গত শনিবার ছিল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের যোগদানের ২০তম বার্ষিকী। দীর্ঘ দুই দশকে চীনের সার্বিক জাতীয় শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের ভূমিকা বেড়েছে। এই ২০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতি উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে চীন। সংস্থায় চীনের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বের আর্থিক মহল ও নানা ব্যক্তিত্ব।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০ বছরে চীনের অর্থনীতি দ্রুত উন্নত হয়েছে; সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ অব্যাহত থেকেছে; এবং দেশের মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। আর এর মাধ্যমে চীন সব উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর থেকে চীন ধাপে ধাপে উন্মুক্তকরণ বাড়িয়েছে। চীনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হচ্ছে এবং অন্য দেশের পণ্যও চীনে প্রবেশ করছে। ২০১৮ সালের পর থেকে প্রতিবছর চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা আয়োজন করছে।
ডাব্লিউটিও-তে যোগ দেওয়ার দুই দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক ফোরামে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান এনগোজি ওকোনজো-আইওয়েলা বলেন, বিগত ২০ বছরে চীন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। চীন বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচন দূরীকরণ ও মহামারী প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং ডাব্লিউটিও-র সংস্কারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
সংস্থায় চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি লি ছেং কাং বলেন, এ সংস্থায় যোগদান শুধু চীনের জন্য বিরাট অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য এনে দিয়েছে তা নয়, বরং বিশ্বের অর্থনীতি ও বিভিন্ন দেশের জনগণের জন্যও কল্যাণ বয়ে এনেছে। চীন দৃঢ়ভাবে বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থাকে সমর্থন করে যাবে, মহামারী প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হিসেবে অবদান রেখে যাবে, এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কারকে সমর্থন করবে।
এদিকে, গত সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি শুধু চীনের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের জন্যও কল্যাণকর। চীন সঠিকভাবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করছে। চীন বিশ্ব অর্থনীতি উন্নয়নের চালিকাশক্তি। চীন জলবায়ু নীতিমালা চালু করেছে। এটি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিগত ২০ বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের অবদান ৩.৬ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ডাব্লিউটিও’তে যোগ দেওয়ার পর উন্মুক্তকরণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হিসেবে ২০১৩ সালে চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ গ্রহণ করে। চীন মধ্যবিত্ত জনসংখ্যার বৃহত্তম দেশ। বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার চীন। ২০০৬ সাল থেকে টানা ১৫ বছর ধরে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে ওই সময় চীনের বার্ষিক অবদান গড়ে ৩০ শতাংশ। সংস্থায় অন্তর্ভুক্তির ২০ বছরে চীনের অর্থনীতি দ্রুত বেড়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীনের জিডিপি বেড়েছে ৮ গুণ। এখন চীনের মাথাপিছু জিডিপি ১০ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ওই সময় চীনে মোট বৈদেশিক বাণিজ্যও প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক ফোরামের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ৫.৯ শতাংশ এবং এতে চীনের অবদান থাকবে ২৬.৩ শতাংশ।
চীন আমদানি ও রপ্তানির ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নে অবিচল রয়েছে। আমদানির পরিমাণও বছর বছর বাড়ছে। চীন টানা ১২ বছর ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় চীনের উন্মুক্তকরণ আরও বাড়ানো হবে যাতে বিশ্ব চীনের উন্নয়নের সুযোগ উপভোগ করতে পারে। সম্প্রতি এ ঘোষণা দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং।
মূলত, চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর সংস্থার স্বাধীনতা ও বহুপক্ষবাদের নীতি রক্ষা করেছে এবং অন্য সদস্য দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মুক্ত ও ন্যায্য বাণিজ্য জোরদারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে চীনের অবদান সবচেয়ে বেশি। চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং ভূরাজনীতির শক্তিশালী দেশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীন অব্যাহতভাবে অন্যান্য দেশের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে।