যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল তেমনটিই হয়েছে। অবশেষে করোনার অতিসংক্রামক ধরন ওমিক্রন পাওয়া গেলো বাংলাদেশে। প্রথমবারের মতো করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হলো ২ জনের দেহে। জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটার ভাইরাসটির এ ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন।
১১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে নিজেই এ ঘোষণা দেন। করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ধরা পড়ে তারা ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত। তবে ওই দুই নারী ক্রিকেটারের কোনো বড় ধরনের সমস্য হয়নি, তারা ভালো আছেন। নিয়ম অনুযায়ী ২ সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ওই দুই নারী ক্রিকেটারের আশপাশে যারা ছিলেন তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এদিকে জিম্বাবুয়ে থেকে ফেরা নারী ক্রিকেট দলের বাদবাকি সবাই করোনা নেগেটিভ বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এটাকে তিনি বিরাট সুখবর হিসেবে অভিহিত করেন।
নারী ক্রিকেট দলের ২ জন ছাড়া অন্যরা করোনা আক্রান্ত হননি এটা সুখবর বটে। কিন্তু তাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। আর যে দুজন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সংস্পর্শে আসাদের ট্রেসিং করার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সে কাজে কতটুকু অগ্রগতি আমাদের জানা নেই। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে বের করার কথা বলা হলেও- তাদের কাউকে আদৌ ট্রেস করা সম্ভব হয়েছে কি না তাও আমরা জানিনা। এর ফলে তারা যে করোনার অতিসংক্রামক ওমিক্রন ধরন ছড়াচ্ছেন না- তার নিশ্চয়তা নেই। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ জোরালো উদ্যোগ নেবে এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।
যদিও ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছে, দেশের আর কেউ ওমিক্রণ শনাক্ত হননি। তবে করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন তিনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও সবার প্রতি আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সতর্কবাণীকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২ জনের মধ্যে করোনার ওমিক্রন ধরন শনা্ক্ত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে এর আগমন ঠেকানো প্রায় দুঃসাধ্য। কিন্তু সম্ভাব্য সব ওপায়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে এটির ছড়ানো সীমিত রাখতে। না হলে ওমিক্রনই নিয়ে আসতে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে, ওমিক্রনের কালো ছায়ার মধ্যেই গত সপ্তাহে বেশ কটি খবর সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। এর একটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আয়োজিত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনজন নোবেল বিজয়ী অলিভার হার্ট, কনস্টান্টিন নভোসেলব এবং তাকাকি কাজিতাসহ সাত জন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন।
১০ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর উদ্বোধন করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব এখন বাস্তবতা। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে দরকার দেশের বিপুল জনশক্তিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রেক্ষাপটে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
১১ ডিসেম্বর চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে সম্মেলনের সমাপনী আয়োজনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে ভাষণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও নীতিমালা তুলে ধরেন তিনি। দেশের আইটি পার্কগুলোতে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসও উদযাপন করা হয় নানা আয়োজনে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।