চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণ
2021-11-30 14:57:23

নভেম্বর ৩০: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় বেইজিং থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং মূল ভাষণ দেন। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, “এ বছর চীন ও আফ্রিকার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্থাপনের ৬৫তম বার্ষিকী। ৬৫ বছর ধরে, চীন ও আফ্রিকা সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে একটি দৃঢ় মৈত্রী গড়ে তুলেছে। চীন ও আফ্রিকা জটিল পরিবর্তনের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তার একটি বিস্ময়কর অধ্যায় রচনা করেছে, একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্মাণের জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে।”

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক কেন ভাল? চীন-আফ্রিকা মৈত্রী কেন গভীর? তিনি বলেন, “কারণ দু’পক্ষ আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ, একে অপরকে সম্মান করে, পারস্পরিক কল্যাণকর ও জয়-জয় সহযোগিতা করে, অভিন্ন উন্নয়নে অবিচল, ন্যায়বিচার রক্ষা করে, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব পোষণ করে। এটি হলো চীন ও আফ্রিকার কয়েক দশকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শক্তির উত্স।”

 

প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন, এ বছর হলো জাতিসংঘে চীনের আইনগত আসন পুনরুদ্ধারের ৫০তম বার্ষিকী। এ কাজে চীনকে সমর্থন দেওয়া বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান বন্ধুদের আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

নতুন যুগে চীন-আফ্রিকা অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলায় ৪টি প্রস্তাব দেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি বলেন,

প্রথমত, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, কার্যকর সহযোগিতা আরও গভীর করতে হবে। তৃতীয়ত, সবুজ উন্নয়ন প্রচার করতে হবে এবং চতুর্থত, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার বজায় রাখতে হবে।

 

প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন যে, ‘চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ভিশন ২০৩৫’-এর প্রথম তিনটি বার্ষিক পরিকল্পনা হিসেবে, চীন আফ্রিকান দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে ‘নয় প্রকল্প’ বাস্তবায়নে কাজ করবে। ‘নয় প্রকল্প’ হলো স্বাস্থ্য প্রকল্প, দারিদ্র্যবিমোচন ও কৃষি সহায়ক প্রকল্প,  বাণিজ্য প্রচার প্রকল্প, বিনিয়োগ-চালিত প্রকল্প, ডিজিটাল উদ্ভাবন প্রকল্প, সবুজ উন্নয়ন প্রকল্প, সক্ষমতা নির্মাণ প্রকল্প, সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রকল্প এবং শান্তি ও নিরাপত্তা প্রকল্প।

 

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, চীন ও আফ্রিকার যৌথ প্রচেষ্টায়, এবার চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের সম্মেলন অবশ্যই সম্পূর্ণ সফল হবে, যা চীন ও আফ্রিকার ২.৭ বিলিয়ন জনগণের মহান শক্তিকে একত্রিত করবে এবং একটি উচ্চ-স্তরের চীন-আফ্রিকা অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তুলবে।”

 

চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের আফ্রিকান পক্ষের কো-চেয়ারম্যান রাষ্ট্র সেনেগালের প্রেসিডেন্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

কঙ্গোর প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট, মিশরের প্রেসিডেন্ট, কমোরোসের প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘ মহাসচিব ভিডিওয়ের মাধ্যমে সম্মেলনে যোগ দেন। আফ্রিকার ৫৩টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বৈদেশিক অর্থনীতি সহযোগিতা বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন।

 

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আফ্রিকান নেতারা চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফোরামের বেইজিং শীর্ষসম্মেলনের পর থেকে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফলাফলকে স্বীকৃত দেয় এবং আফ্রিকান দেশগুলিকে মহামারী প্রতিরোধের লড়াইয়ে টিকা সহায়তায় চীনের মূল্যবান সহায়তার জন্য প্রশংসা করে। প্রেসিডেন্ট সি’র চারটি প্রস্তাব এবং ‘নয় প্রকল্প’ আবারও আফ্রিকাকে মহামারী মোকাবিলায় সহায়তা দেওয়া এবং সবুজ টেকসই উন্নয়নে জন্য চীনের আন্তরিক ইচ্ছা ও দৃঢ় সমর্থন প্রদর্শন করে। আফ্রিকা জাতিসংঘে চীনের আইনি আসন পুনরুদ্ধারের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চীনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানায় এবং এক-চীন নীতি দৃঢ়ভাবে মেনে চলে। চীনের সঙ্গে বহুপক্ষবাদ রক্ষা, আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠায় চীনের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। আফ্রিকা-চীন মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক।

 

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)