ডিসেম্বর ২০: গতকাল (রোববার) পাকিস্তানের উদ্যোগে রাজধানী ইসলাবামাদে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার ১৭তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের বিশেষ বৈঠক আয়োজন করা হয়। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদেশসমূহের ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রায় ৭০টি প্রতিনিধিদল আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি ও সেদেশে সাহায্য করা নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেন।
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার ১৭তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের বিশেষ বৈঠক দু’দিন চলেছে। ১৮ ডিসেম্বর ছিলো ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তান, সৌদি আরব ও তুরস্কসহ সংস্থার সদস্যদেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে পর্যায়ক্রমে ভাষণ দেন এবং আফগানিস্তানের মানবিক সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক উপ-মহাসচিব ও জরুরি উদ্ধার সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির পরিসখ্যান থেকে জানা গেছে, আফগানিস্তানে দরিদ্র লোকসংখ্যা ৯৭ শতাংশে দাঁড়াবে; এক বছরের মধ্যে আফগানিস্তানের জিডিপি ৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে। আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে যে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল, তা এই বছরের মাঝামাঝি সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেদেশে মৌলিক পরিষেবাশিল্প ভেঙে পড়বে।
‘আফগান অর্থনীতি তলিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ না করি, আমি উদ্বিগ্ন যে, তীব্র অর্থনৈতিক মন্দা সমস্ত আফগানিস্তানককে গ্রাস করবে। বর্তমানে ২ কোটি ৩০ লাখ আফগান মানুষ ক্ষুধার সম্মুখীন হচ্ছে। চিকিত্সার স্থাপনার অভাব আছে এবং শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ৭০ শতাংশ শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন না, ব্যাপকভাবে শিশুরা স্কুল ছাড়ছে। আফগানিস্তানের মুদ্রার মান ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর্থিক বিভাগের ওপর আস্থাহীনতার কারণে বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঋণ ও বিনিয়োগের জায়গা অনেক কমে গেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা সেদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আফগান জনগণের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি, মানবিক সংস্থাগুলোকে সচল রাখতেও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।’
ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ আল-জাসের বলেন, এখন জরুরি কাজ হলো আফগানিস্তানকে খাদ্য, বাসস্থান, দূষণমুক্ত পানি, শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ও ক্যাশসহ বিভিন্ন নিদ্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিশ্চিত করা। তবে, আফগানিস্তানকে কেবল মানবিক সাহায্য দিলে চলবে না। স্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে এর টেকসই উন্নয়নকে বেগবান করা উচিত্। তাই ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক আফগানিস্তানের মানবিক ট্রাস্ট ফান্ড পরিষেবার দায়িত্ব বহন করবে। আল-জাসের বলেন,
‘আমরা আশা করি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সংস্থা, ব্যক্তিগত বিভাগ ও পরোপকারীরা এই তহবিলকে সমর্থন করবে। এই তহবিল আফগানিস্তানসহ অন্যান্য অঞ্চলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার সাথে সাথে আফগানিস্তানের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও দেবে বলে আমি আশা করি।’
১৭তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের বিশেষ সম্মেলনের পর অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে এবারের সম্মেলনে ‘আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি’ সংক্রান্ত এক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
‘প্রথমত, সম্মেলনে মানবিক ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সম্মেলনে আফগানিস্তানে খাদ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা চালু হয়েছে। তৃতীয়ত, আর্থিক ও ব্যাংকিং চ্যানেল চালু করা হবে। আর্থিক সেবা না-থাকলে অর্থনীতি চালানো সম্ভব হবে না। চতুর্থত, আফগানবিষয়ক ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করা হবে।’
এবারের সম্মেলনে গোটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মানবিক সহায়তার পথে বাধা না-দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ দমন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন অন্য দেশের বিরুদ্ধে হামলার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার না করতে পারবে না বা পারা উচিত নয়। (লিলি/আলিম/জিনিয়া)