৭০ বছরে ঊষর ভূমিকে সবুজে রূপান্তর
2022-01-14 11:08:54

বন্ধুরা, ঊষর-ভূমিতে মানুষ বসবাস করতে পারে? এ অবস্থায় প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে মানুষ কি বিজয়ী হতে পারে? আজকে সানসি প্রদেশের ইউইয়ু জেলার গল্প বলব। ইউইয়ু জেলা এমন একটি জায়গা, সেখানে জনসাধারণের জীবনযাত্রার বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে; তাদের রুক্ষ প্রকৃতি একেবারে বদলে গেছে। কিন্তু কীভাবে?

 

১৯৮৯ সালের শরত্কালে ২৩ বছর ইয়ু সিয়াও লান স্বামীর সঙ্গে ঊষর-ভূমি হিসেবে পরিচিত ইউ ইয়ু জেলায় যান।

ইয়ু সিয়াও লান তখনকার কথা স্মরণ করে বলেন, প্রথম অনুভূতিটি ছিল বিস্ময়কর। সে বছর আমি প্রথম আমার স্বামীর গ্রামে যাই। যাওয়ার পথে আমার মনে হচ্ছিল, সে যেন আমাকে অন্য এক দুনিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। তখন ছিল শরত্কাল, সবখানে হলুদ রঙের ছড়াছড়ি।  আমি স্বামীকে জিজ্ঞেস করি, তোমার গ্রাম কোথায়? আমরা সেই পথে শুধু হাঁটছি আর হাঁটছি। স্বামী সামনে দেখিয়ে বলে: এই তো ওখানেই আমাদের গ্রাম। আমি ভালোভাবে দেখলাম: শুধু অনেক হলুদ মাটির ঢিপি, এটা কেমন গ্রাম? অবিশ্বাস্য! গ্রামে দশ-বারো জন আছে, আমাকে বাড়িতে ঢোকার কথা বলা হলো, তখন আমার মনে হলো, এমন বাড়িতে কি মানুষ বাস করে?

 

এটাই ছিল অতীতে ইউ ইয়ু জেলার প্রকৃত অবস্থা। ইউ ইয়ু জেলা চীনের মাও উ সু মরুভূমির প্রান্তসীমায় অবস্থিত। সেখানে জমি ছিল মরুভূমির মতো। প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল অনেক খারাপ।

এ অবস্থায় প্রকৃতির কাছে নতি স্বীকার করবে? নাকি লড়াই করবে? ১৯৪৯ সালে ইউ ইয়ু জেলার প্রথম সিপিসি শাখা সম্পাদক চাং হুয়াই রুং দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পুরো আকাশের হলুদ বালি তাকে স্বাগত জানায়। জনগণ বাধ্য হয়ে অন্য প্রদেশে পালিয়ে যেতো দেখে তিনি খুব মর্মাহত হন। তাই তিনি মরুকরণ প্রতিরোধের জন্য পুরো ইউ ইয়ু জেলা পা দিয়ে মাপেন। এই কাজ করতে তার চার মাস সময় লাগে। একদিন গভীর পাহাড়ি এলাকায় তিনি সবুজ গাছ দেখতে পান। এতে তিনি মরুকরণ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে পান। কৃষকরা বলেন যে, গাছ রক্ষায় শস্যের পরিমাণ অন্য জায়গার চেয়ে বেশি হতে পারে।

 

জেলায় ফিরে চাং হুয়াই রুং জরাজীর্ণ কার্যালয়ে কিছু কথা লিখেন: ইউ ইয়ুতে মানুষ জীবিত থাকতে চাইলে, গাছ লাগাতে হবে। তিনি জেলার সম্মেলনে বলেন: বাতাস ও বালি বন্ধ করতে চাইলে, বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। প্রত্যেক পরিবারকে ধনী হতে চাইলে অন্তত প্রতি জনকে দশটি গাছ বড় করতে হবে।

সম্মেলন পর তিনি জেলার সব কর্মকর্তাদের নিয়ে স্থানীয় ছাং থৌ নদীর পাশে গিয়ে দশটি গাছ লাগান। তখন থেকে ইউ ইয়ু মানুষদের ৭০ বছরের স্থায়ী সবুজায়ন প্রকল্প শুরু হয়।

ইউ ইয়ু জেলার থৌ সুই ছুয়ান গ্রামের বাসিন্দা ওয়াং মিং হুয়া বলেন, ছোটবেলায় আমরা গাছ লাগাতে অভ্যস্ত ছিলাম। তাই কঠিনতা ও ক্লান্তিতে ভয় পেতাম না। প্রত্যেক বসন্তকালে গাছ লাগাতাম, শীতকালে পানি দিতাম। দুপুর হলেও আমরা বাসায় যেতাম না, পথের পাশে বসে কিছু খাবার খেয়ে আবার কাজ করতাম।

বংশ পরম্পরায় ইউ ইয়ু মানুষের চেষ্টায় ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে ইউ ইয়ু জেলা সফলভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়। এখন ইউ ইয়ুর বনভূমির আয়তন আগের ০.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশে। প্রায় দুই হাজার বর্গকিলোমিটার ঊষর-জমি এবং বিস্ময়করভাবে সবুজের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

 

ইয়ু সিয়াও লান ইউ ইয়ু জেলার বৃক্ষরোপণকারী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। ১৯৯২ সাল থেকে এই পর্যন্ত তিনি ছয় শতাধিক হেক্টর ঊষর পাহাড়ি এলাকা ঠিকা নেন। তিনি বলেন, আমি আমার দ্বিতীয় জন্মস্থানকে সুন্দর করতে চাই। কঠিন কাজ হলেও সবুজায়ন বন্ধ করবো না। এখন আমার এই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, ইউ ইয়ুর প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন খুব সুন্দর। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক কাজ ভালোভাবে করবো। যেমন, কৃষক পরিবারে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানো, মাছ ধরার ব্যবস্থা করা, অথবা ফল বাগান তৈরি করা। যাতে এখানে পর্যটকরা এসে সময় কাটাতে পারে।

২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ের গণ-মহাভবনে এক আলোচনা সভায় সবার কাছে ইউ ইয়ু জেলার গল্প বলেন। তিনি জেলা কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে মরুকরণ প্রতিরোধ করা এবং বৃক্ষরোপণের গল্প তুলে ধরেন। তিনি সবাইকে অব্যাহতভাবে জনগণের সেবা করার নির্দেশনা দেন।