চীনের বন্দর কন্টেইনার উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ
2022-01-10 15:47:35


সমুদ্র-দানব ঘন ঘন আসা-যাওয়া করে, চালকবিহীন সংগ্রহ কার্ড যাতায়াত করে, কন্টেইনার অব্যাহতভাবে উত্তোলন ও লোড-পরিবহন করে আন্তঃসীমান্ত ট্রেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর নিংবো শহরের চৌ শান বন্দরে কন্টেইনারের মাল বহন ও খালাসের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ৩ কোটি বিশ-ফুট সমতুল্য ইউনিট, টিইইউ’তে পৌঁছে শাংহাই বন্দর ও সিঙ্গাপুর বন্দেরের পর বিশ্বের তৃতীয় ‘৩ কোটি টিইইউ ক্লাব’ ছড়িয়ে যাওয়া বন্দরে পরিণত হয়।

 

ঠিক দু’দিন পরে থিয়ান চিন বন্দরে কন্টেইনারের মাল বহন ও খালাসের পরিমাণও প্রথমবারের মতো ২ কোটি টিইইউ অতিক্রম করে, ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, ২০২১ সালে থিয়ান চিন বন্দর নতুন করে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের রুট খুলে বিশ্বের ২ শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের ৮ শতাধিক বন্দরের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিনিময় করে। এর মধ্যে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বরাবর বন্দর বাণিজ্যিক মালামাল মোট মাল বহন ও খালাসের পরিমাণের ৬০ শতাংশেরও বেশি ছিল।

 

অসংখ্য জাহাজ যাতায়াত করে কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা হয় না। তবে এক বছর আগে এ রকম দৃশ্য কল্পনার বাইরে ছিল। ২০২০ সালে হঠাত্ আসা কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্ব জাহাজের রুট বাজারের ছন্দ নষ্ট করেছে। একই বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে পরিবহন চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, আন্তর্জাতিক জাহাজের রুটের দাম অনেক বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রবেশ করে, যদিও দাম বৃদ্ধি কিছুটা ধীর হলেও উচ্চ স্থানে ছিল।

 

মহামারীর ঝুঁকি সৃষ্ট বিশ্ব জাহাজের রুট বিশৃঙ্খলার অবস্থায় কিভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের সুষ্ঠু ও শৃঙ্খল বজায় রাখে? একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কন্টেইনার।

 

বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, বিদেশি বন্দরের ফ্রন্টলাইন কর্মীর অভাবে, নাবিক সংখ্যা খুব কম, বন্দর কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে কমেছে। অনেক জাহাজ দীর্ঘকাল ধরে পার্কিং স্থানের জন্য অপেক্ষা করে পরিবহন সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। বহু সংখ্যক কন্টেইনার বিদেশে আটকে ছিল, অভ্যন্তরীণ কন্টেইনারের অভাবে সরবরাহ চেইনের উত্তেজনা তীব্রতর হয়।

 

“মহামারীর ঝুঁকি সবচেয়ে গুরুতর হবার পরিস্থিতিতে নৌ-পরিবহন আমদানিরত খালি কন্টেইরার পরিমাণের ফাঁক ২০ লাখ টিইইউ ছিল।” পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়াটারবর্ন ট্রান্সপোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উপ-প্রধান চিয়া তাশান এ কথা বলেছেন।

 

কন্টেইনার সরবরাহ ধারাবাহিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ, সমস্যা কিভাবে সমাধান করা হবে? বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

 

উত্স সাইডে লাইনার কোম্পানি ইতিবাচকভাবে বাজার চাহিদার পরিবর্তন উপযোগী করে, জাহাজের রুট ও পরিবহন ক্ষমতা, খালি কন্টেইনার সুবিন্যাস করে খালি কন্টেইনারের অপসারণ দ্রুততর করে।

 

২০২১ সালের মার্চ মাসে ১৩ হাজার ৪৬৯টি খালি কন্টেইনার বহন করা ‘কসকো শিপিং স্টার’ নামক জাহাজ নিং বোতে পার্কিং করে। যদিও খালি কন্টেইনার পরিবহনের মূল্য নতুন কন্টেইনার উত্পাদনের চেয়ে দাম বেশি, তবুও তখনকার বিশেষ পরিস্থিতিতে আচরণটি অস্থায়ীভাবে খালি কন্টেইনারের অভাব সমস্যাটি সমাধান করেছে।

 

অন্য দিকে কন্টেইরার উত্পাদন প্রতিষ্ঠানও উত্পাদন দ্রুততর করেছিল।

 

সেপ্টেম্বর মাসে চীনের কন্টেইরারের মাসিক উত্পাদন দক্ষতা আগের ২ লাখ টিইইউ থেকে ইতিহাসের শীর্ষ অর্থাত্ ৫ লাখ টিইইউ পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। প্রধান কন্টেইরার উত্পাদন প্রতিষ্ঠানের নতুন কন্টেইরার মজুদ ৪ লাখ টিইইউ ছড়িয়ে গেছে। নতুন কন্টেইরারের সরবরাহ যথেষ্ট নিশ্চয়তা আছে, খালি কন্টেইরারের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি কার্যকরভাবে প্রশমিত হয়েছে।

