চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের তৃতীয় সংস্করণ প্রতিষ্ঠা শুরুর লক্ষ্যে আগামী ১ জানুয়ারি চীন-কম্বোডিয়া অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি শীর্ষক বাণিজ্য চুক্তিও (আরসিইপি) একই দিন কার্যকর হবে। সম্প্রতি অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের নির্মাণও গতি লাভ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের নির্মাণ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নততর কৌশলও দ্রুততার সাথে কার্যকর হচ্ছে। চীনের বিশ্বমুখীতা ‘অ্যাক্সিলারেটর কী’ প্রেস করা হয়েছে। দ্রুত অভ্যন্তরীণ প্রবাহকে প্রাধান্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রবাহকে নতুন উন্নয়ন কাঠামোর জন্য সহায়ক করে তুলবে চীন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে চীন ২৬টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ১৯টি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সাম্প্রতিক বেশ কিছু ব্যবস্থা থেকে দেখা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুততার সাথে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর ত্বরান্বিত করছে। গত ৩ নভেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আরসিইপি ২০২২ সালের ১ জানুয়ারিতে কার্যকর হবে। ২২ নভেম্বর মন্ত্রণালয়টি আবার বলেছে, চীন-কম্বোডিয়া অবাধ বাণিজ্য চুক্তি ২০২২ সালের ১ জানুয়ারিতে কার্যকর হবে।
অবাধ বাণিজ্য চুক্তির কার্যকর ত্বরান্বিত করা ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরো জানায়, দ্রুততার সাথে আরো বেশি উচ্চমানের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর ত্বরান্বিত করা হবে।
সম্প্রতি চীনের উপ-বাণিজ্য মন্ত্রী রেন হোং বিন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিবাচকভাবে ‘সার্বিক ও প্রগতিশীল ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব চুক্তি’ (সিপিটিপিপি) এবং ‘ডিজিটাল অর্থনীতি অংশীদার চুক্তি’ (ডিইপিএ)-তে চীনের যোগদান বেগবান করবে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা, ইসরায়েল ও নরওয়েই’র সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য আলোচনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে চীন। ‘আমরা আরো বেশি বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে অব্যাহতভাবে অবাধ বাণিজ্যের ‘বন্ধু চক্র’ সম্প্রসারণ করতে চাই, বলেন রেন হোং বিন।
এ ছাড়া, অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নতিও দ্রুত হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শু ইয়ুথিং বলেন, চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের তৃতীয় সংস্করণের নির্মাণ শুরু হবে। হাতে হাত রেখে আধুনিক, সার্বিক ও পারস্পরিক কল্যাণকর চীন-আসিয়ান আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণালয়ের আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণালয়ের উপ-প্রধান বাই মিং জানান, পারিপার্শ্বিকতার উপর ভিত্তি করে বিশ্বের উপর নজর রেখে চীনের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। বর্তমানে চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল ও আরসিইপি ছাড়া অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের নির্মাণ আরো বড় মাত্রার প্রভাব এবং সমন্বিত উন্নয়ন প্রভাব গড়ে তুলতে হবে।
দ্রুততার সাথে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল নির্মাণ করার সঙ্গে সঙ্গে চীন অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নততর কৌশল কার্যকর বেগবান করছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘চতুর্দশ পাঁচশালা’ পরিকল্পনা চলাকালে বৈদেশিক বাণিজ্যিক উচ্চমানের উন্নয়ন পরিকল্পনা উত্থাপিত হয়েছে। তাতে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নততর কৌশল কার্যকর হবে। অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল নির্মাণের সম্প্রসারণ, গুণগতমান এবং দক্ষতার উন্নয়ন বাড়িয়ে বিশ্বমুখী উচ্চমানের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।
উপ-বাণিজ্য মন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক আলোচনার উপ-প্রধান ওয়াং শৌওয়েন বলেছেন, আরসিইপি হবে চীনের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নততর কৌশল কার্যকর করার একটি নতুন সূচনা।
আরসিইপি একটি নতুন সূচনা। ভবিষ্যতে বিশ্বমুখী উচ্চমানের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় চীনের আরো অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। ওয়াং শৌওয়েন বলেন, ‘চতুর্দশ পাঁচশালা’ পরিকল্পনা চলাকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রসারণ, গুণগতমান এবং দক্ষতা উন্নত করে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নততর কৌশল কার্যকর করবে। অবাধ বাণিজ্যিক অংশীদারের আওতা সম্প্রসারিত হবে। অধিকতরভাবে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির বাণিজ্যিক বিনিয়োগের অবাধকরণ মান উন্নত হয়ে অধিকতরভাবে নিয়মের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি উন্নত হবে। এছাড়া, অধিকতরভাবে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়ন বৃদ্ধি পাবে।
ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের (ইউআইবিই) স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স অ্যান্ড ট্রেডের অধ্যাপক ছুই ফান বলেন, অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নততর কৌশল কার্যকর করতে আরো বেশি অবাধ বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, অবাধ বাণিজ্য কর্মকাণ্ডের মান উন্নত করা এবং অবাধ বাণিজ্য চুক্তির কার্যকারিতা বাড়ানো দরকার।
চীনের দ্রুত নতুন উন্নয়ন কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল দেশ-বিদেশ ‘দ্বৈত প্রবাহ’ সংযুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল ও বহনকারীতে পরিণত হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে অবাধ বাণিজ্যিক অংশীদার ২০১২ সালের ১২.৩ থেকে বর্তমান ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত উন্নত হয়েছে। এটা চীনের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের বড় ভূমিকার প্রতিফলন, বলেন বাই মেং।
নতুন উন্নয়ন কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় আরো ভালোভাবে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের ভূমিকা পালন করতে রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের বৈদেশিক অর্থনীতি গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান চাও চিনপিং মনে করেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দু’টো পরিস্থিতিকে সামগ্রিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করার ভিত্তিতে অধিকতরভাবে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নততর কৌশল কার্যকর করার পথ ও পর্যায় নিশ্চিত করা উচিত।
রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের বাজার অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান ওয়াং ওয়েই বলেন, নতুন উন্নয়ন কাঠামো উচ্চমানের বিশ্বমুখীতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা, পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়ন করা দরকার এবং অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্মুক্তকরণ ও উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা বাড়ানো উচিত।
(প্রেমা/এনাম)