জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা চীনের উচ্চমানের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার’ প্রথম বছর কার্বন ডাই অক্সাইডের সর্বোচ্চ নির্গমন এবং কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন-সংক্রান্ত সরকারি কর্ম-রিপোর্টে এ-কথা লেখা হয়েছে। একটি অর্থনৈতিক সমাজ নির্মাণের পদ্ধতিগত সংস্কার সারা দেশে চালু হয়েছে।
ভবিষ্যত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চীনের সবুজ নিম্ন-কার্বন রূপান্তর পদক্ষেপের গতি আরও বাড়বে। গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে কার্বন ডাই অক্সাইডের সর্বোচ্চ নির্গমন পরিকল্পনা ধারাবাহিকভাবে কার্যকর করা এবং চীনের কার্বন বাজার অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণ হবার সঙ্গে সঙ্গে নতুন শক্তি-চালিত অটোমোবাইল, আলো ও বায়ু সম্পদ স্টোরেজ ব্যবস্থাপনাসহ নতুন শক্তিচালিত শিল্প চেইন আরও বেশি কাঠামোগত সুযোগ লাভ করবে।
৭ ডিসেম্বর কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌ চিন লুং সামগ্রিক জ্বালানি পরিষেবা স্টেশন আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। সাইনোপেক গ্রুপ আগের এই ‘তেল বিক্রেতা’ নির্দিষ্ট সময় আগে চার্জিং ও পাওয়ার ব্যাটারির দ্রুত প্রতিস্থাপন শক্তি স্টেশন এবং বিতরণ ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশনের বার্ষিক লক্ষ্যবস্তু সম্পন্ন করেছিল।
দৃঢ়ভাবে সবুজ নিম্ন-কার্বনের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুধু প্রতিষ্ঠানগুলির নয়, বরং দেশের দায়িত্ব। ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন ডাই-অক্সাইডের সর্বোচ্চ নিঃসরণ এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করা—২০২০ চীনের বৈশ্বিক ঘোষণা। এটি বাস্তবায়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে চীন।
অসম্পূর্ণ এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চীন মোট ২০টিরও বেশি ‘দুটো কার্বন’ সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া চায়না সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশন- সিএসআরসি সবুজ নিম্ন-কার্বন প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল গঠন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্বন নির্গমন হ্রাস কাজে সমর্থন দেওয়ার ব্যবস্থা এবং ২০ বিলিয়ন ইউয়ানের দূষণমুক্ত কয়লার উচ্চ দক্ষতা-সম্পন্ন ব্যবহারের পুনঃঅর্থায়নে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। চীন সবুজ নিম্ন-কার্বন উন্নয়নের প্রতিও নীতিগত সমর্থনের মাত্রা গড়ে তুলেছে।
উচ্চমানের সবুজ উন্নয়নের উজ্জ্বল প্রেক্ষাপট রয়েছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদ্যুত্ উত্পাদনের ক্ষমতা ছিল ১০০ কোটি ২০ লাখ কিলোওয়াট। যা ২০১৫ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং সারা দেশের বিদ্যুত উত্পাদনের মোট বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতার ৪৩.৫ শতাংশ। প্রথম তিন প্রান্তিকে দূষণমুক্ত জ্বালানির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ০.৬ শতাংশ বেশি হয়েছে।
দু’টো কার্বনের ‘এক+এন’ নীতিগত ব্যবস্থা অধিকতরভাবে সু-সম্পূর্ণ হবে। চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জাতীয় উন্নয়ন সংস্কার কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে শিল্প খাত এবং ইস্পাত, অ-লৌহ ধাতু, পেট্রোকেমিক্যাল রাসায়নিক ও নির্মাণসামগ্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে কার্বন ডাই অক্সাইডের সর্বোচ্চ নির্গমন কার্যকর করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
‘দুটো কার্বন’ লক্ষ্যবস্তু কার্যকর করার গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে গত ১৬ জুলাই চায়না কার্বন এমিশন ট্রেড এক্সচেঞ্জ (সিসিইটিই) আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। বর্তমানে সিসিইটিই’র প্রথম কর্মক্ষমতা পর্যায়ের কাজ চলছে।
বাস্তুশাস্ত্র ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বরের আগে সারা দেশের ৯৫ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ নিঃসরণ ইউনিট চুক্তি সম্পন্ন করবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের আগে সব গুরুত্বপূর্ণ নিঃসরণ ইউনিটি চুক্তির কাজ সম্পন্ন করবে। চুক্তি পালনের মেয়াদ আসার সঙ্গে সঙ্গে সিসিইটিই’র তারল্য ক্রমেই বাড়ছে।
ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি পরিবেশ অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান জাং সি লিয়াং বলেন, সিসিইটিই কম খরচে কার্বন নিঃসরণের মোট পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যাতে অর্থনৈতিক খাতের রূপান্তর, উন্নয়নে উত্সাহ দেওয়া এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি গঠনের কাজ জোরদার করা যায়। এটি জ্বালানি সাশ্রয় ও দূষিত পদার্থ নির্গমন হ্রাস নীতির গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীলতা।
জাং সি লিয়াং আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে কোনও একটি উন্নয়নশীল দেশ পরিপক্ব ও স্থিতিশীল কার্বন বাজার প্রতিষ্ঠা করে নি। চীনের কার্বন বাজার বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বাজার হয়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন বাজার প্রতিষ্ঠা এবং আঞ্চলিক কার্বন বাজার সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।’
‘চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনায় শিল্প খাতে সবুজ উন্নয়ন পরিকল্পনা’ অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ চীনের সবুজ পরিবেশ সংরক্ষণ শিল্প খাতে উত্পাদনের পরিমাণ ১১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হবে। নতুন জ্বালানি সম্পদ, নতুন উপকরণ ও নতুন শক্তি-চালিত গাড়িসহ বিভিন্ন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন দেওয়া হবে।
নতুন জ্বালানিসম্পদ শিল্পের জনপ্রিয়তা আগামী বছর বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় জ্বালানি ব্যুরো প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন প্রাদেশিক পর্যায়ের জ্বালানি প্রশাসন বিভাগকে ১৫ ডিসেম্বরের আগে দেশের দ্বিতীয় দফার মরুভূমি ও পতিত জমির বৃহদাকার বায়ু শক্তি ফটোভোলটাইক (পিভি) তালিকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ প্রথম দফায় ২১টি বৃহদাকার বায়ু শক্তি ফটোভোলটাইক (পিভি) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে । নির্মাণের পরিমাণ হবে ৫৫.১৪ গিগাওয়াট।
ওরিয়েন্ট সিকিউরিটিজের গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, নতুন জ্বালানিসম্পদ ব্যবস্থার কাঠামোগত বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। “‘চতুর্দশ পাঁচশালা’ পরিকল্পনা চলাকালে চীনের বায়ু ও বিদ্যুতশিল্পের বার্ষিক গড় বিদ্যুত্ উত্পাদন ৫৪ গিগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। পিভি’র পরিমাণও বাড়তে থাকবে। অনুমান করা হচ্ছে- ২০২২ সালে বিশ্বের বিদ্যুত্ উপাদন চাহিদা ১৯০ থেকে ২১০ গিগাওয়াটে উন্নীত হবে। যা চলতি বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি সঞ্চয়ের ক্ষমতাও ধাপে ধাপে বাড়তে থাকবে।
(প্রেমা/তৌহিদ)