চলতি বছরের দু’দিনব্যাপী চীনা ইন্টারনেট মিডিয়া ফোরাম কুয়াংচৌ শহরে আজ (বৃহস্পতিবার) শেষ হয়েছে। এটা চীনের ইন্টারনেট মিডিয়ার জন্য সর্বোচ্চ বার্ষিক ফোরাম। তাতে ইন্টারনেট মিডিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তি, অ্যাপ্লিকেশন ও প্রবণতা তুলে ধরা হয়।
‘মেটা ইউনিভার্স’ হচ্ছে চলতি বছরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ধারণা। যদিও তাকে এখনো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি, তবে ফোরাম চলাকালে অনুষ্ঠিত প্রথম চীনা ইন্টারনেট মিডিয়ার নতুন প্রযুক্তি, অ্যাপ্লিকেশন ও প্রবণতার প্রদর্শনীতে দেখা যায়, অনেক অংশগ্রহণকারী কোম্পানি ও সংস্থা ইতোমধ্যেই সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তিকে তাদের ভার্চুয়াল ডিজিটাল স্থানে ব্যবহার করছে। যেমন: চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এবার তিনজন ‘ভার্চুয়াল ব্যক্তি’কে ফোরামে নিয়ে আসে। তারা হল: চীন-রাশিয়া যৌথ গবেষণায় তৈরি ভার্চুয়াল ব্যক্তি নানা, সিসিটিভির ভার্চুয়াল সম্পাদক সিয়াও সি এবং অলিম্পিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিজিটাল ব্যক্তি। তাদের মধ্যে অলিম্পিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিজিটাল ব্যক্তি প্রথম বারের মতো প্রকাশিত হয়েছে। সিএমজি এআই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাঙ্কর প্রকল্পের প্রকৌশলী চাং সিয়াও তুং বলেন,একটি এইচডি ভার্চুয়াল সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাঙ্কর প্রদর্শনের পেছনে থাকে অনেকগুলো শক্তিশালী এআই প্রযুক্তি। যেমন: বক্তৃতা স্বীকৃতি, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ, সাইন ভাষা অনুবাদ ইঞ্জিন প্রযুক্তি ইত্যাদি। আমাদের বলা কথা বা ভিডিওয়ের অডিও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে পরিণত করে প্রদর্শন করে এ প্রযুক্তি। একে শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে ব্যবহার করা হবে।
মেটা ইউনিভার্সের মানে কী? আমেরিকান কল্পবিজ্ঞানের মাস্টার নীল স্টিফেনসন তার উপন্যাস ‘তুষার ধসে’এই পরিভাষাটি প্রথম বর্ণনা করেন। হেডফোন এবং আইপিস টার্মিনাল সংযোগ করলে ভার্চুয়াল পরিচয় দিয়ে একটি ভার্চুয়াল বিশ্বে প্রবেশ করা যায়। সেই বিশ্ব হল কম্পিউটার-সিমুলেটেড এবং আসল বিশ্বের সমান্তরাল আরেকটি দুনিয়া।
থিয়ান চিন চিন ইউন নিউ মিডিয়া গ্রুপের ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা এলাকায় একটি এআর প্রতিবেদন প্রদর্শীত হচ্ছে। আমি ও আমার গ্রাম নামে ধারাবিহক প্রতিবেদনগুলো ভিজ্যুয়ালাইজড হয়েছে সেখানে। দর্শকরা চিন ইউনের এপিপির মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করে নিমজ্জন অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন। বিদেশীর মুখে বলা নতুন যুগের কৃষকদের সংগ্রামের গল্প দেখতে ও শুনতে পারা যাচ্ছে। পাশাপাশি, ইন্টারঅ্যাকশন এবং যোগাযোগও করা যায়। থিয়ান চিন চিন ইউন নিউ মিডিয়া গ্রুপের প্রধান সম্পাদক ছি হুয়াই ওয়েন বলেন,
আমরা রেডিও, টিভি, পত্রিকা ও নিউমিডিয়ার মিশ্রণ করেছি। যখন আমরা এ পণ্য তৈরি করি, তখন বিভিন্ন মিডিয়ার ফিউশন ও অনুপ্রবেশ বিবেচনা করেছি এবং এ পণ্য ফিউশন যোগাযোগের সুবিধা প্রদর্শন করে। এ পণ্য একটি মিশ্রিত পণ্য। পাশাপাশি, মিডিয়া কনভারজেন্স এগিয়ে নিয়ে যায় এটি। আমার মতে এটি ভাল একটি প্রচেষ্টা।
মেটা ইউনিভার্সের সারাংশ কী? হুয়াওয়ে কৌশল বিভাগের শিল্প উন্নয়ন পরিচালক ছিয়াও ই মিং মনে করেন, মেটা ইউনিভার্স একটি ভার্চুয়াল বিশ্ব তৈরি করতে চায়। তবে ডিজিটাইজড মানুষ, ডিজিটাইজড বস্তু ছাড়া তার বাস্তবায়ন হবে না। মেটা ইউনিভার্স কীভাবে ডিজিটাইজড জিনিষ তৈরি করবে, তা নিয়ে গবেষণা করছে হুয়াওয়ে। তিনি বলেন,
দেখুন, একটি জিনিষকে আমি যদি ভার্চুয়াল বিশ্বে রাখতে চাই, তাহলে আমি কী করব? আগে আমরা জটিল একটি পেশাদার ক্যামেরা দিয়ে তাকে স্ক্যান করবো। তারপর পেশাদার কর্মীদের মডেল সংশোধন করে তাকে ভার্চুয়াল বিশ্বে রাখবো। তবে এটি এখন খুব সহজ, যে কোনো একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে এ জিনিষকে কেন্দ্র করে সক্রিয়ভাবে ৪০টি ছবি তুলা যাবে। তারপর তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাকে একটি থ্রিডি মডেলে পরিণত করা যাবে।
জানা গেছে, জাতীয় ও আঞ্চলিক মিডিয়া, ইন্টারনেট কোম্পানিসহ মোট ৪৩টি সংস্থা এবার ফোরামে অংশগ্রহণ করেছে। মূল ফোরাম ছাড়াও আরো কিছু অনুষ্ঠান ও সেমিনার তাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। (শিশির/এনাম/রুবি)