নভেম্বর ২৪: চীন সফলভাবে নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূর করেছে এবং গ্রামীণ পুনর্জাগরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। চেচিয়াংয়ের কিছু গ্রামীণ এলাকা পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, এই অঞ্চলগুলি ‘মাইক্রো সিটি’ হয়ে উঠেছে, কারণ এই এলাকার অবকাঠামো শহরগুলোর কাছাকাছি মানের; বিদ্যুৎ, জল, ইন্টারনেট, এবং পরিবহনব্যবস্থাও খুব সুবিধাজনক। তিনি হচ্ছেন চেচিয়াং নরমাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ আফ্রিকান স্টাডিজের একজন নাইজেরিয়ান পণ্ডিত। তাঁর চীনা নাম লি খুন।
সম্প্রতি একজন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তিনি চেচিয়াংয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। লি খুন বিশ্বাস করেন যে, চীন দ্রুত ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে আনছে এবং ‘সবার জন্য সমৃদ্ধি’র ধারণা ও নীতি প্রচার করছে। তা ছাড়া, চীনের সরকার নিম্ন-আয়ের মানুষের আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আসছে, যা সামাজিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করবে। চীনের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিক্ষণীয়।
লি খুন বলেন, চেচিয়াংয়ের কিছু গ্রামীণ এলাকা ক্রমশ ‘মাইক্রো সিটি’ হয়ে উঠেছে এবং সাধারণ সমৃদ্ধির জন্য স্থানীয় পরীক্ষামূলক এলাকার সাফল্য তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। চেচিয়াং নর্মাল ইউনিভার্সিটি পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের চিনহুয়া শহরে অবস্থিত। লি খুন বহু বছর ধরে এখানে অধ্যয়ন করেছেন এবং পরে কাজ করছেন। ১৬ বছর আগে অর্থাত্ ২০০৫ সালে, লি খুন স্বল্পমেয়াদী একাডেমিক বিনিময় ও সফর কার্যক্রমের আওতায় চীনে আসেন। ২০০৮ সালে, তিনি চেচিয়াং নরমাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নের সুযোগ পান। সেই থেকে তাঁর চীনে অধ্যয়ন ও বসবাসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার শুরু।
চেচিয়াংয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা চীন সম্পর্কে তার জানাশোনা বাড়িয়েছে। লি খুন বলেন: ‘চীন সম্পর্কে আমার প্রাথমিক জ্ঞানের উত্স ছিল তৃতীয় পক্ষের মিডিয়া এবং কিছু পুরানো চীনা সিনেমা। আমি বাস্তবে যে চীনকে দেখি, তা থেকে আমার পূর্বধারণা সম্পূর্ণ আলাদা। চীন আমার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি উন্নত, আধুনিক এবং উন্মুক্ত।’
লি কুনের নিজ দেশ নাইজেরিয়া, আফ্রিকার একটি বিশাল জনসংখ্যার দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা উন্নত হয়েছে এবং তার ফল স্বরূপ লি কুন নাইজেরিয়ার উন্নয়ন ও পরিবর্তন নিজ চোখে দেখেছেন। নাইজেরিয়ার অবকাঠামো নির্মাণে চীনের অংশগ্রহণ নাইজেরিয়াকে তার উন্নয়ন-লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করছে। নাইজেরিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে দুর্দান্ত অবদান রেখেছে চীন। নাইজেরিয়ার পরিবহন খাত ধীরে ধীরে একটি নতুন চেহারা পেয়েছে।
লি খুন আফ্রিকায় চীনের অভিজ্ঞতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের শেষের দিকে, উত্তর চীনের থিয়ানচিন রেলওয়ে ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজ এবং নাইজেরিয়ার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি খাতে প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য "লুবান (প্রাচীন চীনা দক্ষ কারিগর) কর্মশালা" চালু করে। কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নাইজেরিয়ার শিল্পের বিকাশের প্রাণশক্তিস্বরূপ। ‘লুবান কর্মশালা’ স্থাপনের জন্য চীনা বিশ্ববিদ্যালয় ও আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা ছিল ফলপ্রসূ। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে আরও লুবান কর্মশালা নাইজেরিয়ার উন্নয়নের চাহিদা অনুসারে তৈরি হবে এবং আরও প্রযুক্তিবিদ গড়ে উঠবে।’
আফ্রিকার অনেক দেশের পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞরা দারিদ্র্যবিমোচন ও সাধারণ সমৃদ্ধির ধারণা প্রচারে চীনের পদক্ষেপ এবং অভিজ্ঞতার প্রতি মনোযোগ দেন। সম্প্রতি কেনিয়ার ‘সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন’ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রধান এবং পণ্ডিত এনডেগোগওয়া কেনিয়ার ‘স্টার’ পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের সাফল্যের রহস্য হচ্ছে, সর্বাত্মক উন্নয়ন, কঠোর পরিশ্রম ও ভাগাভাগির সমৃদ্ধি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঠিক নেতৃত্ব, উন্নত জীবনের জন্য চীনা জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং পথে পথের সমস্ত অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠার অদম্য ইচ্ছা হচ্ছে এর মূল কারণ। তিনি নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষাগ্রহণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)