‘অন্য কোথাও’
2022-01-08 20:16:25

সুই উয়েই চীনের শানসি প্রদেশের সি আন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। চীনের সুবিখ্যাত ‘রক অ্যান্ড রোল’ গায়ক। ১৯৯৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘জাই পিয়ে ছু’ বা ‘অন্য কোথাও’ প্রকাশিত হয়। এ গানটি হলো সুই উয়েই’র সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশিত এক আহ্বান। এ আহ্বান হলো ‘প্রযুক্তির যুগে মানুষের আবেগের কথাও ভুলে যেও না’। গানে বলা হয়েছে:

আমি আমার আরেকটি শরীরকে যেন দেখতে পাই। সে বহুদূরের একটি জায়গায় উড়ে গেছে।

প্রতিদিন কল্পনা করি নিজেই অন্য কোথাও আছি।

প্রেম যেন ফুলের মতো, কিন্তু ফোটে না।

আকাঙ্ক্ষা যে বন্য ঘাসের মতো প্রতিদিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে।  

এখন সুই উয়েই-এর আরেকটি গান শুনুন। গানের নাম ‘শিওং তি’ বা ভাই।

এ গানে বলা হয়েছে:

আগে বেঞ্জ ও বিএমডাবলিও চালিয়ে পৃথিবী ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু এ দৃশ্য শুধু স্বপ্নের মধ্যে দেখা যায়। এ জীবনে তা বাস্তবায়িত হবে না।

আজ আমি একটি রিক্সা চালিয়ে সব্জি বিক্রি করি। আমার স্ত্রীও চলে গেছে।

বাচ্চাদের খাওয়াদাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আমি রাস্তাঘাটে সব্জি বিক্রি করি।

এখন শুনুন সুই উয়েই-এর আরেকটি গান ‘কু শিয়াং’ বা জন্মস্থান। গানে বলা হয়েছে:

সূর্যাস্তের আলো আমার মুখে ছায়া ফেলেছে। আমার মন আবার অস্থির হয়ে গেছে।

এটা কোথায়? সেই অসীম যাত্রা শেষ হচ্ছে না।

আমি বহুদূর বহুদূর যেতে চাই। তুমি আমার প্রেমিকা।

বিদেশে প্রতিটি ঠান্ডার রাতে তোমাকে ভীষণ মিস করি।

স্বপ্নের মধ্যে তোমার অসহায় চোখ যেন দেখতে পাই। আমার প্রাণ আবার জেগে ওঠে।

এখানে দাঁড়িয়ে তোমার সঙ্গে বিদায়ের কথা মনে পরে। তুমি আমার জন্মস্থান।  

 ‘থিয়ান অ্য জি লুই’ বা ‘রাজহাঁসের ভ্রমণ’। গানটি সুই উয়েই ৩ বছর ধরে রচনা করেছেন। এ গান থেকে তার রচনার ভঙ্গি পরিবর্তন শুরু হয়। জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের ভিত্তিতে তার গানের ভঙ্গিও বদলেছে। গানে বলা হয়েছে:

আমরা আগের জীবনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, এ জীবনে একসাথে পৃথিবী ভ্রমণ করব।

সারা জীবন অবিরাম বসন্তকালে সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে বাতাসের মধ্যে নাচতে থাকব।

মধ্যরাতে আকাশের তারার সমুদ্রে সাঁতার কাটব।

এখন শুনুন সুই উয়েই-এর আরেকটি গান ‘ওয়েন নুয়ান’ বা উষ্ণ। গানে বলা হয়েছে:

আমার ঘরে বসে তোমার ছবি দেখছি।

আমাদের একসাথে ইউন নান প্রদেশের তালি শহরে যাওয়ার কথা মনে পড়ছে।

সেখানে রোদ খুব উজ্জ্বল, আকাশ পরিষ্কার নীল।

সবুজ রংয়ের ছাং শান এবং নীল রংয়ের আই হাই।

সূর্যাস্তের সোনালি আলোয় সবুজ ঘাসের মধ্যে তোমার হাসিমুখ কতো উষ্ণ!

এসব উষ্ণ মুহূর্ত মনে পড়লে আমার খুব হালকা সুখের অনুভূতি হয়।

এখন শুনুন সুই উয়েই-এর আরেকটি গান ‘ফেই নিয়াও’ বা ওড়ার পাখী। গানে বলা হয়েছে:

সন্ধ্যায় বাতাস পাইন গাছের উপর দিয়ে বয়ে যায়। সে শব্দ যেন স্বর্গ থেকে আসে। এ শহরের নীরব জায়গায় দাঁড়ালে সব হৈচৈ যেন দূরে চলে গেছে। পাহাড় সাদা মেঘের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। প্রজাপতি নদনদীর উপর দিয়ে উড়ে যায়। সন্ধ্যায় উপমা আকাশের সীমান্তে আবির্ভাব ঘটে। এক ঝাঁক পাখি পশ্চিমে উড়ে যাচ্ছে। কে এ আকাশ ও ভূমির ছবি এঁকেছে? ভেতরে তুমি আর আমি আছি। আমাদের পৃথিবী কতো রঙিন! কে আমাদের কান্না দিয়েছে আবার হাসি দিয়েছে? আমাদের এভাবেই দেখা হয় এবং আমরা প্রেমে পড়ি।  

প্রিয় শ্রোতা, গান শুনতে শুনতে অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে চলে এলাম। তবে বিদায় নেওয়ার আগে সুই উয়েই-এর আরেকটি গান শোনবো। গানের নাম ‘শেং হু পু চিন ইয়ান ছিয়ান ত্য কৌ ছিয়ে’ বা ‘জীবন মানে শুধু জীবিত থাকা নয়’। গানে বলা হয়েছে:

আম্মা দরজার সামনে বসে আছেন। মুখে ফুল ও যুবকের গুন গুন গান।

বহু বছর পার হলেও এখনো মনে আছে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো।

আম্মা চলে যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

জীবন মানে শুধু জীবিত থাকা নয়, আরো আছে কবিতা ও সুদূরের ক্ষেত্র।

তুমি খালি গায়ে পৃথিবীতে এসেছো। ঐ মনকে খোঁজার জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে পারো।

অনেক বছর পর আমার নিজের একটা ছেলেও হয়েছে।

সে দিন দিন বড় হচ্ছে। একদিন পরিবার ছেড়ে চলেও যাবে।

তার বড় হওয়া দেখে, তার জিদ ও আপস দেখে, 

একদিন আমিও তাকে একই কথা বলব।

জীবন মানে শুধু জীবিত থাকা নয়, আরো আছে কবিতা ও সুদূরের ক্ষেত্র

তুমি খালি গায়ে পৃথিবীতে এসেছো। ঐ মনের জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে পারো।

(স্বর্ণা/আলিম/ছাই)