নভেম্বর ২৮: বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারী নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কঠিন অবস্থায় বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে আশা, সাহস, শান্তি, ঐক্যের বাণী প্রচারিত হয়। অথচ কোনো কোনো পশ্চিমা দেশের একশ্রেণির রাজনীতিক শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের বিরুদ্ধে ‘কূটনৈতিক যুদ্ধ’ চালাচ্ছেন। এটি অলিম্পিকের মূল চেতনার পরিপন্থি।
যুগের পর যুগ ধরেই অলিম্পিক খেলাধুলার মাধ্যমে মানবজাতির শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অবদান রেখে আসছে। অলিম্পিক গেমসে বিশ্বের সকল দেশের ক্রীড়াবিদদের সমাবেশ ঘটে; এটি পরিণত হয় মানবজাতির মিলনমেলায়। অলিম্পিক গেমসের উদ্দেশ্যই হলো বিভিন্ন দেশের মধ্যে ক্রীড়ার মাধ্যমে শান্তি ও পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো।
অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস শান্তি, মৈত্রীর ইতিহাস; এই গেমস বরাবরই রাজনীতি থেকে মুক্ত থেকেছে। শান্তি ও মৈত্রী হলো অলিম্পিক গেমসের চেতনা। আধুনিক অলিম্পিক গেমসের শত বছরেরও বেশি ইতিহাসে, অলিম্পিকের নিয়মকানুনে পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু এর মূলনীতি ও মূল্যবোধে কখনও পরিবর্তন আসেনি। অলিম্পিকের সংবিধানে বলা হয়েছে, অলিম্পিকবাদের উদ্দেশ্য হলো ক্রীড়ার মাধ্যমে মানবজাতির সম্প্রীতিময় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, যাতে মানবজাতির মর্যাদা রক্ষা পায় ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হয়। সেজন্য অলিম্পিক গেমসকে রাজনীতির বাইরে রাখাই উচিত। কোনো রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে খেলাধুলা ও খেলোয়াড়দেরকে ব্যবহার করা উচিত নয়।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ বলেছেন, জাতি, জাতীয়তা, লিঙ্গ, সামাজিক মর্যাদা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বিশেষে অলিম্পিক গেমসে সবাই সমান। এটিই সঠিক ও নিরপেক্ষ নীতি। সেজন্যই অলিম্পিক গেমস কার্যকরভাবে বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে শান্তি ও সমঝোতার বোধ বাড়িয়ে এসেছে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন একবার বলেছিলেন, খেলাধুলার প্রকৃতি প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে, তবে এটি সংলাপ, শান্তি ও পুনর্মিলনের জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ারও বটে।
সেজন্য অনেকেই একশ্রেণির পশ্চিমা রাজনীতিকের বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসকে রাজনীতির শিকারে পরিণত করার অপচেষ্টার বিরোধী। ওয়ার্ল্ড ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান নিউবোল্ড কোয়ে সম্প্রতি বলেন, বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের বিরোধিতার কোনো মানে হয় না। আর প্যান আমেরিকান ক্রীড়া সংস্থার প্রেসিডেন্ট নেভান ইলিক বলেছেন, তিনি খেলাধুলাকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করার বিরোধিতা করেন।
ক্রীড়া হলো শান্তির সপক্ষের কার্যকর হাতিয়ার। জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০৩০’-এ বলা হয়েছে, ক্রীড়া হলো টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ক্রীড়া সহনশীলতা ও সম্মান বৃদ্ধি করতে পারে, যা শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য জরুরি।
বর্তমানের কঠিন সময়ে বিশ্বে আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্য প্রয়োজন। ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক গেমস ও শীতকালীন প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের শ্লোগান হলো, ‘একসাথে ভবিষ্যতের জন্য’। এ শ্লোগান যেন গোটা বিশ্বের মানুষকে সাহসের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে, একসাথে বিভিন্ন অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে, এবং স্বপ্ন ও আশা পূরণে কাজ করার আহ্বান জানায়। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)