গোটা বিশ্বের মতোই ওমিক্রন আতঙ্কে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। গত বেশ কিছু দিন ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যায়। করোনা সংক্রমণ ২ শতাংশের নিচে, আর মৃত্যু রয়েছে এক অঙ্কের কোঠায়। এমন একটা স্বস্তিকর পরিস্থিতি আচমকা বিপদের বার্তা নিয়ে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রন। অল্প কদিনে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে। প্রতিবেশি ভারতেও শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত করোনা রোগী। এর ফলে দেশে ওমিক্রন ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
করোনার অতিসংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রনের উদ্ভব দক্ষিণ আফ্রিকায়। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ দিনে দেশটিতে সংক্রমণ বেড়েছে ৪ গুন। শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সেখানে ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ সব করোনা রোগীর অধিকাংশই ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত।
করোনার ডেল্টা ধরনে চেয়ে তিনগুণ সংক্রামক ওমিক্রন প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যস্বাামী নাথান, স্পষ্ট জানিয়েছেন, করোনার ওমিক্রন ধরনটি খুবই সংক্রামক। তবে আতঙ্কিত না হয়ে বিশ্বের দেশগুলো এটি মোকাবেলায় প্রস্তুত হওয়া পরামর্শ তার। এ অবস্থায় যারা করোনা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়া, যারা দুই ডোজ নিয়েছে তাদের বুস্টার ডোজ নেওয়া এবং মাস্ক পরা ও স্বা্স্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে বাংলাদেশে ফের বড় বিপদে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি প্রতিরোধে তারা আপদকালীন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে কালক্ষেপণ না করতেও সতর্ক করেছেন তারা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিমান, নৌ ও স্থলপথে কঠোর নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে যে শৈথিল্য দেখা দিয়েছে তা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারকে ফের কঠোর হতে বলেছেন তারা।
যেহেতু এখনো অনেকেই টিকার আওতায় আসেনি, তাই জোরেশোরে টিকা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। টিকাদানের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখতে হবে হাসপাতালগুলোও।
সর্বোপরী করোনা জিনোম সিকোয়েন্সিং শুরু করতে বলছেন তারা-যাতে করে ওমিক্রন ছড়ালে তা শনাক্ত করা যায় সহজে।
দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের দেশগুলোতে ওমিক্রন শনাক্তের পর তৎপর হয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ। করণীয় ঠিক করতে ৩০ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। আড়াই ঘন্টার সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে কাউকে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তারপরও কেউ এলে সশস্ত্রবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কঠোর কোয়ারিন্টিনে থাকতে হবে তাদের। তাদের ৪৮ ঘন্টা আগে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট থাকতে হবে তাদের।
মনিটরিং করা হচ্ছে আকাশ, নৌ ও স্থলপথ। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সমাবেশের কোনো কর্মসূচি নতুনভাবে না নিতে বলা হচ্ছে। টিকা কর্মসূচি বেগবান করার পাশাপাশি বুস্টার ডোজ চালু করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওমিক্রন প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে এখনই লকডাউনের মতো কোনো কঠোর পদক্ষেপের কথা সরকার ভাবছে না বলে জানান তিনি।
ওমিক্রন প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এতসব বক্তব্য আশা জাগানিয়া। কিন্তু, এর কোনোটিই এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। সবচেয়ে ভয়ের কথা হচ্ছে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরা ২৪০ জন প্রবাসীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা যে ওমিক্রনের বাহক হয়ে দেশে ফেরেননি তার নিশ্চয়তা দেবে কে? আর যদি তাই হয়- তবে এরই মধ্যে দেশে যে ওমিক্রন ছড়ায়নি তাই বা নিশ্চিত হওয়া যাবে কীভাবে?
গত বছর বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে ঠিক এমন গাফিলতি করেছি আমরা। ইতালি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে না রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। যার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হয়েছে তা আমরা গত দেড় বছরে দেখেছি।
ওমিক্রনের ব্যাপারে একই ভুল ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই সময় থাকে সাবধান হতে হবে আমাদের।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।