আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৫৫
2022-01-06 17:58:07

নতুন বছরে নারী উদ্যোক্তাদের নতুন আশা

কী থাকছে এবারের পর্ব

১. সাক্ষাৎকার: নতুন বছরে নারী উদ্যোক্তাদের নতুন আশা

২. জেন্ডার সমতা অর্জন করেছে চীন

৩. গান : বলো আমি তোমাকে ভালোবাসি

৪. অনন্যা শীর্ষ দশ পেলেন যারা

৫. প্রতিবন্ধীদের নৃত্য শিক্ষা দেন লিউ চিচিয়ান

নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই।

নতুন বছরে নারী উদ্যোক্তাদের নতুন আশা

সাক্ষাৎকার: খুজিস্থা বেগম জোনাকী, নারী উদ্যোক্তা ও সংগঠক

বাংলাদেশের নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি অন্য নারীদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। এমনি একজন নারী উদ্যোক্তা খুজিস্থা  বেগম জোনাকী। তিনি ফ্যামিলি টাইস প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন জয়িতা ফাউন্ডেশনের একজন প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

       

                                     

নতুন বছরে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন আশার কথা শোনালেন খুজিস্থা বেগম জোনাকী। কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের নারীদের মানবাধিকার অর্জনের জন্য প্রথম কাজ শুরু করেন তিনি ২০০৮ সালে। নারীদের পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে দেখেন, স্বাবলম্বন খুব জরুরি একটি বিষয়। তিনি কিশোরগঞ্জের নারীদের বিভিন্ন হাতের কাজে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার কাজ শুরু করেন। নারীদের উৎপাদিত  সামগ্রী বাজারজাতকরণের চিন্তা থেকেই তিনি উদ্যোক্তা হন। কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের নারীরা মূলত কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কৃষিকাজে ব্যস্ততা চলে মাত্র তিন মাস। বাকি সময়টা থাকে বেকারত্বের সমস্যা।

এই সময়ে নানা রকম হস্তশিল্পজাত সামগ্রী তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করণের উদ্যোগে পথ দেখান জোনাকী ও তার সংগঠন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্থাপিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন। ২০১১ সালে এই ফাউন্ডেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুজিস্থা বেগম জোনাকী প্রথম থেকেই এই ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য। তিনি জয়িতার মাধ্যমে তার এলাকার নারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে কাজ করছেন। জয়িতা ফাউন্ডেশন থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। কম্পিউটার চালনা, বাঁশ ও বেতের কাজ, সেলাই, আঞ্চলিক শুকনো খাবার প্রস্তুতি ও সংরক্ষণ, নকশী কাঁথা তৈরি ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমানে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ড্রাইভিং শেখা। এসবের মাধ্যমে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। ঢাকায় জয়িতার আউটলেটের মাধ্যমে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিও করতে পারেন।

জোনাকী মনে করেন, ২০২২ সাল বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন আশার আলো জ্বেলেছে। মহামারীর সংকটকাল কাটিয়ে নারীরা এগিয়ে যাবেন। অনলাইনে নিজেদের পণ্য বিক্রিরও তারা নতুন সুযোগ পাবেন এই আশা প্রকাশ করেন খুজিস্থা বেগম।

 

জেন্ডার সমতার পথে চীন

চীনে গত কয়েক দশকে জেন্ডার সমতা অর্জনের পথে অভাবিত উন্নয়ন ঘটেছে। শুনুন এ বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।

চীনের অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছে নারীরা—মহান কমিউনিস্ট নেতা মাও জেতুংয়ের অমর উক্তিটি আবারও সত্য বলে প্রমাণিত হলো। ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক জরীপে দেখা গেছে গত কয়েক দশকে চীনে জেন্ডার সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে নারীদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে ব্যাপক। অল-চায়না উইমেন ফেডারেশন এবং ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসস্টিকস এর যৌথ উদ্যোগে ৩০,০০০ নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণে ১৮-৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই জরীপ পরিচালিত হয়। এদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ বলেছেন যে, চীনের নারীরা অধিকতর সুবিধাজনক সামাজিক পরিবেশ উপভোগ করে।

২০১০ সালের তুলনায় নারীদের জন্য কর্ম কাঠামো উন্নত হয়েছে।

গ্রামীণ এলাকালার ৩৯.৫ শতাংশ নারী কৃষিক্ষেত্রের বাইরে কাজ পেয়েছে। ২০১০ সালের তুলনায় এই হার ১৫.৪ শতাংশ বেশি।  এই সময়ের মধ্যে নারীদের চাকরি সংক্রান্ত অধিকার সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীরা গড়ে ১২.৮১ বছর শিক্ষা গ্রহণ করে যা আগের দশকের তুলনায় ১.৮৫ বছর বেশি এবং পুরুষের তুলনায় ০.৮১ বছর বেশি।  এই বয়সের ৯৭ শতাংশ নারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদগুলোর খোঁজ রাখে।

জরীপকারীদের ৯৪ শতাংশ মনে করে নারীরা পুরুষের মতোই সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সমানভাবে সক্ষম। নারীরা চীনের অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছে এই মূল্যবোধে তারা বিশ্বাস করে।

গান: বলো আমি তোমাকে ভালোবাসি

চীনের পপ সংগীতে জনপ্রিয় শিল্পী জোলিন ছাই। ১৯৮০ সালে জন্ম নেয়া এই শিল্পী মাত্র ১৮ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান। ছাই একজন গীতিকার, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, প্রযোজক, নৃত্যশিল্পী এবং লেখক হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছেন। জয় করেছেন গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক সম্মাননা। এখন শুনবো জোলিনের কণ্ঠে একটি রোমান্টিক গান। গানটির শিরোনাম ‘বলো আমি তোমাকে ভালোবাসি’।

 

অনন্যা শীর্ষ দশ পেলেন যারা

বাংলাদেশের পাক্ষিক নারীবিষয়ক ম্যাগাজিন অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা ২০২০ পেয়েছেন ১০ জন নারী। এবারও নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা দেয়া হয়। বিস্তারিত প্রতিবেদনে

বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় প্রতিবছর ১০ জন আলোচিত ও আলোকিত কৃতী নারীকে সম্মাননা প্রদান করে বাংলাদেশের পাক্ষিক নারীবিষয়ক ম্যাগাজিন অনন্যা।  সম্প্রতি  কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই পুরস্কারের আয়োজন করা হয়।  এতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের মেয়েরা অর্থনীতি, রাজনীতি, গবেষণা ও ক্রীড়াসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে  শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে আমাদের নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর রাজনীতিবিদ, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি, কৃষি, নাট্যনির্মাণ,করপোরেট পেশা, বিজ্ঞান, অধিকারকর্মী, ক্রীড়া ও লোকঐতিহ্য এ দশটি শাখায় ১০ নারীকে পুরস্কার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান শেষে স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং তারা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নারীদের অনুপ্রেরণা জোগাতে ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ  অনন্যা বিশেষ পুরস্কার দিয়ে আসছে।

 

প্রতিবন্ধীদের নৃত্য শিক্ষা দেন লিউ চিচিয়ান

অনেক প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বেলেছেন নৃত্য শিক্ষক লিউ চিচিয়ান। এই নারী শিক্ষকের অবদান সম্পর্কে শুনবো একটি প্রতিবেদন। 

লিউ চিচিয়ান গত আট বছর ধরে বেইজিংয়ে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে প্রতিবন্ধীদের জীবনে নিয়ে এসেছেন নতুন প্রেরণা। ৬৫ বছর বয়সী এই উদ্যমী নারী এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ মানুষকে নৃত্য শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে তাদের প্রতিভা বিকাশের পথ উন্মোচন করেছেন।

তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতায় ভুক্তভোগী মানুষ।

কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে গ্রুপ ডান্স পরিবেশনে অংশ নিতে পারেন এমন অনেকে যাদের হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। লিউ একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।২০১৩ সালে চীনের ব্রেইল লাইব্রেরিতে তার সঙ্গে পরিচয় হয় এমন কয়েকজন প্রতিবন্ধী মানুষের যারা নাচ শিখতে চান। তাদের সহায়তা করার তীব্র ইচ্ছা থেকেই লিউ প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিবন্ধীদের জন্য নাচের স্কুল।

সরকারী সহায়তাও পেয়েছেন তিনি। তার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই মঞ্চে নাচ পরিবেশন করে খ্যাতি পেয়েছেন। মানবদরদী লিউ চিচিয়ান আশা করেন আগামিতে  তরুণ শিক্ষাথীদের মধ্যে কেউ একজন তার এই সেবামূলক কাজটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশার মাধ্যমে শেষ হচ্ছে আজকের আকাশ ছুঁতে চাই। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অনন্যা শীর্ষ দশ পেলেন যারা প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

জেন্ডার সমতা অর্জন করেছে চীন ও প্রতিবন্ধীদের নৃত্য শিক্ষা দেন লিউ চিচিয়ান বিষয়ক প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী