১.ঢাবির শীর্ষপদে নারী আসবেন আশা রাখি : অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর
২. নারীশিল্পীর চোখে আভিজাত্য ও প্রশান্তি
৩. গান: শিল্পী সাই সিন চুয়ান
৪. বেইজিং অলিম্পিকের ফুল বানাচ্ছেন লি মেইলি
৫. বিশ্বের সেরা দশ ব্যবসায়ী নারী
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।
বাংলাদেশের প্রধান বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠান চলছে সম্প্রতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় নারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই প্রসঙ্গে আজ আমরা কথা বলবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দা লাসনা কবীরের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
সৈয়দা লাসনা কবীর দুই প্রজন্ম ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার মা বাবা দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। লাসনা কবীরের মা ড. রাবেয়া খাতুন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং একজন মেধাবী ও দৃঢ়চেতা শিক্ষক হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ড. রাবেয়া খাতুন ও তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন এবং যুদ্ধের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূতিতে লাসনা কবীর গৌরব বোধ করছেন।
লাসনা কবীরের ছোটবেলা কেটেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায়। তিনি নিজে লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীসহ অনার্স ও মাস্টার্স করেন। তিনি এই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে জানালেন তিনি। অনেক বিভাগে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ভালো ফলাফল করছেন। তবে গবেষণামূলক কাজে অগ্রগতি কম বলে জানালেন তিনি। এর একটি কারণ ফান্ডের অভাব। বিদেশের উদাহরণ তুলে ধরে লাসনা বলেন, অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা, পাবলিকেশনস ইত্যাদি না থাকলে চাকরিতে উন্নতি হয় না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোন নীতিমালা নেই। ফলে শিক্ষকদের জন্য গবেষণা বাধ্যতামূলক নয়। এ কারণেও অনেক সময় রিসার্চে অনেকে আগ্রহী হন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে এখনও কোন নারীকে উপাচার্য পদে দেখা যায়নি। তবে প্রোভিসি হিসেবে নারীকে দেখা গেছে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নারী আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কর্মদক্ষ ও নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন নারী আছেন। সেদিন হয়তো আর দূরে নয়, যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেও নারী নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাবির শীর্ষপদে নারী আসবেন আশা রাখি’।তবে এজন্য প্রয়োজন জেন্ডার সচেতন নীতিমালা গড়ে তোলা। অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর শুধু নারী বান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় নয়, নারীবান্ধব সমাজ ও দেশ প্রত্যাশা করেন।
নারী শিল্পীর চোখে অভিজাত্য ও প্রশান্তি
চীনের প্রখ্যাত নারী শিল্পী ওয়েন ওয়েই এর সাম্প্রতিক শিল্প প্রদর্শনী দর্শকদের বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই শিল্পীর প্রদর্শনীর খবর রয়েছে প্রতিবেদনে।
চীনের প্রখ্যাত নারী চিত্রশিল্পী ওয়েন ওয়েই। তাঁর তুলিতে ফুটে ওঠে নারী ও প্রকৃতির ভিন্ন রকম রূপ। বেইজিংয়ের রোং বাও চাইতে ১ থেকে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ওয়েন ওয়েই ৬০টি চিত্রকর্ম নিয়ে একটি শিল্প প্রদর্শনী।
চীনের ঐতিহ্যবাহী মাউন্টেইন অ্যান্ড ওয়াটার পেইন্টিংসের ক্লাসিকাল সিয়েই স্টাইলে আঁকা তার ছবিগুলোতে ক্যালিগ্রাফি ও দরবারী নারীদের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হযেছে।
প্রাচীন চীনা পাণ্ডুলিপির অনুসরণে শিল্পী ওয়েন ওয়েই যে পেইন্টিংগুলো করেছেন তা তার দক্ষতা ও নৈপুণ্যের পরিচয়বাহী। এগুলো সমালোচকদের উচ্চ প্রশংসাও কুড়িয়েছে।শিল্পকর্মগুলোতে প্রাচীন চীনা দর্শনের ছোঁয়াও রয়েছে।
এই শিল্প প্রদর্শনীর মাধ্যমে চীনের নারী শিল্পী ওয়েন ওয়েইর পেইন্টিংয়ের সুনাম আরও বেশি করে শিল্পবোদ্ধাদের আলোচনায় এসেছে।
