চীন ৪টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা খাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে
2022-01-01 17:16:05

গত সোমবার চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত তথ্য ইনস্টিটিউট বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত এক দশকে প্রকাশিত দেশের আন্তর্জাতিক একাডেমিক গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি বিবেচনায় চীন চারটি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। উল্লেখ্য, এই সংস্থাটি চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান।

বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে দ্রুত উন্নতি করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে ও এর প্রয়োগও বাড়ছে। চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত তথ্য ইনস্টিটিউট বার্ষিক প্রতিবেদনে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ায় চীনের ভূমিকার চিত্র প্রকাশিত হয়। যে বিশেষ চারটি খাতে চীনের গবেষণা নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেগুলো হলো- পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, প্রকৌশল প্রযুক্তি ও কম্পিউটার বিজ্ঞান। মূলত এই বছরের তালিকায় কম্পিউটার বিজ্ঞান নতুন করে যুক্ত হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং জৈব রসায়ন এবং পরিবেশ ও পরিবেশ বিজ্ঞান-সহ আরও ১০টি ক্ষেত্রে চীন দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে।

 

এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য, স্কোপাস এবং ই (Ei) কমপেনডেক্স সহ ‘বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক সাহিত্য ডেটাবেস’ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। মূলত, একাডেমিক সাইটেশন একটি গবেষণার গুণমান ও প্রভাবের প্রধান সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি বৈজ্ঞানিক খাতে কোনও দেশের মোট সাইটেশনের পরিমাণ সাধারণত সেই বিষয়ে দেশটির সামগ্রিক গবেষণা ক্ষমতার প্রতিফলন হিসাবে দেখা হয়।

গত বছর, চীন প্রকৃতি, বিজ্ঞান এবং কোষ-সহ বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি গবেষণামূলক প্রকাশনায় ১৮৩৩টি গবেষণা পত্র এবং নিবন্ধ প্রকাশ করে। এই কৃতিত্বটি চীনকে ২০১৯ সালের তুলনায় র‌্যাঙ্কিং-এ দুই ধাপ এগিয়ে দেয়। এতে গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছায় চীন।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে আংশিকভাবে উঠে এসেছে। চীনা বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ মহামারী সম্পর্কিত প্রচুর গবেষণাপত্র প্রকাশ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহকর্মীদের সঙ্গে সহ-লেখক এবং আরও গবেষণাপত্র প্রকাশের কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিজ্ঞান জগতের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক অংশে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এআই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ মানবজাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

 

গত বছর, চীনা বিজ্ঞানীরা ১৬৯টি দেশ ও অঞ্চলের সহযোগীদের সাথে প্রায় ১৪৪,৫০০টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র যৌথভাবে লেখেন; যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪,৪০০টি বেশি। চীনের মোট সহ-প্রকাশনার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ১১.১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রে চীনের বৃহত্তম অংশীদার।

 

চীন গত বছর ৪৮৫টি মেগা-কোলাবরেশন বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। প্রতিটিতে অন্তত ১০০জন বিজ্ঞানী এবং ৫০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন, কণা-পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা এবং পারমাণবিক বিদ্যার মতো ক্ষেত্রে। পাশাপাশি এ.আই. বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও চীনের অবদান উল্লেখযোগ্য। গত ৪০ বছর ধরে এআই প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। চিত্র শনাক্তকরণ, কণ্ঠ শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিতে চীন বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে। এআই প্রযুক্তির পেটেন্টের আবেদনের সংখ্যার দিক দিয়েও বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে চীন।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এআই প্রযুক্তি খাতে চীনের সাফল্য ছিল আকর্ষণীয়। চীন এখন বিশ্বের এআই প্রযুক্তির প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ‘এআই প্রযুক্তি উন্নয়ন, ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, এআই প্রযুক্তি খাতে উচ্চপর্যায়ের সেরা ব্যক্তিদের সংখ্যা ও পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যার দিক দিয়ে চীন বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে। বলা বাহুল্য, চীনের এআই প্রযুক্তি খাতের দ্রুত উন্নয়ন চীনা বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রয়াসের ফলাফল।

 

২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, চীন ৩.৩৬ মিলিয়নেরও বেশি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এ সময় গবেষণা পত্রগুলি ৪৩.৩২ মিলিয়ন-বার উদ্ধৃত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ্বে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা ও সাইটেশনের পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরই অবস্থান করছে চীন।

 

মোহাম্মদ তৌহিদ

চায়না মিডিয়া গ্রপ, বাংলা বিভাগ।