ঐতিহাসিকভাবেই চীনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ তাইওয়ান
2021-11-29 17:55:41

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানকে কথিত অনলাইন গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যা বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও নেটিজেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশী নেটিজেনদের অনেকে প্রশ্ন করেছেন, তাইওয়ান কি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র? কোনো কোনো নেটিজেন অবশ্যই বলেছেন, হংকং, ম্যাকাও, ও তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।  বেশি আগে নয়, গত সতেরো নভেম্বর চীন-মার্কিন শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘একচীন নীতি’কে সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। তবে তার মাত্র অল্প কয়েক দিন পরেই সবাই চীনের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক কৌশল দেখতে পাচ্ছেন। ঠিক যেমনটি বাংলাদেশের নয়াদিগন্ত পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই গণতন্ত্র সম্মেলনে তাইওয়ানই একমাত্র আমন্ত্রিত সদস্য-যাকে যুক্তরাষ্ট্র সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের অস্পষ্ট কৌশলগত নীতি অবলম্বন করছে।

আসলে তাইওয়ান বিষয় খুবই স্পষ্ট। চীন বারবারই বলে আসছে, তাইওয়া চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একচীন নীতি সর্বসম্মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিষয়ক ব্যবস্থা।  তাইওয়ান অতীত থেকেই চীনের একটি অংশ। তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরে চীনের ছিন ও হান সম্রাটের সময় আদান-প্রদানের রেকর্ড রয়েছে। সতেরো শ’ বছর আগে মুলভূভাগের বাসিন্দারা তাইওয়ানে তত্পরতা চালিয়েছে। চীনের সোং ও ইউয়ান শাসনামালে তাইওয়ানে চীনা প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরপরে ৩শ বছর ধরে নেদারল্যান্ডস, বৃটেন, ফ্রান্স ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ দখলে নিলেও তাইওয়ান মূলভূভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। চীন সরকার তিনবার তাইওয়ানকে তার কোলে ফিরিয়ে আনে। ছিং সম্রাটের চীনা কর্মকর্তা জেং ছেং কোং নেদারল্যান্ডসের দখল থেকে তাইওয়ানকে স্বদেশের কোলে প্রথম ফিরিয়ে আনেন। ছিং সম্রাটের রাজা খাং সি তাইওয়ানকে ফুচিয়ান প্রদেশের অধীনে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উনিশশ পয়তাল্লিশ সালে জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর তাইওয়ান অবশেষে মাতৃভূমি চীনের কোলে ফিরে আসে।  দ্বিতীয় যুদ্ধের পর “কায়রো ঘোষণা”য় স্পষ্টই চীনের কাছে তাইওয়ানকে ফেরত দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। “কায়রো ঘোষণা” তাইওয়ান চীনের একটি অংশ-এই সত্যতার আইনী ভিত্তি দিয়েছে। একে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যৌথভাবে স্বীকৃতিও দিয়েছে। অন্য দিকে, হংকং ও ম্যাকাও চীনের কাছে ফিরে আসার সাফল্য তাইওয়ানের ফিরে আসার জন্য সুন্দর উদাহরণ তৈরি করেছে। যা দু’তীরের শান্তিপূর্ণ ঐক্যকে সমর্থন দেবে।

বর্তমানে তাইওয়ান প্রণালীর দুতীরে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রের আদান-প্রদান অনেক বেড়েছে। ২০২০ সালে দুতীরের বাণিজ্যিক পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। মূলভূভাগে তাইওয়ানের রপ্তানির পরিমাণ প্রথমবারের মতো ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দু’তীরের বাণিজ্যিক পরিমাণ ছিল ২০ হাজার আটশ বিরাশি কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় একত্রিশ দশমিক আট শতাংশ বেশি। সারা বছরে এর পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ইতিহাস ও দুতীরের ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক প্রমাণ করে যে, দুতীরের ঐক্য হতেই হবে, তাতে কোনো শক্তি বাধা দিতে পারবে না।

প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা চীনের তাইওয়ান বিষয়ে আর বিভ্রান্ত হবে না। আজকের টপিক এ পর্যন্তই। সবাই থাকবেন। সুন্দর থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।

 

 

রুবি/এনাম