হংকংয়ের চলচ্চিত্র পরিচালক ড্যান্টে ল্যাম
2021-12-16 15:17:19

 

হংকংয়ের চলচ্চিত্র পরিচালক ড্যান্টে ল্যাম_fororder_林超贤

‘Operation Mekong’ এবং ‘OPERATION RED SEA’ নামের মুভি চীনের মূলভূভাগ ও হংকংয়ে আলোড়ন তৈরি করেছিল। এরপর ‘The Battle at Lake Changjin’ মুভিও দুই অঞ্চলে বিখ্যাত হয়েছিল। এগুলো মূলধারার চলচ্চিত্র। এর পিছনে রয়েছেন হংকংয়ের এক বিখ্যাত ব্যক্তি।

 

তিনি বলেন, মূলধারার চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের ইতিবাচক শক্তি দিতে পারে এবং চীনা গল্প তুলে ধরার দুর্দান্ত পদ্ধতি এবং দর্শকদের আনন্দ দিতে পারে এসব চলচ্চিত্র।

তিনি বলেন, চলচ্চিত্র শুটিংয়ের প্রক্রিয়ায়, শরীর ও মন দিয়ে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানার বিশাল সুযোগ অনুভব করা যায়।

তিনি হলেন হংকংয়ের চলচ্চিত্র পরিচালক ড্যান্টে ল্যাম। তিনি চীনের মূলধারার চলচ্চিত্র ও যুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা আরও উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করতে চান।

যখন ‘The Battle at Lake Changjin’ নামে চলচ্চিত্র শুটিংয়ের আমন্ত্রণ পান, তখন চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হতে মাত্র আড়াই মাস বাকি ছিলো। মার্কিন হামলা প্রতিরোধ ও উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য দান-বিষয়ক একটি চলচ্চিত্রের বিষয়ে তিনি মনে করেন, প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বা ঐতিহাসিক জ্ঞান অর্জন; যাই হোক না কেন, তিনি তা সম্পন্ন করতে পারবেন না।

 

তিনি চলচ্চিত্র শুটিং করার আমন্ত্রণ পাওয়ার সেই অনুভূতি বর্ণনা করে বলেন, তখনকার অনুভূতির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের মেজাজের মিল পাওয়া যায়। যখন কাজের অর্ডার পাই তখন ট্রেনে উঠি। পুরোপুরি জানতাম না, কিসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি! তবে কাজটি আপনার সামনে। আপনি কেবল এগিয়ে যেতে পারেন, ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

 

শূন্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডিজাইন, এমনকি প্রপস এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে আমরা পূর্ণতা অর্জনের জন্য চেষ্টা করি। ড্যান্টে ল্যাম বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকদের ইচ্ছা প্রশংসার যোগ্য। আমি দর্শক ছাড়া, যারা সেই যুদ্ধে জীবন উত্সর্গ করেছেন, তাদের জন্য এই চলচ্চিত্র শুটিং করতে চাই।’

 

চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য প্রসঙ্গে ড্যান্টে ল্যাম বলেন, সেই দৃশ্যে আগের সেকেন্ডে যারা আড্ডা দিচ্ছিল- পরের মুহূর্তে তারা বোমা বিস্ফোরণে মারা যায়। মাত্র চার মিনিটের শট আমরা প্রায় ১০ মাস ধরে তৈরি করেছি।

 

ড্যান্টে ল্যাম বলেন, যুদ্ধের চলচ্চিত্রে গুলি ও বুলেটের ঘন ঘন ব্যবহার আছে। তবে এবার তিনি আরও কঠিন পদ্ধতি গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন।  তিনি স্ট্যাটিক ব্যবহার করে উত্তেজনা তৈরি করা এবং সিনেমার পরিবেশে দর্শকদের নিমজ্জিত করার চেষ্টা করেছেন।

 

‘আজ রাতে তাপমাত্রা কত ডিগ্রি নামবে?’

‘মাইনাস ৪০ ডিগ্রি!’

চলচ্চিত্রের এই কথোপকথন থেকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরা সেই যুদ্ধের সময়ের ভয়ানক খারাপ আবহাওয়ার কথা বোঝা যায়।

আরও ভালোভাবে সেই ইতিহাস তুলে ধরতে এ চলচ্চিত্র শুটিংয়ের কাজ শীতকালীন ঝড়ো আবহাওয়ায় সম্পন্ন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রায়শই রাতে মিছিল করত। তাই চলচ্চিত্রে বেশিরভাগ চিত্রায়নে রাতের দৃশ্য দেখা যায়।

 

ড্যান্টে ল্যাম স্বীকার করেন, জীবনে মাত্র একবার এত কঠিন চলচ্চিত্র শুটিংয়ের কাজ করেছি।

শুটিংয়ের সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, টানা ২ মাস রাত তিনি পাহাড়ে কাটিয়েছেন। শুটিংয়ের পরিবেশে গড় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং প্রায় প্রতি রাতেই প্রবল বাতাস বইতো, কখনও তা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যেতো।

 

নেটিভ হংকংয়ের বাসিন্দা হিসেবে ড্যান্টে ল্যাম বলেছেন যে, তিনি ঠান্ডাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পান।

‘মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রা অনেক ঠান্ডা হয়, আমরা কেউ নড়াচড়া করতে চায় না। মাইনাস ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পরিবেশে স্বেচ্ছাসেবক সেনারা পাতলা জামাকাপড় পরেছিল এবং তাদের লজিস্টিকের অভাব ছিল। মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ করতেই হতো। ড্যান্টে ল্যাম বলেছেন, ‘যখন আমি এটি ভাবি তখন আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারি না যে। স্বেচ্ছাসেবী সেনারা এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রাণপণ জয়ের চেষ্টা করেছেন এবং আমরা কখনই পরাজয় স্বীকার করতে পারি না।

হংকংয়ের চলচ্চিত্র পরিচালক ড্যান্টে ল্যাম_fororder_林超贤1

 

স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ঠান্ডা ও কষ্টকে ভয় না পাওয়া এবং সর্বদা একটি উচ্চ মনোবল বজায় রাখার চেতনাকে শক্তি দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

ড্যান্টে ল্যাম বলেন, তিনি ছোটবেলায় হংকংয়ে বড় হয়েছেন। ‘Operation Mekong’ এবং ‘OPERATION RED SEA’ নামের মুভি থেকে বর্তমানের ‘The Battle at Lake Changjin’ মুভি পর্যন্ত, তিনি প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানার পর তার মনে বিশাল প্রভাব পড়েছে। ফলে তার মনে তুমুল দায়িত্বানুভূতি ও চলচ্চিত্র তৈরির অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়।

 

কেউ তাকে জিজ্ঞাস করেন যে, একজন হংকংয়ের পরিচালক হিসেবে কেন তিনি এত বেশি মূলধারার চলচ্চিত্র শুটিং করছেন? উত্তরে তিনি বলেন, হলিউড চলচ্চিত্রের মূলধারা আছে। বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীনে কেন নিজের মূলধারার চলচ্চিত্র তৈরি করা সম্ভব নয়?

 

বিভিন্ন সময় নিজের পরিচালিত মূলধারার শিল্পকর্মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে তৈরি বিভিন্ন চলচ্চিত্রের বিষয় একটু ভিন্ন রকম।

