‘নীতি সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে আকাশ পরিবহন খাত’
2021-12-03 18:31:08

সাজিদ রাজু, ঢাকা: স্বাস্থ্যঝুঁকি, অতিরিক্ত ভাড়া আর কোয়ারেন্টিনসহ নানা জটিলতায় আকাশ পরিবহনে মানুষের আগ্রহ কমেছে। ফলে যাত্রী সংকট আর রুট বন্ধ হওয়ায় লোকসানে বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলো। সরকারি-বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো বলছে, আর্থিক সংকটে কোন রকমে টিকে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন অবস্থায় এয়ারলাইন্স ও এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানী ও সার্চচার্জ কমানোসহ নীতি সহযোগিতা নিয়ে সরকার এগিয়ে এলে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে আকাশ পরিবহন খাত।

১৬ জুলাই কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় এসেছি আমার মূলত চট্টগ্রামের সঙ্গে কানেক্টিং ফ্লাইট ছিলো, কিন্তু করোনাকালে ওরা হয়তোবা কোন কারণে কানেক্টিং ফ্লাইটটা চালাতে পারেনি একারণে আমরা ঢাকায় নামি

বলছিলেন, চট্টগ্রামের বাসিন্দা, মালয়েশিয়া প্রবাসী আহমেদ জাহেদুল আনোয়ার। করোনার মধ্যেই জরুরি কাজে পরিবারসহ ঢাকায় ফেরেন তিনি। তার কাছে জানতে চেয়েছি, এ সময়ে আকাশ পথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা।

 

সিট ক্যাপাসিটির তুলনায় যাত্রী সংখ্যা কম ছিলো কিন্তু মানুষ গাদাগাদি করে বসেছে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়নি উড়োজাহাজের কেউ কোন ধরনের নির্দেশনাও দেয়নি তবে ভাড়া তো অনেক অনেক বেশি স্বাভাবিক সময়ে কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার যে ভাড়া, আমার আসতে তার দ্বিগুণ খরচ পড়ে গেছে

‘নীতি সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে আকাশ পরিবহন খাত’_fororder_jingji5

অনেক রুট। বাংলাদেশ বিমান বলছে, করোনার শুরু থেকে লোকশান গুণেও টিকে থাকা ও সেবাদান চালিয়ে যাওয়া জন্য নানা প্রচেষ্টা নিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

‘নীতি সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে আকাশ পরিবহন খাত’_fororder_jingji6

তাহেরা খন্দকার

“ বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির কারণে বিমানের ১৯টি রুট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতির একটু উন্নতি হয়েছে। টিকে থাকার জন্য করোনাকালীন আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমাদের ব্যয় কমিয়েছি, কিছু আয়ের উৎস ছিলো। এভিয়েশন নীতিমালা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করে করোনাকালে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন করেছে বিমান। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নতুন রুট সৈয়দপুর-কক্সবাজার উদ্বোধন হয়েছে। আবার নারিতা ও টরেন্টোতে ফ্লাইট পরিচালনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও চলছে। ”

বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বাণিজ্যিক সংগঠন আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা আইএটিএ বলছে, আগামী এক বছরের মধ্যে যাত্রী সংকট অনেকটাই কমে যাবে এয়ারলাইন্সগুলোর। বাড়বে ব্যবসা ও লাভের পরিমাণ।

চলতি বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বিসনেস কনফিডেন্স সার্ভে’তে আইএটিএ জানায়, এ জন্য সেবার মান বাড়াতে বাড়তি বিনিয়োগ ও কর্মী সংকটে পড়ারও আশঙ্কা আছে বিমান সংস্থাগুলোর।

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মনিটরের নির্বাহী সম্পাদক, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ আগেই কাটাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রুটের সংখ্যা বাড়ানো, বিভিন্ন চার্জ কমিয়ে দেয়াসহ কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ এখাতকে টিতে থাকতে সহযোগিতা করেছে। তবে পুরো মাত্রায় ব্যবসায় ফিরতে সরকারকে জ্বালানী তেলের দাম কমানোসহ আরো নীতি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান এ বিশেষজ্ঞের।

‘নীতি সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে আকাশ পরিবহন খাত’_fororder_jingji7

কাজী ওয়াহিদুল আলম, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ

সরকার সবচেয়ে বড় সহযোগিতা যেটা করতে পারে, গেল মাসে বার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে একটা এয়ারলাইন পরিচালনা করতে খরচের ৪০ ভাগই ব্যয় হয় জ্বালানীতে তো মাসে যদি বার সেই জ্বালানী তেলের দাম বাড়ে, গেল এক বছরে তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে, এতে তাদের আয় কমে গেছে কারণে টিকিট বিক্রি করে তারা অতিরিক্ত জ্বালানী খরচ তুলতে পারছে না আর দ্বিতীয়ত আমাদের এখানে যে কর কাঠামো আছে, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যেসব পেমেন্টের উপর সারচার্জ নেয় এটা প্রায় ৭২ শতাংশ এটা সারা বিশ্বের মধ্যেই অনেক বেশি নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য তারা কিছু চার্জ কমিয়েছিলো, কিন্তু আমার মনে হয় এসব চার্জ কমানোর সুযোগ আরো - বছরের জন্য দেয়া উচিত

কাজী ওয়াহিদুল হকের মতে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ যাত্রী সংকট এখনো আছে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাত্রী চাপ বাড়বে এবং বিমান সংস্থাগুলো যাত্রী পরিবহন ও বাণিজ্যে আগের ধারাবিকতায় ফিরতে পারবে বলেও মনে করেন তিনি।