২০২১ সালে চীনের চলচ্চিত্র
2022-01-13 09:48:31

২০২১ সালে চীনা চলচ্চিত্রের বক্সঅফিস ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলো এবং চলচ্চিত্র শিল্পে শক্তিশালী সক্ষমতা দেখা দিয়েছিল।

পহেলা জানুয়ারি চীনের জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরোর প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালে চীনের চলচ্চিত্রের মোট বক্সঅফিসের আয় হয় ৪ হাজার ৭শ ২৫ কোটি ৮০ লাখ ইউয়ান এবং এর মধ্যে চীনা চলচ্চিত্রের বক্সঅফিসের আয় হয় ৩ হাজার ৯শ ৯২ কোটি ৭০ লাখ ইউয়ান। যা বক্সঅফিসের মোট আয়ের ৮৪.৪৯ শতাংশ। সারা বছর বক্সঅফিস অব্যাহতভাবে বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল।

 

‘Hi, Mom’  নামের চলচ্চিত্রে মাতৃ প্রেমের উষ্ণতা বর্ণনা করা হয়েছে, ‘My Country, My Parents’ চলচ্চিত্রে পিতামাতার প্রজন্মের নিঃস্বার্থ উৎসর্গের প্রশংসা করা হয়েছে, ‘Chinese Doctors’ নামে চলচ্চিত্রে নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর চিকিত্সকদের পরিশ্রম এবং ‘The Battle at Lake Changjin’ নামের চলচ্চিত্র মার্কিন হামলা প্রতিরোধ ও উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য দানের চেতনা ফুটে উঠেছে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বিভিন্ন শিল্পকর্মের মাধ্যমে যুগের চেতনা প্রতিফলন করেছেন, চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের দ্রুত পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন এগিয়ে নিয়েছেন, ব্যাপক মানুষের পার্টি ও দেশপ্রেমের উত্সাহ চাঙ্গা করেছেন এবং সিপিসি’র শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

 

শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের মাধ্যমে বক্স অফিসে ভালো ফলাফল অর্জন ছিলো গত বছর চীনের চলচ্চিত্র বাজারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিগত বছর চীনে মোট ৫৬৫টি ফিচার ফিল্ম তৈরি হয়। সারা বছর বক্সঅফিসের আয়ে প্রথম দশটি চলচ্চিত্রের মধ্যে ৮টি হলো দেশীয় চলচ্চিত্র। এর মধ্যে  ‘The Battle at Lake Changjin’ এবং ‘Hi, Mom’--এই দু’টি চলচ্চিত্র চীনা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বক্সঅফিসের প্রথম তিনটি স্থান দখল করে।

 

২০২১ সালের জাতীয় দিবসের ছুটিতে প্রদর্শিত ‘The Battle at Lake Changjin’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় দিবসের ছুটির সময় বক্সঅফিসে রেকর্ড সৃষ্টি করার পর অবশেষে ২০২১ সালের শেষ দিকে  ৫৭৭.২ কোটি ইউয়ান আয় করে। এতে চীনা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বক্সঅফিসের চ্যাম্পিয়ন হয় চলচ্চিত্রটি। ‘Hi, Mom’ নামে চলচ্চিত্রটি বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় প্রদর্শিত হয় এবং অবশেষে ৫৪০ কোটি ইউয়ান আয় করে বক্সঅফিসে তৃতীয় স্থান দখল করে।

 

উল্লেখিত দু’টি চলচ্চিত্র ছাড়া, ‘১৯২১’, ‘বিপ্লবী’, ‘Cliff Walkers’ এবং ‘সিস্টার’সহ অন্য ধরনের চলচ্চিত্র বক্স অফিসে খুব ভালো সাফল্য অর্জন করেছিল। এতে চীনের চলচ্চিত্র রচনার বৈশিষ্ট্যময় থিম এবং চলচ্চিত্র বাজারের বিশাল সম্ভাব্য শক্তি প্রতিফলিত হয়।

তা ছাড়া, পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালে চীনে নতুন করে ৬৬৬৭টি স্ক্রিন তৈরি হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে স্ক্রিনের মোট সংখ্যা ৮২২৪৮টিতে দাঁড়িয়েছে। স্ক্রিনের সংখ্যার দিক থেকেও বিশ্বের প্রথম দেশ চীন।

 

২০২১ সালে চীনের চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা মহামারীসহ বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ‘চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনার’ ভালো সূচনা করে।

গত বছর চীনের চলচ্চিত্র বাজারের ওপর দৃষ্টি দিলে আমরা দেখি যে, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দিবসের ছুটিতে মূল ধারার চলচ্চিত্রগুলো খুব ভালো পারফরমেন্স করে।

মূলধারার নতুন সিনেমাগুলো সময়ের চেতনা এবং জনপ্রিয় শৈলীকে একত্রিত করে গত বছর দেশীয় চলচ্চিত্র বাজারের প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে। এসব ফিল্মের থিম ও প্রযোজনা প্রযুক্তি উদ্ভাবন অব্যাহত রেখেছে। ধীরে ধীরে মূল ধারার ফিল্ম এবং বাণিজ্য মজবুত হয় এবং তা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ ও প্রশংসা কুড়ায়।

 

সৃজনশীল অভিব্যক্তি এবং বৈচিত্র্যময় উন্নয়ন সাধন মূলধারার চলচ্চিত্রের দর্শক- বিশেষ করে তরুণ দর্শকদের কাছাকাছি গিয়েছে। স্পাই ফিল্ম, অ্যাকশন ফিল্ম, ডিজাস্টার ফিল্ম, সাসপেন্স ফিল্ম... মূলধারার নতুন ফিল্মের ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যময় থিম ও শৈলী বিভিন্ন বয়সের দর্শকদের থিয়েটারে টেনে নিয়ে যায়।

 

চায়না ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন একাডেমির অধ্যাপক ইন হোং বলেন, ব্যক্তি থেকে শুরু করে শক্তিশালী ধারা, ওডিটোরি সেন্সের উপর জোর দেওয়া হলো মূলধারার নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণের মৌলিক নিয়ম। শুধুমাত্র এই ধরনের নিয়মের অধীনে তৈরি চীনা চলচ্চিত্রের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সংযোগে অগ্রগতি হবে।

 

২০২১ সালে দুর্দান্ত যুদ্ধের দৃশ্য তৈরি থেকে শুরু করে বিদেশে শুটিং করা পর্যন্ত, চীনা চলচ্চিত্রগুলোতে ২০২১ সালে একটি মর্মান্তিক ‘ব্লকবাস্টার অনুভূতি’ উপস্থাপন করেছে।

‘The Battle at Lake Changjin’ চলচ্চিত্রকে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চলচ্চিত্রে যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ দৃশ্যগুলোকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়। শুটিং থেকে সম্পাদনা পর্যন্ত চলচ্চিত্রের কর্মকর্তাদের সংখ্যা ১২ হাজারে হয়েছে।

 

আরেকটি চলচ্চিত্র ‘১৯২১’। এটি ব্যাপক হাই-টেক প্রযুক্তি দিয়ে এডিট করা হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রের সহ-পরিচালক চেং তা শেং বলেন, মহামারীর কারণে ইউরোপে গিয়ে চলচ্চিত্রটির শুটিং করা সম্ভব হয় নি। তাই শাংহাইয়ে উচ্চ-প্রযুক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ দৃশ্য দেখানো হয়।

চমকপ্রদ বক্স অফিস, থিমের বৈচিত্র্য এবং চলচ্চিত্র শিল্পের ক্রমাগত উন্নয়নের স্তর, বিগত বছর আমার দেশের বড় পর্দা দুর্দান্ত ও রঙিন হয়েছে।

 

‘কার্যকরভাবে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে, ‘২০২১ সালে আমার দেশীয় চলচ্চিত্রের বক্স অফিস পারফরম্যান্স চমৎকার হয়েছে বলে মনে করা হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের বাজারের সত্তা, নির্মাতা এবং দর্শক গোষ্ঠী ক্রমশই পরিণত হয়ে উঠেছে। চলচ্চিত্র শিল্প উচ্চ-মানের উন্নয়নের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে।’ শাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাংহাই ফিল্ম একাডেমির অধ্যাপক লিউ হাইপো এভাবেই বলছিলেন।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)