সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাইওয়ান কর্তৃপক্ষকে কথিত ‘গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলনে’ অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা গণতন্ত্রের অজুহাতে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামীদের জন্য মঞ্চ তৈরির অপচেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে, তা চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ, এবং একচীন নীতির লঙ্ঘন। সংঘাত ও বিভাজন সৃষ্টি করা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। চীন এর তীব্র বিরোধিতা করছে।
অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে আগামী মাসে বিশ্ব দেখবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালনায় একটি গণন্ত্রের ‘প্রহসন’ এবং সেখানে মূল্যবোধ বিশ্বকে বিভক্ত করবে। বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, তথাকথিত গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলন আসলে যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন-অস্ট্রেলিয়ার তৃপক্ষীয় নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের সম্পর্ক শক্তিশালী করার একটি বাহানা মাত্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জোট করে নিজের বিশ্ব নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার এবং আধিপত্য রক্ষার একটি উপায় মাত্র। চীনকে দমনের অশুভ উদ্দেশ্যে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাষ্ট্র ।
একচীন নীতি স্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যবস্থা। চীনের একটি অংশ ছাড়া তাইওয়ানের আর কোনো আন্তর্জাতিক আইনগত অবস্থান বা পরিচিতি নেই। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের নামে আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী শক্তিকে সমর্থন করছে, তাতে বিশ্ববাসী বুঝতে পারছে, তথাকথিত গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন এবং দলগত রাজনীতিকে শক্তিশালী করার একটি যন্ত্র মাত্র।
গণতন্ত্র মানবজাতির একটি অভিন্ন মূল্যবোধ। এটি কয়েকটি দেশের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। একটি দেশ গণতান্ত্রিক কি না- তা সে দেশের জনগণের বিচারের ওপর নির্ভর করে। মার্কিন গণতন্ত্র ভাল কি না- তা যুক্তরাষ্ট্রের লোকদের মতামতের ওপর নির্ভরশীল।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ মার্কিনী তাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ। মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ মনে করে, মার্কিন গণতন্ত্র থেকে অন্য দেশের জন্য শেখার আছে। সম্প্রতি জার্মান বুশ ফাউন্ডেশনের এক জনমত জরিপের ফলাফল থেকে জানা গেছে, ৮০ শতাংশের বেশি মার্কিন ও বৃটিশ উত্তরদাতারা মনে করেন, নিজেদের দেশের রাজনীতিবিদরা পুঁজির পুতুল মাত্র। অর্ধেক মার্কিনী মনে করেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বর্তমানে কার্যকর নয়। অপর একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রথম বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে গণতন্ত্রের পশ্চাদগামী দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মার্কিন গণতন্ত্র নিজ দেশের মানুষকে সুখী করতে পারেনি। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মহলেও তাদের গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের বিব্রতকর অবস্থা এবং আফগানিস্তানের মানুষদের জন্য রেখে যাওয়া অন্তহীন বেদনা হল বিদেশে মার্কিন গণতন্ত্রের ব্যর্থ হবার উত্কৃষ্ট উদাহরণ।
কথিত গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ তালিকা প্রকাশের প্রাক্কালে মার্কিন সপ্তম নৌবহর থেকে স্বীকার করা হয়, মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ চলতি বছর ১১তম বারের মতো তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রম করেছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে যুক্তরাষ্ট্র। কথিত গণতন্ত্রের বাতিঘর বিশ্বকে আরও অস্থির করে তুলছে। এমতাবস্থায় মার্কিনীরা গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সাহস কোথা থেকে পায়, তা অনেকেরই বোধগম্য নয়।
গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবেই প্রচারনা চালাক না কেনো, গণতন্ত্রের সংজ্ঞাদান এবং বিচারের অধিকার তারা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নৈতিকতা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যা করে, তা হচ্ছে ভন্ডামি ও ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। ফলে গণতন্ত্র সম্মেলনের নামে আরেকটি রাজনৈতিক প্রহসন বিশ্বকে দেখাতে চলছে যুক্তরাষ্ট্র। (শিশির/এনাম/রুবি)