জানুয়ারি ১৭: চীনের বসন্ত উত্সব আসন্ন। এ উপলক্ষ্যে দেশের রেলপথ বিভাগ যাত্রী পরিবহনে নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা ১৭ জানুয়ারি চালু হয়েছে, চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চীনের জাতীয় রেলপথ সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবছরই বসন্ত উত্সবের আগে-পরে কোটি কোটি যাত্রী পরিবহনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে চীনের রেলপথ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার যাত্রীদের বিশেষ ১০ ধরনের সুবিধা দেবে রেলপথ কর্তৃপক্ষ। এর উদ্দেশ্য, যাত্রীদের নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল ভ্রমণ নিশ্চিত করা।
এক. স্বাভাবিকভাবেই এবার যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। রেলপথের পরিবহনক্ষমতা এবার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এবার রেলের পরিবহনক্ষমতা কমে যাবে। এবার প্রতিদিন চীনের ট্রেনগুলো ১ কোটি ৫ লাখেরও বেশি যাত্রী বহন করবে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। যাত্রীদের চাহিদা ও মহামারী নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে এবার। আবার আকস্মিকভাবে কোনো অঞ্চলে মহামারীর নতুন ঢেউ দেখা গেলে জরুরি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করেও দেওয়া হতে পারে। তখন স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট রুটে যাত্রী পরিবহন কমে যাবে।
দুই. এবার যাত্রীরা তুলনামূলকভাবে আরও সহজে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। ১২৩০৬ ওয়েবসাইটে টিকিট ক্রয় ও ফেরত দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টিকিট ক্রয়-বিক্রয় চলতো। এখন নতুন নিয়মে ভোর ৫টা থেকে মধ্যরাত ১টা পর্যন্ত টিকিট ক্রয়-বিক্রয় চলবে (প্রত্যেক সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া)।
তিন. এবার যাত্রীদের জরুরি ভ্রমণের চাহিদা মেটাতে অস্থায়ী ইলেকট্রনিক আইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো যাত্রীর আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়ে থাকে, তবে তিনি ১২৩০৬ নম্বরে ফোন করে অস্থায়ী ইলেকট্রনিক পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ধরনের আবেদনের জন্য স্টেশনে যাওয়ার দরকার হবে না।
চার. বয়স্ক যাত্রীদের ভ্রমণ সহজতর করতে এবার বিদ্যমান ব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। বয়স্ক, ইন্টারনেট ব্যবহারে অক্ষম বা প্রতিবন্ধীদের জন্য অনলাইন ও অফলাইনে বিশেষ সেবা দেওয়া হবে। বয়স্করা ১২৩০৬ নম্বরে নিজের মোবাইল থেকে ফোন করলে বিশেষ সুবিধা পাবেন; তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারে অক্ষম ব্যক্তিরা সরাসরি কেন্দ্র থেকে টিকিট ক্রয়ের সুবিধা পাবেন।
পাঁচ. এবার বিভিন্ন রেলস্টেশনে স্ব-পরিষেবা সরঞ্জামের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে; স্টেশনে প্রবেশের জন্য সবুজ চ্যানেল সৃষ্টি করা হয়েছে। খাবারের অর্ডার দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার, ট্রেনে বসে উইচ্যাটে খাবারের অর্ডার দেওয়া, এবং অর্ডারকৃত খাবার ট্রেনে বসেই হাতে পাওয়ার সেবা পাচ্ছেন যাত্রীরা।
ছয়. যাত্রাপথে যাত্রীদের স্থানান্তর পরিষেবার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। স্থানান্তর পরিষেবা প্রদানকারী স্টেশনের সংখ্যা ৭৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০টি করা হয়েছে।
সাত. টিকিটের দাম কমানো হয়েছে। কোনো কোনো ট্রেনের টিকিটে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবেন যাত্রীরা। আর নিয়মিত-গতির যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ন্যূনতম ২০ শতাংশ ছাড় থাকবে।
আট. দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মানুষের যাতায়াত নিশ্চিত করতে উচ্চমানের ‘ধীরগতির ট্রেন’ চালানো হবে এবারও। বসন্ত উত্সবের পরিবহনকাজে জনকল্যাণের কথা ভেবে পর্যাপ্ত ‘ধীরগতির ট্রেন’ চলবে।
নয়. শিক্ষার্থী ও অভিবাসী শ্রমিকদের গ্রুপ-ভ্রমণের জন্য ‘পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট’ বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। বর্তমানে চীনের শান’সি প্রদেশে ছাত্রছাত্রীদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার সুবিধার্থে ১৪টি বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে।
দশ. বসন্ত উত্সবের ছুটির মধ্যেই এবার বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস শুরু হতে যাচ্ছে। তাই ৪০ জোড়া বিশেষ শীতকালীন অলিম্পিক ট্রেন সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোর মধ্যে চলাচল করবে। উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে বিশেষ ট্রেনলাইনও চালু হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)