‘পুরনো ব্যবস্থায় সংস্কার আনলে কর পরিস্থিতি বদলে যাবে’
2021-12-09 20:33:07

তানজিদ বসুনিয়া, ঢাকা: অর্থনীতির নানা সূচকে উন্নয়ন ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা সন্তোষজনক হলেও করের আওতায় আসছে না সামর্থবানরা। কর পরিশোধে নানা জটিলতা ও ভোগান্তির ভয় এখনো যায়নি সাধারণ মানুষের মন থেকে। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, গেল কয়েক দশকের পূরণো কর ব্যবস্থায় সংস্কার আনা না হলে পরিস্থিতি বদলাবে না।

‘পুরনো ব্যবস্থায় সংস্কার আনলে কর পরিস্থিতি বদলে যাবে’_fororder_ji2

আহমেদ ইসমাঈল হোসেন

 

রিটার্নের ফরমটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্বোধ্য মনে হয় আমরা অনেকেই জানিনা, কোন জায়গায়, কোন জিনিসটা সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন আরেকটা শঙ্কা, নিজে নিজে পূরণ করলে না আবার ভুল হয়ে যায়!“

বলছিলেন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আহমেদ ইসমাঈল হোসাইন। বছর শেষে কর দিতে গিয়ে তার মতো বিড়ম্বনায় পড়েন আরো বহু মানুষ। বলছিলেন, নিয়মিত কর পরিশোধ করলেও নাগরিক হিসেবে সুযোগ সুবিধা না পাওয়ার হতাশাও কাজ করে তার মধ্যে।

গেল ১০ বছর ধরে কর পরিশোধ করেন রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শিহাবুর রহমান। তিনি জানান, সময়মতো আয়কর জমা দিলেও এর বিনিময়ে সরকারি সেবা পাওয়া যায় কমই।

 

‘পুরনো ব্যবস্থায় সংস্কার আনলে কর পরিস্থিতি বদলে যাবে’_fororder_ji1

শিহাবুর রহমান

আমি ট্যাক্সটা কেন দেই? ট্যাক্স দেই কতগুলো সার্ভিস এর জন্য এখন আমরা যদি সার্ভিসের দিকে তাকাই, আমরা কি সার্ভিস পাই? রাজধানী শহরে চলাফেরা করা যায় না, রাস্তার যে অবস্থা, বিদ্যুতের যে অবস্থা, গ্যাসের যে অবস্থা এই ট্যাক্সের টাকা দিয়ে তাহলে কী করা হয়?”

 

কর পরিশোধেরের জটিল প্রক্রিয়া ও হয়রানির ভয়ে করযোগ্য আয় থাকলেও কর দিতে আগ্রহ বোধ করেন না এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। ফলে কর আদায়ে সাফল্যের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষ বার্ষিক রিটার্ন জমা দিয়ে আয়কর দেন। জিডিপির তুলনায় কর আহরণে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। এর মধ্যে চলতি বছর এখন পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছেন সাড়ে ১৮ লাখ মানুষ। সে হিসেবে টিআইএন নম্বর থাকলেও এখন পর্যন্ত করের আওতার বাইরে আছেন সাড়ে ৫২ লাখ মানুষ।

অথচ টিআইএন নম্বর থাকার অর্থ কর দেবার উপযুক্ত হোন অথবা না হোন, অর্থবছর শেষে তার বার্ষিক আয়-ব্যয়ের একটি খতিয়ান, অর্থাৎ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে রাজস্ব বোর্ডে। মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে রিটার্ন দাখিলের সময় ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

২০১৭ সালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপির আকারের তুলনায় কর আদায়ের হার পৌনে ৯ শতাংশের কম। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে জিডিপির মোট ২১ শতাংশের আসছে কর থেকে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করছে সরকার।

কেন বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত কম—এমন প্রশ্ন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশাকে। তিনি বলছেন, এ জন্য দায়ী গেল কয়েক দশকে দেশের কর ব্যবস্থায় কোনো সংস্কার না আনা।