তিনি বলেন, ‘Operation Mekong’ নামের চলচ্চিত্রে আমি যে বিষয় প্রকাশ করতে চাই, তা হলো এই বিশ্বের সবখানে শান্তি নেই। কেবল কেউ কেউ আপনার জন্য ভারি দায়িত্বের বোঝা কাঁধে বহন করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। ‘OPERATION RED SEA’ নামে মুভিতে যে বিষয় প্রকাশ করতে চাই, তা হলো আসলে আমরা শান্তিপূর্ণ যুগ নয়, বরং সৌভাগ্যক্রমে শান্তিপূর্ণ দেশে বাস করছি। ‘The Battle at Lake Changjin’ মুভিতে আমি যে বিষয় তুলে ধরতে চাই, তা হলো- আশা করা হচ্ছে যে, প্রত্যেক চীনা মানুষকে মনে রাখতেই হবে যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন উত্সর্গের বিনিময়ে আমাদের বর্তমান সুখী জীবন পাওয়া যায়। তাই আমাদের শান্তিপূর্ণ জীবনকে সবসময়ই মূল্য দিতে হবে।

 

ড্যান্টে ল্যাম বলেন, চলচ্চিত্রের সারমর্ম হলো ভালো গল্প বলা এবং মূল্যবোধ প্রকাশ করা। মূলধারার চলচ্চিত্র দর্শকদের মনে ইতিবাচক শক্তি দেয়।

 

তিনি বলেন, প্রতিবার যখন আমি দেখি, আমার পরিচালিত চীনা গল্প দর্শকদেরকে মুগ্ধ করেছে, দর্শকদের মাঝে একই আবেদন সৃষ্টি করেছে; তখন পরিচালক হিসেবে আমার কৃতিত্ব ও সুখের একটি দুর্দান্ত অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই অনুভূতিটি এমন কিছু যা আমি অন্য থিমের চলচ্চিত্র শুটিং করার সময় অনুভব করি না।

 

‘The Battle at Lake Changjin’ নামে চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার পর ব্যাপক প্রশংসা হয়। এটি ২০২১ সালে বিশ্বের বক্স অফিসের‌র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে আছে। এই ধরনের ফলাফল দেখে ড্যান্টে ল্যাম বলেন, ‘আগে আমি এই চলচ্চিত্র নিয়ে সত্যিই চিন্তিত ছিলাম। আমি কল্পনা করতে পারি নি যে, মূলধারার চলচ্চিত্র নিয়ে দর্শকদের এত উদ্দীপনা  থাকবে।

 

তিনি বলেন, এ চলচ্চিত্রটির সাফল্যের প্রধান কারণ হলো চীনা সৈন্যদের সাহসী এবং দৃঢ় মনোভাব। যেহেতু দেশ শক্তিশালী হয়েছে, তাই চীনা মানুষ বড় পর্দার যুদ্ধে আমাদের বিজয় দেখতে ও বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে চায়।

‘The Battle at Lake Changjin’ মুভিটি হংকংয়ের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার প্রথম দিনে টিকিট পাওয়া খুব কঠিন বিষয় ছিল।

 

‘The Battle at Lake Changjin’ নামের মুভিটি জন্মস্থানে জনপ্রিয় হতে দেখে ড্যান্টে ল্যাম খুব আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘মূলধারার চলচ্চিত্র খুব আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু এবং নির্বাচন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হংকংয়ের সামাজিক পরিবেশও দিন দিন ভালো হয়ে উঠছে। আরও বেশি হংকংবাসী প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এবং চীনা হিসেবে মনে গর্ব বোধ করতে চান।’

 

ড্যান্টে ল্যাম বলেন, ‘Operation Mekong’, ‘OPERATION RED SEA’ এবং ‘The Battle at Lake Changjin’-এর মনোমুগ্ধকর গল্প দেশের উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে। তার ধারণায়  ‘The Battle at Lake Changjin’ চলচ্চিত্র হংকংয়ে সমাদর পাওয়া একটি ভালো লক্ষণ। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, চলচ্চিত্র ভালো একটি মাধ্যম হিসেবে আরো ভালোভাবে দেশকে জানার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। তিনি আশা করেন, আরও বেশি হংকংয়ের চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রী দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবেন এবং আরও আকর্ষণীয় চীনা গল্প বলতে পারবেন।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)