জানুয়ারি ১৪: গত ২৩ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘উইগুর বাধ্যতামূলক শ্রম প্রতিরোধ বিলটি’ আইনে পরিণত করেছে। এই আইনে বাস্তবতা উপেক্ষা করে চীনের সিনচিয়াংয়ের শ্রম পরিস্থিতির বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হয়েছে, সিনচিয়াংয়ের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, সিনচিয়াংয়ের শিল্পে আঘাত করা হয়েছে। পাশাপাশি সিনচিয়াংয়ের উন্নয়ন ঠেকাতে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারের হস্তক্ষেপ করা হয়েছে এবং সিনচিয়াং দিয়ে চীনকে প্রতিরোধ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। যা চীনা জনগণ এবং বিশ্বের ন্যায়সঙ্গত দেশগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ তথাকথিত ‘উইগুর বাধ্যতামূলক শ্রম প্রতিরোধ প্রস্তাবের’ আসল উদ্দেশ্য অবহিত করেছেন।
সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকারের মুখপাত্র সুই কুই সিয়াং এদিন আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে, আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে, কোনো বাস্তব প্রমাণ ছাড়াই, তথাকথিত ‘উইগুর বাধ্যতামূলক শ্রম প্রতিরোধ প্রস্তাব’ প্রণয়ন করেছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব আইন দিয়ে সিনচিয়াংয়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়েছে। এই আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির রাজনীতি এবং আধিপত্যবাদের প্রতিফলন। যা মানবজাতির আইনসঙ্গত চেতনার পদদলন।
সুই কুই সিয়াং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্যে কোনোভাবেই সিনচিয়াংয়ে উইগুর জাতির জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা নয়, বরং সিনচিয়ায়ে জোর করে ‘বেকারত্ব’ ও ‘দারিদ্র্য’ তৈরি করা। যুক্তরাষ্ট্র উইগুর জাতিসহ চীনের বিভিন্ন জাতির জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, সিনচিয়াংয়ের নিরাপত্তা ও সহাবস্থানের সুষ্ঠু অবস্থা নষ্ট করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, তথাকথিত আইনটি একটি ‘খারাপ আইন’।
জাপানের কেইও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিরোশি ওনিশি সিনচিয়াংয়ের কাশগারে গিয়ে কর্মসংস্থানের অবস্থা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, বাস্তব তদন্ত থেকে জানা গেছে, শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে সিনচিয়াং থেকে সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় গেছে—বিষয়টি তেমন নয়। বরং স্থানীয় জনগণ আরও ভালো জীবনযাপনের পরিবেশ লাভের জন্য সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থান খুঁজতে গেছে।
তিনি বলেন, তখন তিনি স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, স্থানান্তর ও কাজের বিষয়টি কি স্বেচ্ছায় করেছে কিনা। তারা জানিয়েছেন, অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ করে জীবনের মান উন্নত করা যায়। এটি কোনো বাধ্যতামূলক কাজ নয়, সবাই এমন সুযোগ পেয়ে আনন্দিত।
সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ইন্সটিটিউটের উপ-প্রফেসর আলিম সাতার বলেন, তথাকথিত ‘বাধ্যতামূলক শ্রম’ মানে, কোনো ব্যক্তি যদি দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে শাস্তি হিসেবে তাকে নির্দিষ্ট কাজ করতে দেওয়া। সেই কাজ নিজের ইচ্ছায় নয়। তিনি বলেন, সিনচিয়াংয়ের অবস্থা মার্কিন আইনে ‘বাধ্যতামূলক শ্রম’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একটি ভুল কথা।
তিনি বলেন, উল্লেখ করতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি করা তথাকথিত ‘বাধ্যতামূলক শ্রমের’ কোনো ভিত্তি চীনে নেই। চীনের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের নাগরিকদের শ্রমের অধিকার আছে। উইগুর জাতিসহ চীনের সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির লোকজনকে রক্ষা করছে চীনের বিভিন্ন আইন। যা যুক্তরাষ্ট্রের দাবি করা ‘বাধ্যতামূলক শ্রমের’ সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। সিনচিয়াংয়ে কোনো ‘বাধ্যতামূলক শ্রম’ সমস্যা নেই।
সিনচিয়াং নর্মাল ইউনিভার্সিটির আইন ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ছেন থুং বলেন, সিনচিয়াংয়ে সংখ্যালঘু জাতির বিরুদ্ধে ‘বড় আকারের বাধ্যতামূলক শ্রমের’ মিথ্যাচার আসলে সিনচিয়াংয়ের কর্মসংস্থান খাতের পদদলন ও অপবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো সিনচিয়াংয়ের জনগণের সুখী জীবন নষ্ট করা এবং চীনের উন্নয়ন প্রতিরোধ করা।
তিনি বলেন, তিনি সিনচিয়াংয়ে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাদান করেছেন। তিনি সিনচিয়াংয়ের কর্মসংস্থান এবং শ্রমিক প্রয়োগের অবস্থা সম্পর্কে খুব ভালো জানেন। তিনি খুব স্পষ্টভাবে জানেন যে, সিনচিয়াংয়ে বাধ্যতামূলক শ্রমের কোনো অস্তিত্ব নেই। সিনচিয়াং সবসময় শ্রমিকের ইচ্ছাকে সম্মান করে এবং কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট সেবা দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যাতে ব্যাপক শ্রমিক স্বেচ্ছায় ও আনন্দের সঙ্গে কাজ ও জীবনযাপন করতে পারে। সিনচিয়াংয়ে কর্মসংস্থান জনগণের কল্যাণকর প্রকল্পের অংশ। যা টেকসই কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ জোরদার করে, কর্মসংস্থানের হার বাড়ায়, বিভিন্ন জাতির মানুষের অধিকার রক্ষা করে এবং জীবনের মান আরও উন্নত করে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)