ডিসেম্বর ২: গত ২৯ নভেম্বর, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং থেকে ভিডিও-লিঙ্কের মাধ্যমে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি ‘৯টি প্রকল্প’-এর কথা ঘোষণা করেন। চেচিয়াং নর্মাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ আফ্রিকান স্টাডিজের ডিন লিউ হংউ চীন সেন্ট্রাল রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের এক প্রতিবেদককে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের জোহানেসবার্গ সামিটের ‘দশটি প্রধান সহযোগিতা পরিকল্পনা’, বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনে ‘আটটি প্রধান পদক্ষেপ’ এবং এখন ডাকার সম্মেলনে ‘৯টি প্রকল্প’। এ থেকে বোঝা যায় চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার মান ক্রমশ উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার রাস্তা প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর হয়ে উঠেছে।
‘৯টি প্রকল্প’-এর মধ্যে প্রথমটি হল ‘স্বাস্থ্য প্রকল্প’। লিউ হংউউ বলেন, পরিবর্তিত নতুন ক্রাউন ভাইরাস ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী মহামারী প্রতিরোধের বর্তমান কার্যধারায় নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ‘চীন আফ্রিকাকে আরও ১০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে’ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে বোঝা যায় মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফ্রিকার সাথেই আছে চীন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, আফ্রিকা মহামারীর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ের একটি দুর্বল দিক। আফ্রিকায় আনুমানিক ১৩০ কোটি মানুষ আছে। চীনের ১০০ কোটি ডোজ টিকা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফ্রিকার সামর্থ্যকে ব্যাপকভাবে উন্নত করবে। এটি উল্লেখ করার মতো যে ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের ৪০০ মিলিয়ন ডোজ চীনা কোম্পানি আফ্রিকান দেশগুলোতেই যৌথভাবে উত্পাদন করবে। এর অর্থ চীন আফ্রিকান দেশগুলিকে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উত্পাদনে সক্ষম করে গড়ে তুলতে সাহায্য করছে।
একই সময়ে, চীন আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য ১০টি চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন মেডিকেল টিমের ১৫০০জন সদস্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে আফ্রিকায় পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এতে দেখা যায় যে, আফ্রিকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য চীনের সমর্থন বর্তমান ও ভবিষ্যতকে মাথায় রেখেই দেওয়া হচ্ছে। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফ্রিকাকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে চীন।
লিউ হংউউ বলেন, ‘৯টি প্রকল্প’ থেকে বোঝা যায় যে, চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা আফ্রিকান দেশগুলির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করছে এবং মানুষের জীবন ও জীবিকার সমস্যাগুলো সমাধানে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ‘৯টি প্রকল্পের’ দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘দারিদ্র্য হ্রাস এবং অনুকূল কৃষি প্রকল্প’। এতে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, চীন আফ্রিকাকে ১০টি দারিদ্র্যবিমোচন ও কৃষিপ্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করবে, ৫০০ জন কৃষিবিশেষজ্ঞ প্রেরণ করবে এবং চীন-আফ্রিকা আধুনিক কৃষির একটি ব্যাচ প্রতিষ্ঠা করবে। লিউ হংউউ বলেন, আফ্রিকার অর্থনৈতিক কাঠামো কৃষি দ্বারা প্রভাবিত, বেশিরভাগ জনসংখ্যা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষিকাজ করে এবং কৃষকরা প্রায়শই আফ্রিকার দরিদ্র মানুষ। ‘দারিদ্র্য হ্রাস এবং অনুকূল কৃষি প্রকল্প’ আফ্রিকার বিরাট সংখ্যক কৃষকের উপকার করবে এবং আফ্রিকান দেশগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।
লিউ হংউও বলেন, ‘৯টি প্রকল্প’ আফ্রিকাকে শুধুমাত্র ‘ভিত্তি তৈরি করতে’ নয়, বরং ‘ভবিষ্যত দেখতে’-ও সাহায্য করবে। ‘৯টি প্রকল্প’-এর ‘ডিজিটাল উদ্ভাবন প্রকল্প’ প্রস্তাব করেছে যে , চীন ১০টি ডিজিটাল অর্থনীতি প্রকল্প বাস্তবায়নে আফ্রিকাকে সহায়তা করবে, একটি চীন-আফ্রিকা স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিং অ্যাপ্লিকেশন সহযোগিতা কেন্দ্র তৈরি করবে এবং চীন-আফ্রিকা যৌথ পরীক্ষাগার নির্মাণে সহায়তা করবে। লিউ হংউউ বলেন, আফ্রিকার জনসংখ্যার বড় অংশ তরুণ। তাই এখানে ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন-আফ্রিকা ডিজিটাল অর্থনীতির সহযোগিতা দ্রুত বিকশিত হয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলো আফ্রিকা এবং ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকাকে সংযুক্ত করার জন্য বেশ কয়েকটি সাবমেরিন কেবল প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)