পয়লা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের উত্তর ঢাকা কর্পোরেশন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চীনের চায়না ম্যাশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিএমইসি)-র সঙ্গে উত্তর ঢাকা কর্পোরেশনের বর্জ্য পোড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উত্পাদন প্রকল্পের পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের মোট বরাদ্দ হবে ৪৯.১ কোটি মার্কিন ডলার। দিনে ৩ হাজার টন আবাসিক এলাকার বর্জ্য পোড়ানোর কারখানা নির্মাণের মাধ্যমে ৪২.৫ ম্যাগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যাবে। এর ফলে ঢাকা শহরের ৬০ লাখ মানুষের জন্য বর্জ্য সমস্যার সমাধান হবে এবং ১১ লাখ মানুষের জন্য তৈরি হবে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি চি মিং। এক ভাষণে তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রকল্প হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। চীন ও বাংলাদেশ সরকার এর ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খুঁজছে। আর চীন সবুজ ও নিম্ন কার্বন নির্গমন অর্থনীতিতে রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সবুজ, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় চীন সবসময় দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ করে, বাংলাদেশের নিম্ন কার্বন টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। এই প্রকল্পে চীনের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে, যা ঠিক দু’দেশের সবুজ নিম্ন কার্বন নির্গমন জ্বালানি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সদিচ্ছার প্রতিফলন।
বর্তমানে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনীতির উন্নয়ন সমানভাবে গুরুত্ব পায়। বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট ৬৫টি দেশের অধিকাংশে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদনের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বর্জ্য পোড়ানোর গড়পড়তা হার ১ শতাংশেরও কম। যেমন ভারত ২০১৩ সালে প্রথম বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদনের কারখানা স্থাপন করে।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা অনেক বেড়েছে। বহু বছরের উন্নয়নের পর চীনের বর্জ্য পোড়ানোর প্রযুক্তি পরিপক্ক হয়েছে এবং বিদেশের ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে। আর চীনের বর্জ্য পোড়ানোর প্রযুক্তি ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ দেশগুলো বিশেষ করে এশীয় দেশগুলোর জন্য খুব উপযোগী।
এবারের এই প্রকল্প ঠিক চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশবান্ধব সহযোগিতা প্রকল্প। এটি বাংলাদেশের প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদানের প্রকল্প। স্থানীয় বিদ্যুতের অভাব মেটানোর পাশাপাশি এতে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যও বাস্তবায়ন করা যাবে।
প্রকল্প স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ-জামান বলেন, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ দু’দেশের বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। প্রকল্পটি বাংলাদেশের ‘২০৪১ কৌশল’ বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে।
আসলে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সবুজ ও নিম্ন কার্বন নির্গমন খাতে সহযোগিতা চলছে, তা নয়। সিএমইসি’র সিপিসির শাখা সম্পাদক, জেনারেল ম্যানেজার ফাং ইয়ান সুই জানান, সিএমইজি গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর পর কোম্পানি চট্টগ্রামের ১ এবং দুই নং ২১০ ম্যাগাওয়াট প্রাকৃতিক বিদ্যুত্ প্রকল্প, এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশ নিয়েছে।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে সিএমইসি ছাড়া অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উন্নয়নে অবদান রেখেছে। বাংলাদেশে চীনের সহায়তায় নির্মিত সৌরশক্তি সড়ক বাতির ব্যবস্থা কয়েকটি বড় শহরে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে চীনা পোশাক প্রতিষ্ঠান-লিজ ফ্যাশন ঢাকার কারখানায় ফটোভোল্টাইক পাওয়ার স্টেশান স্থাপন করেছে, যাতে কার্বন নির্গমন কমানো যায়।
সম্প্রতি এপেকের ২৮তম অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবুজ ও নিম্ন কার্বন নির্গমন প্রচেষ্টায় সমর্থন দেবে। চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে চায়, যাতে আরো বেশি দেশের জনগণ উন্নয়নের সুফল উপভোগ করতে পারে।
বস্তুত, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সবুজ জ্বালানি সহযোগিতা হলো দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চীনের নেওয়া বাস্তব ব্যবস্থা। বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা আরও ফলপ্রসূ হবে।
(শুয়েই/আলিম)