 

একই সময় আউটপুট দিকের ডিজিটাল রূপান্তর বন্দরে মালামাল চলমান দ্রুততর করে সুষ্ঠু পণ্য স্থানান্তর ও কার্গোর জন্য এসকর্ট করেছে।

 

সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে চীনে মোট ১০টি স্বয়ংক্রিয় কন্টেইনার জাহাজ ঘাঁট নির্মিত হয়েছে। এছাড়া অন্য ৮টি স্বয়ংক্রিয় কন্টেইনার জাহাজ ঘাঁট নির্মিত হচ্ছে। নির্মিত হয়েছে ও হচ্ছে এমন জাহাজ ঘাঁটের মাত্রা বিশ্বের প্রথম স্থান পায়।

 

পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, ২০২১ সালের প্রথম ১১ মাসে চীনের বন্দর মাল বহন ও খালাসের পরিমাণ ছিল ১৪.২১ বিলিয়ন টন এবং কন্টেইরারের মাল বহন ও খালাসের পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি টিইইউ । দু’টো সংখ্যা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৭.২ ও ৭.৬ শতাংশ বেশি।

 

মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে বন্দরের ‘পরিমাণ’ ও ‘গুণগতমান’ দু’টোই বেড়েছে। বন্দর ও জাহাজ ঘাঁট ধারাবাহিক সমৃদ্ধ হবার ছবি ধীরে ধীরে দেখাচ্ছে।

 

“বিশ্ব মহামারীর পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু মহামারীর প্রভাবে বিশ্ব সরবরাহ চেইন ও শিল্প চেইনের চালু সুষ্ঠু নয়। এ অবস্থায় চীনের অভ্যন্তরীণ উত্পাদন সাধারণ স্থিতিশীল বজায় ছিল, কার্যকরভাবে বিশ্ব চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করেছে।” জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র ফু লিংহুই এ কথা বলেছেন।

 

বিশেষজ্ঞগণ বলেন, ভাইরাসের অব্যাহত পরিবর্তন এবং আংশিক মোকাবিলা করতে ‘টিকা ও কোয়ারিন্টিন’ মৌলিক ব্যবস্থা। এটা সৃষ্ট বন্দর ও জাহাজ ঘাঁট টার্নওভার দক্ষতা কমানো এখনও একটি চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চত সমস্যা।

 

“মহামারীর সংকট কিছুটা কমলে, সংশ্লিষ্ট লিঙ্কের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার হলে, বন্দর ও জাহাজের ঘাঁটের সরবরাহ-চাহিদার সম্পর্কের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রশমিত হবে”। শাংহাই আন্তর্জাতিক নৌপরিবহন গবেষণা কেন্দ্রের একাডেমিক বোর্ডের পরিচালক রেন জেনহোং বলেছেন, নৌপরিবহন শিল্পের ওপর মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তা, নাবিক ও বন্দর কর্মীর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব সমন্বয় করে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন, শুল্ক ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিভাগের সমন্বয় জোরদার করে, একটি উচ্চ কার্যকারিতার পরীক্ষা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়। যাতে নাবিকদের মহামারী প্রতিরোধ, নিরাময় ও শিফট পরিবর্তনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা যায়।

 

একই সময় নতুন উন্নয়ন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে নৌপরিবহন শিল্পের জন্য নতুন উন্নয়ন সুযোগ ডেকে আনছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের দীর্ঘ্য তটসীমা এবং প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলা অভ্যন্তরীণ জলপথ নেটওয়ার্ক আছে। এছাড়া চীনের বন্দরগুলো উন্মুক্তকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দরজায় পরিণত হয়ে ৯০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্যিক মালামালের পরিবহন করছে।

 

রেন জেনহোং প্রস্তাব দিয়েছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের উপকূলীয় এক্সপ্রেস সড়কপথ নির্মাণের অভিজ্ঞতা প্রদান করে, চীনের উপকূলীয় পরিবহনের শর্ত ও বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত করে, আরো সুষ্ঠু ও উচ্চ কার্যকর, নিরাপদ ও নির্ভরশীল এবং স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণযোগ্য উপকূলীয় জল পরিবহন চ্যানেল তৈরী করা যাবে।

 

বন্দরে অবকাঠামোর নির্মাণ দ্রুততর করা, বন্দরের দক্ষতা অভিযোজনীয় উন্নীত করা বর্তমানে নৌপরিবহন সরবরাহ-চাহিদা সম্পর্ক প্রশমিত করা অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। চিয়া দাশান বলেন, উন্নয়নের চাহিদা অনুযায়ী, বন্দরের অবকাঠামো দক্ষতা নির্মাণ দ্রততর করার পাশাপাশি অধিকতরভাবে স্বয়ংক্রিয়তা ও বুদ্ধি নৌপরিবর্তন নির্মাণ ত্বরান্বিত করে, বিভিন্ন কর্মচারীর পদে প্রযুক্তিবিদদের অভিযোজনীয় উন্নীত করে, সরবরাহ চেইনের সুষ্ঠু, নিরাপদ ও উচ্চ কার্যকর অর্থনৈতিক মান উন্নীত করতে হবে।

 

(প্রেমা/এনাম)