পান্ডার নামকরণের সাতকাহন
2021-12-01 11:07:11

পান্ডার নামকরণের সাতকাহন_fororder_src=http___msdfz.scdfz.org.cn_Upload_main_ContentManage_Article_image_8e0450b688184201b44f166efe6a1b0a.jpeg&refer=http___msdfz.scdfz.org

চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু পান্ডার কারণে বিশ্ববিখ্যাত একটি শহর। চেংতু শহরে একটি টর্চ ধরে আছে এমন একটি পান্ডার ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ছবির পান্ডার নামটি হল রং পাও। এটি ছেংতুতে অনুষ্ঠিত ৩১তম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গ্রীষ্মকালীন গেমসের মাসকট। আসলে রংপাও কোনো ছবি নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত পান্ডা।

গত বছরের অগাস্ট মাসে ছেংতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্মকালীন গেমসের মাসকট হিসেবে একে ব্যবহার করে এবং রং পাওয়ের নামকরণ অনুষ্ঠান করে। এসময় গণভোটের মাধ্যমে চেংতু পান্ডা প্রজনন গবেষণা কেন্দ্রের একটি পান্ডা তাদের মাসকট হিসেবে নির্বাচিত হয়। এই পান্ডার ডাক নাম হল তিল। মাসকট নির্বাচিত হবার পর সে আনুষ্ঠানিক রং পাও নাম পায় এবং পান্ডার বংশতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

রং পাওয়ের নামকরণ প্রক্রিয়ায় পান্ডার নামকরণ পদ্ধতি মানা হয়। এটি আসলে বিশেষ একটি পদ্ধতি। সকল পান্ডার নাম গণভোটের মাধ্যমে রাখা হয়- তা কিন্তু নয়। সাধারণত পান্ডার নামকরণের দুটি পর্যায় রয়েছে। প্রথমে তার ডাকনাম রাখা হয়,  তার পর তার আনুষ্ঠানিক নাম রাখা হয়।

একটি পান্ডার বাচ্চা জন্মের পর ব্রিডার তাকে একটি ডাক নাম দেন। তার এই নাম দেয়ার পদ্ধতি মূলত চার ধরনের।

১. যমজদের নামকরণ:

চিং    চিং নামে একটি পান্ডার যমজ সন্তান জন্ম দিয়েছে। তাই দুটোর ডাকনাম হয় বড় চিংচিং আর ছোট চিংচিং।

২. শাবক সংখ্যা অনুসারে নামকরণ

মেংমেং নামে একটি পান্ডা তিনটি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। ফলে জন্মের সময় অনুযায়ী তার তিনটি বাচ্চার ডাকনাম হবে মেং এক, মেং দুই, এবং মেং তিন। এটা হল সবচেয়ে সাধারণ নামকরণ পদ্ধতি। পান্ডার মায়ের নামের একটি শব্দ এবং নম্বর দিয়ে তার বাচ্চাদের নামকরণ করা হয়।

৩ পান্ডা বাচ্চার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নামকরণ:

পান্ডা বাচ্চার চেহারা বা জন্ম স্থানের বৈশিষ্ট্য থাকলে তাদের নামে সেসব উপাদনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাদের নামে সেসব ব্যবহার করা হয়।

৪ এলোমেলো নাম দেয়া:

এই পদ্ধতিতে কর্মীরা এলোমেলো নাম দিয়ে থাকে। যেমন: বাঁশের কান্ড, এডামামে ইত্যাদি।

 

দ্বিতীয় পর্যায়ে পান্ডার আনুষ্ঠানিক নাম দেয়া

ডাকনাম দীর্ঘসময় ব্যবহার করা যায় না। পান্ডার আন্তর্জাতিক বংশতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে তাদের আনুষ্ঠানিক নাম প্রয়োজন। যখন আনুষ্ঠানিক নাম পায়, তখন তাদের ডাকনাম আর ব্যবহার করা যায় না।

ছিংহ্য পান্ডার দুটি বাচ্চার নাম ছিল বড় ছিং ও ছোট ছিং । পরে তারা জাতিসংঘের প্রথম পশু দূতে পরিণত হয়। তাই তাদেরকে ছিছি ও তিয়ানতিয়ান নাম দেয়া হয়। এই নাম দুটো আন্তর্জাতিক পান্ডার বংশতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক পান্ডার বংশতালিকা একটি ইউনিফাইড স্ট্যান্ডার্ড নামকরণ ব্যবস্থা। প্রতিটি পান্ডার একটি নম্বর  থাকে। আর এ নম্বর হয় ইউনিক, আমাদের আইডি নম্বরের মতো। এ নম্বরের সঙ্গে যুক্ত হয় পান্ডার আনুষ্ঠানিক নাম।

পান্ডাকে আনুষ্ঠানিক নাম দেয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। পান্ডার গবেষণায় তাদেরকে সনাক্ত এবং ট্র্যাক করতে তার নাম থেকে তার জাতিগত বন্ধনের প্রতিফলন হয়।

আনুষ্ঠানিক নামকরণ পদ্ধতিও চারটি

১. উন্মুক্ত পরামর্শ: ২০১২ সালে চেংতু পান্ডা প্রজনন গবেষণা কেন্দ্রে লন্ডন অলিম্পিক গেমসের প্রথম দিনে একটি পান্ডা জন্ম নেয়। তার নামকরণে ভোটাভোটি হয়। অনলাইন ভোটের মাধ্যমে এ পান্ডার নাম ‘ওরিও’  রাখা হয়। চীনা ভাষায় ‘ও’ শব্দের উচ্চারণ ও অলিম্পিক গেমসের মধ্যে মিল আছে। তাই এই নামকরণ।

২. সরকারি নামকরণ: মৈত্রী দূত হিসেবে অনেক দেশকে চীনের পান্ডা উপহার হিসেবে দেয়া হয়। বর্তমানে বিদেশে রয়েছে এমন ৬৯টি চীনা পান্ডা। ২০১৭ সালে ফ্রান্সে পাঠানো পান্ডা হুয়ান হুয়ান একটি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে এবং তার বাচ্চার একটি সরকারি নামকরণ অনুষ্ঠান হয়। তার নাম হল ইউয়ান মেং। চীনা ভাষায় তার অর্থ হলো স্বপ্ন পূরণ।

৩. দাতব্য নামকরণ: আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংরক্ষণ সংস্থা যদি একটি পান্ডাকে দূত হিসেবে নির্বাচন করে তাহলে তাকে নাম দিতে পারে। কোম্পানি এবং ব্যক্তিও পান্ডা দত্তক নিতে পারে এবং তাকে নাম দিতে পারে।

৪. ডাক নামই আনুষ্ঠানিক নাম:

কোন কোন পান্ডার ডাকনামই তার আনুষ্ঠানিক নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: চিজ নামে একটি পান্ডা রয়েছে। তার ডাক ও আনুষ্ঠানিক নাম একই। (শিশির/এনাম/রুবি)