আফগানিস্তান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন
2022-01-07 17:04:22

আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও জনদুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। আফগানে শান্তি প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সমাজ এখনও একমত হতে পারে নি। গত অক্টোবরে আফগান পুনর্মিলনের বিশেষ প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদের পদত্যাগের পর অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংকট আরও গভীরতর হয়েছে।

 

দেশটির রাজনৈতিক খাতে পরিবর্তন এখন গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আশরাফ ঘানি সরকারের পতনের হাত ধরে নানামুখী বিপর্যয় এসে পড়েছে। আফগান জনগণের ব্যাপক ত্যাগের পর গত কয়েক দশকের অর্জিত গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিক সফলতা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েছে। দেশটিতে তালিবান শাসনের শুরুতেই ব্যাপক বেকারত্ব ও চরম দারিদ্র্য দেখা দিয়েছে এবং বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে নগদ অর্থের অভাব প্রকট হয়ে পড়েছে। এমনকি ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে আফগানিস্তানের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে। দেশটির মুদ্রাস্ফীতি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাবে। বিগত সরকারের বাজেটের ৭৫ শতাংশই ছিল বিদেশি সাহায্য। যা কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে অর্থনীতি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

 

দেশটিতে তালেবান দল ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, বিপুল সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা—যারা অর্থ উপার্জন করত, তারা চাকরি বা কাজ হারিয়েছে। তাদের অনেককেই দেখা গেছে কাবুলের নানা বেকারির সামনে সাহায্য প্রার্থনা করতে। তারা আশা করছিলেন যে, কোনও পথচারী তাদের কিছু রুটি কিনে দেবে। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ খাদ্য ও বস্ত্রের অভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন; অন্যদিকে শহরগুলিতে ভিক্ষুকের সংখ্যাও বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

 

এদিকে, তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর দেশে নতুন অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। সন্ত্রাসী আইএস-খোরাসান স্টেট প্রধানত সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের উপর ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। আফগানিস্তানের শিয়া মসজিদগুলিতে জুমার নামাজের সময় সম্প্রতি দুটি মারাত্মক আত্মঘাতী হামলা হয়। গত ৮ অক্টোবর কুন্দুজ প্রদেশে এবং ১৫ অক্টোবর কান্দাহার প্রদেশে আইএস-কেপি ওই প্রাণঘাতি হামলা চালায়। বিস্ফোরণে বার বার কেঁপে উঠছে ঐতিহাসিক কাবুল।

 

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের তহবিল বন্ধ করে এবং তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে, সব জাতিগত গোষ্ঠীর সাথে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠন করার জন্য চাপ দিচ্ছে। পাশাপাশি মানবাধিকার- বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে সম্মান করার জন্য তালেবান প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছে। অবশ্য, তালেবান বার বার বলছে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জব্দ করা আর্থিক সম্পদ ছেড়ে দিতে হবে।

আসলে আফগানিস্তানের জব্দ করা সম্পদ ছেড়ে দেওয়া কাবুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, মানবিক ইস্যুতে দেশটিকে সমর্থন জানানও জরুরি। যাতে সাধারণ আফগান জনগণ তাদের জীবনমান উন্নত করতে পারে। যাই হোক, মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আফগানিস্তানের সম্পদ ছেড়ে দেওয়া ও মানবিক সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে আফগানিস্তানের সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

 

গত বছর আফগানিস্তানের জন্য অনেক কঠিন ছিল, জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছিল যে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর এক বছরের মধ্যে দেশটির জিডিপি ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে, যা ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ আর্থিক মন্দার কারণ হবে। ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অনুসারে, আফগানিস্তানের মাথাপিছু আয় ২০২০ সালে ৫০০ ডলার থেকে ২০২১ সালে ৩৫০ ডলারে নেমে আসতে পারে এবং প্রতি ১০জনের মধ্যে নয়জন আফগান দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যেতে পারে। এ ছাড়া,  দেশের ৩৯ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে পড়বে।

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে, তালেবানকে একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে এবং জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। যেহেতু একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তান আঞ্চলিক শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু দেশের জন্য মানবিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা থেকে বোঝা যায় যে তালেবান একা আইএস-কেপি এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। তাই আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতার অবসান ঘটাতে এবং আফগানিস্তানে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

 

মোহাম্মদ তৌহিদ

সিএমজি বাংলা