আজ (সোমবার) চীনের পুলিশ দিবস। এ উপলক্ষ্যে শুধু চীনের পুলিশ নয়, বরং সারা বিশ্বের পুলিশদের জানাই শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ। কারণ তারা আমাদের নিরাপত্তা রক্ষা করেন।
সকল চীনাদের মুখে একটি কথা খুব প্রচলিত। কোনো কষ্টে পড়লে পুলিশের কাছে চলো। পুলিশকে কল দিতে ১১০ ডাইয়াল করা হয়। তাই প্রতি বছরের ১০ জানুয়ারি পুলিশ দিবস হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
আপনাদের চোখে তারা কেমন? আসলে তারা অনেক সময় ক্লান্ত থাকেন। তারাও আমাদের মতো সাধারণ মানুষ। তবে তারা সাহসী কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল চীনের আড়ালে রয়েছে তাদের অবদান।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪,৯০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত তু লুং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল। এ অঞ্চলে যাওয়ার রাস্তায় রয়েছে ৭৪৯টি বাঁক। বরফ পরলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুলিশ সদস্যরা দিনরাত এ অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন। তাদের গড় বয়স ২৮ বছর। গ্রামবাসীদের জন্য পথ ও বাড়িঘর নির্মাণ, খাদ্যশস্য চাষ করা এবং প্রাথমিক স্কুল নির্মাণসহ নানা কাজে রয়েছে তাদের অংশগ্রহণ। তু লুং জাতির আদিবাসীরা তাদেরকে জনগণের কাছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠানো ‘মেহমান’ হিসেবে গণ্য করেন। যেখানে দরকার, সেখানেই কাজ করতে যায় তারা। এটি সকল পুলিশের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
পরী পাহাড়ের রাইডার হিসেবে পরিচিত লাভ করেন লুও তান হুয়া নামের একজন পুলিশ। তিনি প্রতিদিন মোটর সাইকেলে সংকীর্ণ পাহাড়ী রাস্তায় তল্লাশি চালান। পাহাড়ী অঞ্চলে সুন্দর দৃশ্য অনেক পর্যটক আকষর্ণ করে, তবে সংকীর্ণ রাস্তাঘাটে অনেক সমস্যা রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে লুও তান হুয়া এ রাস্তায় তল্লাশিকাজ করছেন। তিনি ১০ বছরের কর্মজীবনে ৬টি মোটর সাইকেল নষ্ট করেছেন এবং প্রায় ৪ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। চরম গরম ও শীত- যাই হোক না কেন, প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি তার মোটরসাইকেলে মানুষকে সাহায্য করেন।
গত একবছরে প্রতিদিন ৫ লাখ পুলিশ রাস্তাঘাটে তল্লাশি চালায়। তাতে ৩০ হাজারটি বড় আকারের ও ১৩ হাজারটি এ গ্রেডের দর্শনীয় স্থানের স্থিতিশীলতা রক্ষা হয়েছে এবং ৩০০ কোটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশদের ত্যাগের কারণে হাজার হাজার পরিবারের সুখী সম্মিলন সম্ভব হয়েছে। ইয়াং রেন তে নামের একজন পুলিশ বলেন, “জনগণের কাজ যত ক্ষুদ্রই হোক, সেটাই বড় কাজ”।
ইয়াং রেন তে চীনের দ্রুত গতির ট্রেনে কর্মরত একজন সাধারণ পুলিশ। তাকে ট্রেনের ঈগল হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ আধা বছরের মধ্যে তিনি ১২জন ফেরারী অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছেন এবং টানা ২ বছর ধরে নিখিল চীনের রেল বিভাগে এ ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানে রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি গ্রামে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য করেন, যাত্রীদের টিকিট কিনে দেন এবং যাত্রীদের সাহায্যে তহবিল স্থাপন করেছেন। তার আচরণ ঠিক তার নামের মতো পুণ্যবান।
বর্তমানে চীনে প্রত্যেক ১ লাখ মানুষের মধ্যে খুনী অপরাধীর পরিমাণ ০.৫৬ জন, যা সারা বিশ্বে সর্বনিম্ন। প্রত্যেক ১ লাখ মানুষের মধ্যে ফৌজদারি মামলার আসামীর পরিমাণ ৩৩৯ জন, যাও বিশ্বে সর্বনিম্ন। ২০২০ সাল পর্যন্ত নিখিল চীনে মামলার পরিমাণ টানা ৫ বছর ধরে হ্রাস পেয়েছে। নিরাপদ চীন গঠন করতে তাদের ভূমিকা পরিহার্য।
জন্ম থেকেই বীর, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুলিশ হতে গেলে তারা সাহসী ও নির্ভীক হতে হয়। আমরা শান্ত ও সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারছি, যার কারণ হচ্ছে তারাই আমাদের জন্য বোঝা বহন করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন।
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আজকের টপিক এ পর্যন্তই, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।
রুবি/এনাম