২০২২ বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পূর্বাভাস
2022-01-12 14:22:01


 

ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের নতুন নতুন প্রজাতির বিশ্বব্যাপী আক্রমনের মধ্য দিয়ে আমরা ২০২২ সালে প্রবেশ করেছি। সবাই নতুন বছরে করোনা মহামারি শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে না পারলেও এই বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে  অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটবে। চীনের স্পেসস্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে, যুক্তরাষ্ট্র প্রোব গ্রহাণুতে পৌঁছাবে, ইউরোপ মঙ্গল রোভার উত্ক্ষেপন করবে, এবং মহাকাশে নানা কর্তব্য অবহ্যাত রাখবে। জাতিসংঘের জীব বৈচিত্র সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলে পৌঁছাবে। কয়েকটি বড় আকারের যন্ত্র পুনরুদ্ধারের সাথে সাথে পদার্থবিদ্যায় নতুন সফলতা অর্জিত হবে। মেটাভার্স নতুন বছরে ব্যাপকভাবে আলোচিত হবে।

 

নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাস বিশ্বের জন্য অভিন্ন হুমকি। ওমিক্রন গেল দুমাসে বিশ্বের শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয় না, তবে এ ভাইরাস অত্যন্ত বেশি সংক্রামক বলে সহজে চিকিত্সা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। পাশাপাশি, এ ভাইরাস কোনো কোনো দেশের নিষ্ক্রিয় মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিশ্বের মহামারি মোকাবিলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কি-না? এই প্রশ্ন জোরালো করেছে। ভবিষ্যতে আরও বেশি ভয়াবহ প্রজাতির করোনাভাইরাসের উদ্ভব, এবং মহামারি অবশেষে এক ধরনের ফ্লুতে পরিণত হবে কি-না? এমন প্রশ্ন এখনই সর্বত্র ঘোরপাক খাচ্ছে।

মহামারি মোকাবিলায় টিকা কার্যকর একটি অস্ত্র। তবে এ পর্যন্ত বিশ্বর ৪০ শতাংশ লোক কোন টিকা গ্রহণ করেনি। টিকাদানের এই শূন্যতা পূরণ করা কঠোর ও কঠিন একটি কাজ এবং উন্নত দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। পাশপাশি, ভাইরাসের বিবর্তনের মোকাবিলায় নতুন ধরনের টিকার গবেষণা কাজও দ্রুত চলছে। অনুনাসিক স্প্রে, ওরাল ভ্যাকসিনসহ নতুন ধরনের নানা টিকাও বাজারে আসবে। কোন কোন বিশেষজ্ঞ সার্বজনীন টিকা নিয়েও গবেষণা করছেন।

 

সম্প্রতি দেশ-বিদেশের নতুন করোনা ওষুধের জরুরি ব্যবহার ও বাজারে বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে। ওষুধের সাহাজ্যে গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। মৌখিক ওষুধ উন্নয়নশীল দেশের জন্য সহজলভ্য, তাই এটি বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

 

মানবজাতির উন্নয়ন ইতিহাস দেখে বোঝা যায়, রোগের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করার শাক্তিশালি অস্ত্র হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। টিকা ও ওষুধের  সাহায্যে সহযোগিতা, এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করলে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ২০২২ সালে আমাদেরকে এ মহামারি শেষ করতে হবে। তা ছাড়া, ম্যালেরিয়া, এবং এইডসের বিরুদ্ধে টিকা গবেষণায় নতুন অগ্রগতি অর্জতি হবে নতুন বছরে।

 

কেউ কেউ ২০২১ সালকে মহাকাশ ভ্রমণের সূচনা বছর হিসেবে বিবেচনা করেন। বছরজুড়ে কিছু বিলিয়নেয়ার মহাকাশে পৃথিবী থেকে ১০০ কিলোমিটার উপকক্ষীয় কক্ষপথের ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। কেউ কেউ উচ্চ দামের আন্তর্জাতিক স্পেসস্টশেন ভ্রমণ করেছেন। এমনকি চিত্রগ্রহণ দল স্পেসে চলচ্চিত্র শুটিং করেছে।

 

চলতি বছরে আরও বেশি সাধারণ মানুষ মহাকাশে যাবে। বৃটিশ দ্য ইকোনমিস্ট উইকলির একটি প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২২ সালে আরও বেশি মানুষ নিজের খরচে মহাকাশ ভ্রমণ করবেন এবং তাদের সংখ্যা সম্ভবত সরকারি মহাকাশচারীর সংখ্যার চেয়ে বেশি হবে।

 

বর্তমানে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটিশ কয়েকটি কোম্পানি মহাকাশ ভ্রমণের সেবা প্রদান করছে। তবে মহাকাশে যাবার টিকিটের খরচ কম নয়। ভার্জিন গ্যালাকটিক কোম্পানি চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে চালু করবে ব্যাসায়িক মহাকাশ ভ্রমণ সেবা এবং বর্তামানে প্রতিটি টিকিটের দাম ৪.৫ লাখ ডলার এবং ইতোমধ্যেই ৭০০টি টিকিট বুকিং হয়েছে। ব্লু অরিজিন কোম্পানির প্রথম  মনুষ্যবাহী পরীক্ষা ফ্লাইটের টিকিট নিলামে ২.৮ কোটি ডলার দামে পোঁছেছে এবং অন্য একটি কোম্পানি মানুষকে আন্তর্জাতিক স্পেসস্টেশনে পাঠাতে ৫.৫ কোটি ডলার নিচ্ছে।

 

অন্যদিকে, মানুষের চাঁদে অবতরণের ৫০ বছর পর চাঁদও খুব প্রাণবন্ত হবে এ বছর। চীনের ইয়ু থু-২ লুনার রোভার চাঁদের পেছনের দিক অন্বেষণ করছে এবং চলতি বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র নতুন মনুষ্যবিহীন চন্দ্রযান উত্ক্ষৈপন করবে। রাশিয়াও জুলাই মাসে চাঁদে চান্দ্রযান উত্ক্ষেপন করে ৪০ বছর পর তাদের চাঁদ অনুসন্ধ্যান পরিকল্পনা পুনরুদ্ধার করবে। ভারতেরও আছে চান্দ্রযান উত্ক্ষেপনের পরিকল্পনা।

 

রাশিয়া ও ইউরোপের যৌথ মঙ্গল অনুসন্ধ্যান পরিকল্পনাও শরত্কালে চালু হবে এবং ইউরোপের প্রথম মঙ্গলযান উত্ক্ষেপন করা হবে।

 

জাতিসংঘের জীব বৈচিত্র কনভেনশন স্বাক্ষরকারীদের ১৫তম সম্মেলনের (কপ-১৫) দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্মেলনে চলতি বছর চীনের ইউননানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি দশ বছরে স্বাক্ষরকারীরা ভবিষ্যত এক দশকের জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। তবে ২০১০ সালে তৈরি ২০টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে মাত্র ৬টির আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে খুনমিং সম্মেলনের ব্যাপারে আশাবাদী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশ্ব জীব বৈচিত্র হারানোর প্রবণতা পরিবর্তন করতে চায়।

 

চলতি বছর জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন মিশরের শারম আল শেখ শহরে অনুষ্ঠিত হবে। তাতে আফ্রিকার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে। তা ছাড়া, সরাসরি বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংগ্রহে নতুন প্রযুক্তির নতুন অগ্রগতি অর্জিত হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)