হলুদ মাটিতে সোনার ফলন
2022-01-07 19:37:26

চীনের হ্যপেই প্রদেশের ফু পিং জেলা অতীতে খুব দরিদ্র ছিল। অনেক দরিদ্র! লোকজন ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়ে গাছের পাতা খেত। এক সময় সেখানে গাছের পাতাও বিরল হয়ে পড়ে। এখন এই জেলার আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। লোকজন বিভিন্ন শস্য, ফল-ফলাদি ও মাশরুমের মত কৃষিজাত দ্রব্য চাষ করে। তারা এখন সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তাদের জীবনে আশার আলো দেখা গেছে। আজকে ফুপিং জেলার অতীত ও বর্তমান নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করবো।

 

ফুপিং জেলা চীনের জাপান-বিরোধী যুদ্ধের সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বাহিনী ইতিহাসের প্রথম জাপান-বিরোধী ঘাঁটি অর্থাত্ চিনছাজি ঘাঁটি স্থাপন করে। ফুপিং জেলা হল এই ঘাঁটির কেন্দ্রস্থল। বিপ্লবের পুরোনো স্থান ফুপিং সম্বন্ধে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর বিশেষ অনুভূতি আছে।

 

২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে, মাইনাস দশ ডিগ্রির ঠান্ডা আবহাওয়ায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ফুপিং জেলার দরিদ্র জনগণকে দেখতে যান। তিনি সেখানে স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচন কাজের অবস্থা পরিদর্শন করেন।

 

প্রেসিডেন্ট সি তখন বলেছিলেন, ফুপিং জেলা চীনের থাইহাং পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত। যা বিখ্যাত বিপ্লবের পুরানো এলাকা। তিনি সবসময় সেখানকার জনগণকে দেখতে যেতে চান, দরিদ্র জনগণের জীবনের অবস্থা জানতে চান, সবার সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন এবং ধনী হওয়ার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে চান। সে সময় প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, গ্রামের সচ্ছল জীবন ছাড়া, বিশেষ করে দরিদ্র এলাকার সচ্ছল জীবন ছাড়া সার্বিকভাবে চীনে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা যায় না। তিনি স্থানীয় লোকজনকে উত্সাহ দিয়ে বলেন, আস্থা থাকলে হলুদ মাটি সোনায় পরিণত হয়।

তাহলে ফুপিং জেলা অতীত কেমন দরিদ্র ছিল? কেন প্রেসিডেন্ট সি সবসময় সেখানকার কথা চিন্তা করেন?

 

জাপান-বিরোধী যুদ্ধের সময় জিন ছা জি সামরিক এলাকার কমান্ডার নিয়ে রুং চেন ফুপিং জেলার দরিদ্র অবস্থা দেখেন। তিনি নিজের স্মৃতিকথায় লেখেন যে, ১৯৪২ সালের বসন্তকালে, জমিতে কোনো শস্য জন্মাতো না। কোনো খাবার পাওয়া যেত না, গাছের পাতাই ছিল জনগণের প্রধান খাবার। এমন দরিদ্র অবস্থায় আর কোনও উপায় ছিল না। তখন কমান্ডার নিয়ে রুং চেন বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে কাছাকাছি গ্রামে গাছের পাতা তোলা নিষিদ্ধ করে এক নির্দেশ দেন, যাতে এসব পাতা জনসাধারণ খেতে পারে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, তখন কমান্ডার নিয়ে ফুপিং জেলার অবস্থার ওপর অনেক গুরুত্ব দিতেন। নিয়ে বলেছিলেন, ফুপিং ধনী না হলে, তিনি মরার পরও তাকিয়ে থাকবেন।

 

ফুপিং জেলা চীনের থাই হাং পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত। পাহাড়ি অঞ্চলের আয়তন ২১৭৩ বর্গকিলোমিটার, তবে আবাদি জমির আয়তন শুধু মাত্র ১৪৬ বর্গকিলোমিটার। পুরো বছর অল্প কিছু খাদ্য উত্পাদন করা হতো। ফু শব্দটি’র অর্থ সমৃদ্ধ, তবে ফুপিং জেলা এর আগে কখনই সমৃদ্ধ ছিল না। ২০১২ সালেও পুরো জেলায় অর্ধেক লোকজন দরিদ্র ছিল।

 

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট সি ফুপিং জেলায় গিয়ে দরিদ্র মানুষের খোঁজ-খবর নেন। তিনি বলেন, আজ এখানে আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। যদিও একবারে সব গ্রাম পরিদর্শন করা যায় না, তবে তিনি গ্রামের প্রকৃত অবস্থা দেখতে চান, জনসাধারণের বর্তমান জীবন দেখতে চান, বর্তমান জীবন ভালো না মন্দ, তা জানতে চান, তিনি প্রকৃত জীবনযাপনের পদ্ধতি বুঝতে চান।

 

সেদিন পুরো রাত প্রেসিডেন্ট সি স্থানীয় কর্মকর্তাদের কর্মরিপোর্ট শুনেছেন, দরিদ্র মানুষের সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপর প্রেসিডেন্ট সি সারা দেশে দারিদ্র্যবিমোচন কাজের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুপিং জেলায় ৪৬০জনেরও বেশি দারিদ্র্যবিমোচনে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি এসেছে। পুরো প্রদেশে ২০৯জন কর্মকর্তা দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য ফুপিং জেলায় গিয়েছেন।

 

২০১২ সালের সময় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ফুপিং জেলা পরিদর্শনের সময় থাং নামে একটি পরিবারে যান, আট বছর পর থাং পরিবার আগের পাথরের বাড়িঘর থেকে জাঁকজমকপূর্ণ দু’তলা ভবনে স্থানান্তর হয়েছেন। বলা যায়, তাদের জীবনে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে।

 

ফুপিং জেলার লুও থুও ওয়ান গ্রামের বাসিন্দা কু পাও ছিং বলেন, প্রেসিডেন্ট সি বলেছিলেন- আস্থা থাকলে হলুদ মাটি সোনাতে পরিণত হবে। আমরা তাঁকে জানাতে চাই, আমাদের জীবন দিন দিন ভালো হচ্ছে, আমার নাতনি হলো আমার পরিবারের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। সে আমাদের গ্রামেরও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, আমি অনেক খুশি।

 

ফুপিং জেলার কু চিয়া থাই গ্রামের বাসিন্দা চিয়া ইয়া চুন বলেন, এখন টাকা পয়সা অর্জন করতে চাইলে বাসার কাছেই চাকরি যোগাড় করা যায়। এখন তিনি কারখানায় কাজ করে প্রতি মাসে দুই হাজার ইউয়ান বেতন পান। তিনি পরিবারের যত্নও নিতে পারেন, তিনি বর্তমান জীবন সম্বন্ধে খুব সন্তুষ্ট।

 

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফুপিং জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হয়। জেলায় গ্রামীণ মাথাপিছু আয় ২০১২ সালের ৩২৬২ ইউয়ান থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ইউয়ান।

ফু পিং জেলার দারিদ্র্যমুক্তকরণ হওয়ার পথ হল চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের এক উদাহরণ। নতুন ঐতিহাসিক সূচনায়, চীনারা সার্বিক সমাজতান্ত্রিক আধুনিক শক্তিশালী দেশ নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।