মার্কিন গণতন্ত্রের অবস্থা এবং চীনা গণতন্ত্রের রূপ প্রকাশ
2021-12-11 16:01:53

গত রোববার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনা ও ইংরেজি ভাষায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অবস্থা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পরদিন চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং একাডেমি ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে ১০টি প্রশ্ন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে আমেরিকান সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সামাজিক পরিস্থিতিসহ নানা দৃষ্টিকোণ থেকে মার্কিন গণতন্ত্র নিয়ে ১০টি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি চীনা গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

রোববার চীনের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, অর্থের রাজনীতি, ধনীদের শাসন ইত্যাদি কারণে আমেরিকান বৈশিষ্ট্যের গণতন্ত্র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ঘাটতি ও অপব্যবহারের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে এ ধরনের গণতন্ত্র রপ্তানির ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।

তথ্য ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি এ প্রতিবেদনে বলা হয়, আশা করা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সিস্টেম এবং গণতন্ত্রের অনুশীলনের উন্নতি ঘটাবে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগের পদ্ধতি পরিবর্তন করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র বছরের পর বছর ধরে ‘বিচ্ছিন্ন ও অধঃপতন’ হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের মূল বিষয় বাস্তবতা থেকে ক্রমশ বিচ্যুত হয়েছে। স্ব-বৈশিষ্ট্যযুক্ত আমেরিকান গণতন্ত্র এখন অর্থের রাজনীতি, ধনীদের শাসন, রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং একটি অকার্যকর ব্যবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

 

মার্কিন গণতন্ত্র যে ভুল হয়েছে তা দেশের অনুশীলন ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা, বর্ণবাদ বৈষম্য এবং কোভিড-১৯ মহামারীর দুঃখজনক ভুল ব্যবস্থাপনায় ৮ লক্ষাধিক প্রাণহানী। ফলস্বরূপ, ‘আমেরিকান-শৈলীর গণতন্ত্র খুব কমই জনবান্ধব ও নৈতিকতা সমুন্নত রাখতে পারে, বা জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে না- বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুষ্ঠিত ‘গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন’ সম্পর্কে বলা হয়- এর সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক নেই এবং এটি গণতন্ত্রের নামে একটি আধিপত্যবাদী কর্মসূচি।

 

এদিকে সোমবার চীনের রেনমিন ইউনিভার্সিটির ছংইয়াং ব্যাংকিং একাডেমির উদ্যোগে ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে ১০টি প্রশ্ন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভা বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০টিরও বেশি দূতাবাসের প্রতিনিধি, ২০টিরও বেশি বিদেশি গণমাধ্যম, ৪০টিরও বেশি দেশীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিক এতে যোগ দেন।

‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে ১০টি প্রশ্ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ২৩ হাজার শব্দ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ব্যবস্থার অনুশীলন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সামাজিক পরিস্থিতিসহ নানা দিক থেকে মার্কিন গণতন্ত্র নিয়ে ১০টি প্রশ্ন এতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের কারণে দেশটিতে বিশৃঙ্খলা ও মানুষের কঠিন জীবন তৈরি করেছে। পাশাপাশি, ওয়াশিংটন অন্য দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছে বলে প্রতিবেদনে তার সমালোচনা করা হয়।

এদিন সোমবার চীনের মুখপাত্র চাও লি চিয়ান বলেছেন, গণতন্ত্র গোটা মানবজাতির অভিন্ন সম্পদ এবং বিভিন্ন দেশের জনগণের অধিকার। এটি কোনও দেশের একক অধিকার নয়। গণতন্ত্র বাস্তবায়নের নানা পদ্ধতি আছে। একক মানদণ্ডে বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা যায় না। একক দৃষ্টিতে মানবজাতির রঙিন রাজনৈতিক সভ্যতা যাচাই করাই অগণতান্ত্রিক চিন্তা। যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশটির দীর্ঘকালীন চর্চার সাফল্য, যার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে, তা সবার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত ও লাইটহাউজ হিসেবে মনে করে আসছে। দেশটি সবসময় গণতন্ত্রের অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে ও যুদ্ধ চালায়। যার ফলে অনেক দেশ ও অঞ্চলে যুদ্ধ ভোগান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

 

এদিকে চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন- চীনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার জনগণের গণতন্ত্র হলো এক ধরনের উচ্চমানের গণতন্ত্র- যেখানে জনগণই দেশের মালিক। একটি দেশ নিজের রাজনৈতিক উন্নয়নের পথ এবং গণতান্ত্রিক মডেল বেছে নেয়- যা নির্ভর করে তার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পর্যায়ের ওপর। তা ছাড়া, কোনও দেশ গণতান্ত্রিক কি না- তা বিচার করবে সেদেশের জনগণ।