায়ুশক্তি প্রকল্পের সফলতা দেশটির জন্য নতুন বিদ্যুত্ সম্পদ উদ্ভাবন করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় গ্রিড কর্পোরেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ দেশটির বায়ু শক্তির বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ১৩ লাখ ৩৬ হাজার কিলোওয়াটে পৌঁছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বায়ু শক্তির বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা পাকিস্তানের মোট বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতার ৮ শতাংশ দখল করবে।

 

বর্তমানে পাকিস্তানে পাওয়ার চায়নার হুয়াতোং ইনজিনিয়ারিং কর্পারেশন মোট ১০টি বায়ু শক্তি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে আরো ১২টি প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। জানা গেছে, সব প্রকল্প সম্পন্ন হলে মোট বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ১০ লাখ ৯০ হাজার কিলোওয়াটে পৌঁছাবে।

 

বায়ু বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের নির্মাণ পাকিস্তানের বিদ্যুত্ শক্তির অবকাঠামোর সার্বিক উন্নয়ন করেছে। দূষণমুক্ত জ্বালানীসম্পদ উন্নয়নে সক্ষমতা বাড়িয়েছে। বায়ু বিদ্যুত্ কেন্দ্রের বিদ্যুত্ উত্পাদন কার্যকারিতা অস্থিতিশীল বাতাস শক্তির ওপর নির্ভর করার কারণে বায়ু বিদ্যুত ব্যাপকভাবে বিদ্যুত্ নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার সময় বিদ্যুত্ নেটওয়ার্কের অবকাঠামোর মান ও অপারেশনাল সময়ের ক্ষমতা পরীক্ষায় সফল হয়েছে। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর অগ্রাধিকার প্রকল্প—পাকিস্তানের মাটিয়ারী–লাহোরের প্রায় ৬৬০ কিলোভোল্ট (কেভি) সরাসরি-কারেন্ট ট্রান্সমিশন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যিক অপারেশন চালু হয়। দেশটির জ্বালানী মন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্পটি দেশটির উত্তরাঞ্চলের সমৃদ্ধ পানি শক্তি এবং দক্ষিণাঞ্চলের বায়ু শক্তি ও ঐতিহ্যবাহী জ্বালানীকে সংযুক্ত করে, কার্যকরভাবে দূষণমুক্ত জ্বালানী বিদ্যুত্ উত্পাদন পর্যায়ক্রমিক বৈশিষ্ট্য ডেকে আনা অস্থিতিশীল বিদ্যুত্ সরবরাহ সমস্যা সমাধান করেছে।

 

“চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর পাকিস্তানের বায়ু শক্তি, সৌর শক্তিসহ বিভিন্ন দূষণমুক্ত জ্বালানী উন্নয়নের জন্য নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে।” পাক প্রধানমন্ত্রীর চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর-বিষয়ক বিশেষ সহকারী মনসুর বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, উচ্চমানের দূষণমুক্ত জ্বালানী প্রকল্পের নির্মাণ ও অপারেশন করে, দেশটির নিম্ন-কার্বন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

 

পাকিস্তানের চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত করিডোরের কাঠামোয় জ্বালানী প্রকল্পের মোট উত্পাদন ক্ষমতা ৫৩ লাখ ২০ হাজার কিলোওয়াটে পৌঁছায়। মনসুর বলেন, এসব বিদ্যুত উত্পাদন ক্ষমতা বাসিন্দাদের ও শিল্প বিদ্যুত্ সরবরাহ করছে।

 

তিনি আরো বলেন, দেশটির জ্বালানী সরবরাহ নিশ্চিত হবার সঙ্গে সঙ্গে চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের উচ্চমানের উন্নয়নের নতুন পর্যায় দেশটির শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি শিল্প মহলে বিদ্যুত্ ব্যবহারের চাহিদা সম্প্রসারণ করবে। ফলে আমদানি এবং রপ্তানির মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক রূপান্তর বাস্তবায়নের ক্ষমতাও বাড়বে।

 

তিনি জানান, চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডোরের কৃষকদের সহযোগিতা এবারের সরকারের অগ্রাধিকার বিষয়গুলোর অন্যতম। চীনের কৃষি উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ও সাফল্য থেকে শিক্ষা নিয়ে সেসব শিক্ষা কার্যকর করবে পাকিস্তান।

 

মনসুর বলেন, পাকিস্তান সরকার চীনসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান-স্টপ’ পরিষেবা প্রদান করে, বিদেশি ব্যবসায়ীদের দেশটিতে বিনিয়োগ করতে সুবিধা সৃষ্টি করে, প্রতিষ্ঠানের সময় ও মূল্য কমানোর চেষ্টা চালাবে।

 

 

প্রেমা/এনাম