গান: শিল্পী সাই সিন চুয়ান
চীনের প্রখ্যাত শিল্পী সাই সিন চুয়ান। ১৯৬৬ সালে জন্ম নেয়া এই শিল্পী ১৪ বছর বয়সেই সংগীত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তার সুললিত কণ্ঠের জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এই শিল্পীর কণ্ঠে এখন শুনবো চীনের একটি বিখ্যাত লোকজ গান সুয়ে হুয়া ফিয়াও ফিয়াও।যার মানে তুষার কণা ভেসে যায়। এই গানে সত্যিকারের ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। প্লাম ব্লোজম ফুলের মতো ভালোবাসা প্রস্ফুটিত হয়। তৃণভূমির মতো প্রসারিত হয়। সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময় অমলিন থাকে এই কথাটি তুলে ধরা হয়েছে।
বেইজিং অলিম্পিকের ফুল বানাচ্ছেন লি মেইলি
আসন্ন বেইজিং অলিম্পিক্সে ফুলের তোড়া বা বুকেগুলো হবে অন্যান্য অলিম্পিক্স থেকে একদম আলাদা। বেইজিং অলিম্পিকে সত্যিকারের ফুলের পরিবর্তে উলের ফুল দেয়া হবে। এমন তোড়া বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে আয়োজক কমিটি জানিয়েছেন, এই ফুলের তোড়া কখনও শুকিয়ে যাবে না, এতে কম কার্বোনের বৈশিষ্ট্য থাকবে এবং এগুলো ‘সবুজ অলিম্পিক’ এর প্রতীক হবে।
এগুলো বোনা হচ্ছে একজন নারী শিল্পীর ডিজাইনে। এই শিল্পীর নাম লি মেইলি।
অলিম্পিকের তোড়াতে গোলাপ, লিলি, ওসমানথাস, সবুজ জলপাইসহ সাত রকম ফুল থাকবে।
এই ফুল বুননের দায়িত্ব পেয়েছেন ফুল বুননে এক্সপার্ট হিসেবে পরিচিত সত্তর বয়সী নারী লি মেইলি। ঐতিহ্যবাহী সাংহাই উল বুনন কৌশলের উত্তরাধিকারী লি মেইলি। পঞ্চাশ বছর বয়সের পর উলের ফুল বোনার কৌশল শেখেন লি। চতুর্থ চায়না ইন্টার ন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপো এবং ১০ম চায়না ফ্লাওয়ার এক্সপোতে তার বোনা ফুল দারুণভাবে প্রশংসিত হয়।
অলিম্পিক আসরে তার ফুল গ্রহণ করা হবে এই সৌভাগ্যের কথা তিনি প্রথম জানতে পারেন ২০২১ সালের অক্টোবরে।
লি বলেন , আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। আমার ডিজাইন স্কিমটি আয়োজক কমিটি চার মাসের বেশি সময় নিয়ে পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময় আমি অনুভব করি আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’
অলিম্পিক আসরের জন্য প্রয়োজন হবে ১২৫১টি তোড়া। একটি তোড়া সম্পূর্ণ করতে ৩৫ ঘন্টা সময় লাগে। সমস্ত তোড়া বুনতে সময় লেগেছে ৫০ হাজার ঘন্টা।
লি মেইলির ডিজাইনে ফুল বুননের দায়িত্ব পালন করছে হংইয়ানসিয়াং গ্রুপ। সাংহাইভিত্তিক উল প্রস্তুতকারক এই কোম্পানি বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের অন্যতম সরকারী স্পন্সর।
বিশ্বের সেরা আট ব্যবসায়ী নারী
ব্যবসাক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বে নারীরা এগিয়ে চলেছেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। তারা ক্ষমতাও অর্জন করছেন এবং শীর্ষ পদগুলোতেও পৌছুতে পারছেন।
ব্যবসা ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের একটি আন্তর্জাতিক তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ফরচুন ম্যাগাজিন। এই তালিকায় দেখা গেছে ব্যবসাক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হলেন এমা ওয়ামসলি। তিনি গ্ল্যাক্সো স্মিক্লাইন কোম্পানির সিইও।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন পিং আন ইনসিওরেন্স কোম্পানির সিইও জেসিকা ট্যান। তৃতীয় হলেন, স্প্যানিশ ব্যাংক স্যানট্যানডারের এক্সিকিউটিভ চেয়ার ওমেন আনা বোটিন। চতুর্থ শেমারা উইক্রামানাইয়াকি যিনি ম্যাককুয়ার গ্রুপের সিইওি।
পঞ্চম হলেন এনজি কোম্পানির সিইও ক্যাথেরিন ম্যাকগ্রেগর। ষষ্ঠ অবস্থানে আছেন বেলেন গারিজো যিনি মার্ক কেজিএ’র প্রধান নির্বাহী।চীনের বিজনেস ওম্যান তং মিংচু আছেন সপ্তম স্থানে যিনি গ্রি ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানের চেয়ারওম্যান।
অষ্টম হলেন অ্যামান্ডা ব্লাংক । তিনি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইনসিওরেন্স গ্রুপ আভিভার সিইও।
সুপ্রিয় শ্রোতা, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
প্রতিবেদন লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী