প্রাচীন চীনা সংস্কৃতির উত্তরাধিকার অন্বেষণের আশায় সত্তর বছর বয়সী ইতালীয় দাদি রেশমপথে আবার হাঁটতে প্রস্তুত
2021-12-07 13:00:44

প্রাচীন চীনা সংস্কৃতির উত্তরাধিকার অন্বেষণের আশায় সত্তর বছর বয়সী ইতালীয় দাদি রেশমপথে আবার হাঁটতে প্রস্তুত_fororder___172.100.100.3_temp_9500033_1_9500033_1_1_1e8fa9d0-89ad-49d2-8f0e-546d98e21da2

সম্প্রতি সত্তর বছর বয়সী একজন ইতালীয় ব্যক্তি রেশমপথে আবারও হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন খবর ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ভিয়েনা কামারোটা নামের এই হাইকার দক্ষিণ ইতালির মানুষ। তিনি মার্কোপোলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করার শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপের একজন সাংবাদিককে বলেন যে, তিনি এই হাইকিং ভ্রমণ তার একই বয়সী নারীদের জন্য উত্সর্গ করবেন এবং তাদের সবসময় স্বপ্ন পূরণের কথা বলবেন। তিনি আরও বলেন যে, প্রাচীন চীনা সংস্কৃতি খুব আকর্ষণীয়, তিনি মার্কোপোলোর সময় পথে যা ঘটেছিল তা রেকর্ড করতে চান।

 

ভিয়েনা কামারোটার বয়স ৭২ বছর। কয়েক বছর আগে তিনি রেশমপথে একা হাঁটার পরিকল্পনা করেছিলেন। মহামারী না হলে তিনি হয়তো এখন রেশমপথে থাকতেন। ভিয়েনা কামারোটা অবসর নেওয়ার আগে, একটি কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মকর্তা ছিলেন। হাইকিংয়ের প্রতি তার আবেগের কারণে তিনি একজন হাইকিং নেতাও হন। আগে তিনি ইউরোপ, ব্রাজিল, মাদাগাস্কার, নেপালসহ বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘ-দূরত্বের হাইকিং সম্পন্ন করেছেন। একবার জার্মান লেখক গয়েথে’র যাত্রাপথ অনুসরণ করে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে সিসিলিতে হাইকিং সম্পন্ন করেন। পরবর্তী ভ্রমণের জন্য তিনি মার্কো পোলোর পথ বেছে নেন। কারামোটা বলেন,

“আমি হাইক করার জন্য যে রুটগুলি বেছে নেই সেগুলির নানা গল্প আছে, শুধু এই রুটের গল্পই নয়, এই রুটে হেঁটে যাওয়া ব্যক্তির গল্পও রয়েছে। মার্কোপোলো একই জিনিস করেছিলেন। তিনি এশিয়াতে রেকর্ড তৈরি করেছিলেন। আমরা এশিয়াকে একটি কাল্পনিক স্থান হিসেবে ভাবতাম যার সাথে আমাদের ইউরোপের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু বাস্তবে এশিয়া আমাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।”

 

কামারোটার পরিকল্পনা দৃষ্টি আকর্ষণ করার একটি বড় কারণ হলো তার বয়স এবং তিনি এমন একটি কাজ বেছে নিয়েছেন যা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্পন্ন করা কঠিন। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ ইতালিতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই কিলোমিটার উঁচু বাড়িতে রয়েছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে রেশমপথ ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার শারীরিক সক্ষমতা ও স্বাস্থ্য তার বড় উদ্বেগের বিষয় নয়। কারণ তার দুই মেয়ে তাকে পথে সহায়তা দেবে এবং একজন ডাক্তারও আছে। সেই ডাক্তার প্রতিদিন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি বলেন যে, এই ভ্রমণে যাত্রা সম্পূর্ণ করতে না পারার ভয় কাটিয়ে ওঠাই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

 

তিনি বলেন, “আমি এই ভ্রমণটি সব নারীদের, বিশেষ করে আমার বয়সী নারীদের জন্য উত্সর্গ করতে চাই। কারণ, এই বয়সে অনেক নারী মনে করেন যে- তারা আর কোনও স্বপ্ন দেখতে পারবেন না এবং আর কোনও ঝুঁকি নিতে পারবেন না। আমি তাদের জন্য আমার ভ্রমণ উত্সর্গ করছি। তাদের বলার জন্য যে- সবসময় স্বপ্ন দেখতে হবে।”

প্রাচীন চীনা সংস্কৃতির উত্তরাধিকার অন্বেষণের আশায় সত্তর বছর বয়সী ইতালীয় দাদি রেশমপথে আবার হাঁটতে প্রস্তুত_fororder___172.100.100.3_temp_9500033_1_9500033_1_1_63f9227a-f3ca-4635-94be-e7a7acac7736

ভেনিস থেকে বেইজিং পর্যন্ত, কামারোটা ইউরোশিয়ার ১২টি দেশ ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু, তিনি কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেননি। তিনি এই পথের রীতিনীতি উপভোগ করবেন এবং রেকর্ড গড়বেন। তিনি মনে করেন যে, রেশমপথ বরাবরই দেশগুলির লোকেরা অসাধারণ জাতি এবং তিনি বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রশংসা করেন।

 

তিনি বলেন, “আমি সবসময় অনুভব করি যে হাইকিং আমাদের মনকে মুক্ত করতে পারে, কারণ আমরা মানুষের সাথে দেখা করতে পারি, মানুষের সাথে কথা বলতে পারি এবং পথে তাদের সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারি। ভ্রমণের মুহূর্ত দ্রুত চলে যায় এবং তা সংরক্ষণ করা কঠিন। তাই প্রতি রাতে আমি কী ঘটেছিল তা রেকর্ড করবো। মার্কো পোলোর মতো বই লিখতে পারবো কিনা আমি জানি না। এটা সহজ নয়, তবে আমি সবসময় বলি যে যতক্ষণ আমার শরীর ঠিক আছে, আমি কিছু করবো।”

 

২০ বছর আগে, একটি চীনা মেয়ে কারামোটার বাড়িতে থেকে ইতালিতে পড়াশোনা করেছিল। তারা আজও যোগাযোগ রাখেন।

কারামোটা সবসময় মনে করেন যে, চীনা সংস্কৃতি খুবই আকর্ষণীয়। যদিও তিনি বেইজিংয়ে এসে কী করবেন- তা নিয়ে ভাবেননি। তবে, তিনি সত্যিই জানতে চান কিভাবে প্রাচীন চীনা সংস্কৃতি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “কীভাবে প্রাচীন চীনা সংস্কৃতি চীনারা উত্তরাধিকার করেছে- তা কৌতূহলের বিষয়। কখনও আমি মনে করি যে, ইতালিতে এক সময় এধরনের প্রাচীন সংস্কৃতি ছিল। এখন আমরা সেই ঐতিহ্যগুলি ভুলে গেছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা সেসব ঐতিহ্যের প্রশংসা করতেন। কিন্তু চীনারা তা ভুলে যায়নি। আমি আশা করি, চীনা জনগণ আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে।”