২০২২ সালের শুরুতে আমরা একটি সুখবর শুনতে পেয়েছি। চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতায় নতুন একটি প্রকল্প চালু হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে গত রোববার চীনা এক কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে একটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবে চীনা এই কোম্পানি।
মোট ১৬.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হাতিরঝিল-আমুলিয়া-ডেমরা সড়কটি রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। তবে এই সড়কটিতে বর্তমানে জনদুর্ভোগ লেগেই থাকে । তাই একে চার লেনের সুপ্রশস্ত এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তর করা হবে। তখন তার দৈর্ঘ্য হবে ১৩.৫ কিলোমিটার। বর্তমানে হাতিরঝিল-আমুলিয়া-ডেমরা পথের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছাতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তা কেবল ১০ মিনিটে নেমে আসবে।
এ খবর শুনে বাংলাদেশের নেটিজেনরা অনেক খুশি হয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, খবরটা শুনে সত্যি ভালো লাগলো। এই রোডে যে পরিমান গাড়ি বাড়ছে, তাতে প্রতিনিয়ত জেম লেগেই থাকে।এই রোডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দরকার।
বাংলাদেশের লোকজনের এ স্বপ্ন দ্রুত বাস্তবায়ন করবে চীনা কোম্পানি। গেল কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাবের আওতায় চীন ও বংলাদেশের সহযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে সবসময় চীনা কোম্পানি দেখা যায়। যেমন: গত মাসে চীনের সিমেক কেম্পানি বাংলাদেশের সাথে একটি বর্জ্য থেকে বিদ্যুত তৈরির প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ প্রকল্পের সাহায্যে এতদঞ্চলের ৬০ লাখ মানুষের বর্জ্য নিষ্পত্তি এবং ১১ লাখ মানুষের বিদ্যুত চাহিদা পূরণ হবে।
গত ১৭ ডিসেম্বর চীনের ছাড়যোগ্য ঋণের সাহায্যে বাংলাদেশে নির্মিত স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এ প্রকল্পের সাহায্যে ঢাকা বিভাগের ৫০ লাখ মানুষের গার্হস্থ্য পয়ঃনিষ্কাশন পানি শোধন করা যাবে এবং ঢাকার নদীর পানি ও পরিবেশের মান এবং স্থানীয়দের জীবনযাপনের মানও উন্নত হবে। এটা বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, যা দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পও চীনা কোম্পানি তৈরি করছে। এ সেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি বিভাগ ও ঢাকার সঙ্গে ৭৮ ঘন্টার যাত্রা অনেক কমে আসবে। হাজার বছরের নৌ পথে যাতায়াতের ইতিহাসও পরিবর্তিত হবে। অনুমান অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধি পাবে এবং আট কোটি মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে।
স্থানীয়দের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বিদেশে চীনের বিনিয়োগ ও সহায়তা প্রকল্প। মানুষের জীবিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার এবং অবকাঠামোর তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমি এমন একটি গল্প শুনেছি। নাদিরা করিম নামে এক মেয়ের মা তার খুব ছোটবেলায় মারা গেছে। মায়ের মতো অসুস্থদের চিকিত্সা দেয়ার স্বপ্ন দেখেন করিম। তবে তার জন্য স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ নয়, কারণ তার বেকার বাবা তার জন্য স্কুলের ফি দিতে পারে না। তবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাবের আওতায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মাল্টি-চ্যানেল টানেল প্রকল্পে একটি কাজ পেয়ে যায় তার বাবা। তাতে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান হলে, সে স্কুলে মনের সুখে লেখাপড়া করতে পারে। তার গল্প থেকে আমরা দেখি, সাধারণ একজন বাংলাদেশীর জীবন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাবের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে। এমন আরো অনেক গল্প রয়েছে।
আমার দাদাও সেতু ও সড়ক কোম্পানির ম্যানেজার ছিলেন।মনে আছে, ছোট বেলায় উনি মাঝে মাঝে সেতু ও সড়ক প্রকল্পের কাজে বিদেশে যেতেন। তাঁর কাছ থেকে আমি ছবিতে বিদেশের মানুষ ও দৃশ্য দেখেছি। তার নোট বুকে আমি প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের ভাষা দেখেছি। সম্ভবত তার নোটবুকটি ছিল আমার প্রথম বিদেশি ভাষার পাঠ্যপুস্তক এবং বিদেশকে জানার একটি জানালা।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও চীন অব্যাহত সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করছে। নানা প্রকল্পের মাধ্যমে দুদেশের মানুষের মৈত্রী ও সমঝোতা দিন দিন বাড়ছে। অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও সংস্কৃতি বন্ধুত্ব গভীর হচ্ছে। আমার মতে এটাও ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাবের আমাদের দেয়া সবচেয়ে ভাল একটি উপহার। (শিশির/এনাম)